বলতে গেলে সারাবিশ্ব যখন করোনার কাছে বন্দি তখন দুই স্বাস্থ্যকর্মী দেখালেন এক ভিন্নতর নজির। মহামারির সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে ইতালির মডার্না এলাকার অধিবাসী দুই চিকিৎসক রবার্তো টোনেলি এবং ইভান ক্যাসটানিয়ের তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। তারা জানিয়েছেন, করোনা মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করবেন না।
রবার্তো আর ইভানা দুজনই পালমোনোলজিস্ট, অর্থাৎ ফুসফুস বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তারা করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে চিকিৎসকদের সামনের সারিতে কাজ করছেন।
তারা একই হাসপাতালে কাজ করেন। হাসপাতালেই তাদের প্রথম পরিচয়। বিয়ে পেছানো নিয়ে ইভানা ঠাট্টা করে বলেন, ওকে খুব একটা পছন্দ করতাম না, দেখেই সবজান্তা মনে হতো।
তারা বলেন, আমরা এখন সপ্তাহে ছয় দিন প্রায় ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করি। পুরো ব্যাপারটাই এখন বদলে গেছে।
রবার্তো বলেন, সবচেয়ে খারাপ বিষয়টা হলো, এটা ভাবা যে, আপনি যা দেখছেন আপনার ভালোবাসার মানুষটাকে যেন সেটা না দেখতে হয়। কিন্তু এটা সবচেয়ে ভালো লাগে যে, আমার পিপিই খোলার পর আমার প্রিয় মানুষটার মুখই আমি প্রথম দেখতে পাই।
ইভানা বলেন, এখানে জোরে নিঃশ্বাস নিলে শ্বাসের সাথে সংক্রমিত হবার ঝুঁকি বাড়ে। আর কাছের মানুষের কাছে যেতেও ভয় করে, যেহেতু তাদের মাঝেই সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
তারা বলেন, একসাথে কাজ করার আনন্দ আছে ঠিকই, কিন্তু প্রায়ই কাছের মানুষদের, এলাকার পরিচিত মুখগুলোকে রোগী হিসেবে হাসপাতালে আসতে দেখতে হয়।
ইভানা এবং রবার্তোর একটি দু’বছরের কন্যা সন্তানও আছে। সে দুই মাস ধরে তার দাদি বাড়িতে আছে। একমাসেরও বেশি সময় ধরে ইভানা বা রবার্তোর দেখা নেই তাদের সন্তানের সঙ্গে।
ইতালিতে এরমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩৭ জন চিকিৎসকের মৃত্যু ঘটেছে। ইভানা এবং রবার্তোও ঝুঁকিতে আছেন। সন্তানের প্রতি তাদের একটিই বার্তা- আমাদের আশা একদিন সে আমাদের এই ত্যাগ বুঝতে পারবে।