শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সোমবার বুয়েটে অনুষ্ঠিত হলো ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের চোখে–মুখে ছিল ভয় আর কষ্টের ছাপ। বুয়েটে দলীয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে তাঁরা ছিলেন উচ্চকণ্ঠ। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আবরার হত্যাকাণ্ডের পর আলোচনায় আসা র্যাগিং এবং নির্যাতনের ঘটনায় আতঙ্কিত ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তান বুয়েটে পড়ার সুযোগ পেলেও হলে রাখবেন না বলে জানান কয়েকজন অভিভাবক। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-হানাহানির অবসান চান তাঁরা।
কয়েকজন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক বললেন, বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ভালো প্রস্তুতি নিলেও শেষ মুহূর্তে ছাত্রহত্যার ঘটনায় তাঁদের মনে বেশ ভয় তৈরি হয়েছে। আবরার হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের পক্ষ থেকে এই ভয়ের কারণগুলো দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হলেও তাঁরা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। তাঁদের আশঙ্কা, আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলমান আলোচনা থেমে গেলে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি আবার আগের অবস্থাতেই ফিরে যাবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন কোনো কোনো অভিভাবক। অবশ্য অভিভাবকদের কারও কারও মত, দলীয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলেও বুয়েটে গঠনমূলক ছাত্ররাজনীতি থাকার প্রয়োজন আছে। তা না হলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উপেক্ষিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বুয়েটের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইউকসু) ও হল সংসদগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে সচল করার আহ্বান জানান তাঁরা।
অভিভাবকরা সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাতে উপেক্ষিত না থাকে, সে জন্য বুয়েট কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইউকসু) ও হল সংসদগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে সচল করার আহ্বান জানান তাঁদের কেউ কেউ।
রাজধানীর একটি কলেজ থেকে এইচএসসিতে সর্বোচ্চ ফলাফল নিয়ে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন রায়হান ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা শামসুল ইসলাম ও মা মনোয়ারা বেগম। প্রথম ধাপের পরীক্ষার পর ছেলেকে নিয়ে পলাশীর বুয়েট মার্কেটে আসেন তাঁরা। চাকরিজীবী শামসুল ইসলাম বললেন, ‘ছেলে বুয়েটে পড়বে, অন্য অনেক অভিভাবকের মতো এই স্বপ্ন আমাদেরও। তবে আবরার হত্যার ঘটনা আমাদের আতঙ্কিত করেছে। ছেলে বুয়েটে পড়ার যদি সুযোগ পায়ও, হলে রাখতে চাই না।’
মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আবরারের মায়ের মতো অন্য কোনো মায়ের কোল এভাবে খালি হোক, তা চাই না। আবরার হত্যার সঠিক বিচার করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস না পায়।’ আর ছেলে রায়হান বললেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁরও ভয় লাগছে।