একটি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মোট তিন লাখ বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। যাঁরা বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন এ দেশ থেকে। যেখানে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা বলা হয়েছে মাত্র ২৬ লাখ ৮০ হাজার।
বেকারের এ সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী। আইএলওর সংজ্ঞা অনুসারে মাসে এক ঘণ্টা কাজ করে এমন লোকও বেকার নয়। তবে বিবিএসের জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা চার কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার। এদের মধ্যে আবার অধিকাংশই শিক্ষিত এবং তরুণ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বিবিএসের জরিপের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার ১৩ দশমিক ৪ ভাগ।
একদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা বিদেশে কঠোর শ্রম আর ঘাম ঝরিয়ে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। অন্যদিকে তাদের পাঠানো প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণ টাকা প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন এখানে কর্মরত বিদেশিরা। এখানে একটা বিষয় সপষ্ট হওয়া উচিত, আমাদের দেশে যত বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন তাঁদের সিংহভাগই টেকনিক্যল সেক্টরের। যেহেতু এই সেক্টরে কাজ করতে সক্ষম এমন দক্ষ জনশক্তি আমাদের নেই, সেহেতু প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার বিকল্প নেই।
এখন প্রশ্ন ওঠে, আমরা কেন দক্ষ জনশক্তি উত্পাদনে ব্যর্থ? অথচ আমাদের দেশের সমসাময়িককালে পৃথিবীজুড়ে যত দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের অধিকাংশ আজ আমাদের থেকে উন্নত। আমরা সে সব দেশে আমাদের অদক্ষ শ্রমিক রপ্তানি করি, যার ফলে আমরা বেশি খেটে কম মজুরি আয় করি। অন্যদিকে আমাদের দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে ঐসব দেশের দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেই।
আমাদের বিপুল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। ‘শিক্ষিত বেকার’ বলে কোনো কথা থাকবে না। শিক্ষিত বেকাররা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় অভিশাপ। এজন্য প্রয়োজন দেশে ও বিদেশে কর্মের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের তরুণদের গড়ে তোলা। গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতির স্থলে আধুনিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি, যাতে ‘শিক্ষিত বেকার’ বলতে কোনো জনগোষ্ঠী আর অবশিষ্ট না থাকে।
আশার কথা, বিশ্ব উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ যখন বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত হচ্ছে, তখন আধুনিক ও দক্ষ মানবসমপদ গড়ার লক্ষ্যে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে এর মধ্যে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০টি উপজেলায় ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে একটি প্রকল্প। আন্তর্জাতিক চাহিদা মাথায় রেখে কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। মানসম্মত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও পাঠদানের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। এমন আরো অনেক প্রকল্প সরকারের হাতে রয়েছে। যার সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হলে দেশ থেকে বেকারত্বের কালিমা মুছে যাবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়