বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের দায় অবশ্যই উপাচার্যদের নিতে হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে রাখতে উপাচার্যদের দায়িত্ব নিতে হবে। অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মায়া-মমতা দিয়ে খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বুধবার (৮ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল এলাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে উপাচার্যদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠক তিনি একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপউপাচার্য, শিক্ষক ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের ভূমিকা নিতে হবে। তাদের একসাথে কাজ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে। অভিভাবকদেরও এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হবে। যেকোন ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীরা যাতে সম্পৃক্ত হতে না পারে, সে ব্যাপারে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে আন্ডারপাস ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করা প্রয়োজন। রাস্তা পারাপারে ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহারের মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ৯টি দাবিই মেনে নিয়েছেন। কিছু দাবি এরই মধ্যে পূরণ হয়েছে। কিছু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে আধুনিক যুগের উপযোগী দক্ষতা দিতে চাই। তাদের ভাল শিক্ষা দিয়ে ভাল মানুষ তৈরি করতে চাই।
বৈঠকে বিভিন্ন মামলায় আসামি ও গ্রেফতার হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাধারণ ক্ষমা চান উপাচার্যরা। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ক্ষমা করার আমরা কেউ না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে যারা ভুল তথ্য ছড়িয়ে সকলকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যাতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তার দায়িত্ব সরকারের।
তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসার কোন সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে যারা ব্যবসা ও স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন, তাদের প্রতিহত করতে হবে। আমরা সব শিক্ষার্থীকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাই শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম উজ্জীবিত করে সঠিক শিক্ষায় তাদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা দিয়ে বোঝাতে হবে। শিক্ষার্থীদের সামনে আমরা এমন কিছু করব না যাতে তারা ভুল শিক্ষা পায়। শিক্ষক, কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়তা করতে হবে।
কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের রাজপথে অরাজকতা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর প্রেক্ষিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। ইউজিসি চেয়ারম্যানের অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন এবং কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের নিজ নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা উচিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যারা ভুল তথ্য ছড়িয়েছেন তাদের নিন্দা করেন তিনি।
এদিকে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের পৃথক দুই মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ৭ আগস্ট পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুদ এই আদেশ দেন।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথইস্ট ও ব্র্যাকের ছাত্র। এর মধ্যে বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ জন ছাত্রকে এবং ভাটারা থানা-পুলিশ ৮ জন ছাত্রকে আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর রাজধানী অচল করে টানা বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের নবম দিন সোমবার (৬ আগস্ট) রাজধানীতে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশের কঠোর অবস্থানের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
এর আগে গত রোববার (৫ আগস্ট) রাজধানীর সব সরকারি এবং বেসরকারি স্কুল ও কলেজ প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ওই বৈঠকে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামা থেকে বিরত রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দুই দফা অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজধানীর ২৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬১৪ জন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক অংশ নেন। এর মধ্যে কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ছিলেন ১৫০ জন, স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন ১০৮ জন এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন ৩৫৬ জন।