বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক অনিয়ম ঠেকাতে এবার কঠোর অবস্থানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারের নির্ধারিত সিএ ফার্ম দিয়ে অডিট রিপোর্ট করে জমা দিতে বলা হয়েছে। ব্যর্থদের বিরুদ্ধে আর্থিক বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্দেশনার পরও যারা অডিট রিপোর্ট জমা দেবে না, তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হবে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি বাতিল, অভিযুক্ত ব্যক্তির কারাদণ্ড বা অর্থ জরিমানা বা উভয় দণ্ডে শাস্তি দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব মো. রাহেদ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী সরকার কর্তৃক মনোনীত অডিট ফার্ম দ্বারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন পরবর্তী আর্থিক বছরের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে জমা দিতে হবে।
আইন অনুযায়ী প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের নির্দেশনা মানছে না। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (নিরীক্ষা) আহমদ শামীম আল রাজী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক হওয়ার পরও বিওটি সদস্যরা প্রতিষ্ঠানের অর্থ নানাভাবে আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি থেকে বার বার নির্দেশনা দেয়ার পরেও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় অডিট রিপোর্ট জমা দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে এবার কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ ৪৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী আর্থিক হিসাব না দিলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। আইনের ১৪, ২৫ ও ২৬ ধারা অনুযায়ী অর্থ কমিটি গঠন ও পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অর্থ কমিটির কোনো সভা করে না। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ করেনি। আবার যেখানে কোষাধ্যক্ষ আছে, সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের পছন্দের লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব আর্থিক অনিয়ম বন্ধ করতে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা আনতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বৈঠক করে ১৬ দফা নির্দেশনা দেন। এরমধ্যে আর্থিক স্বচ্ছতা ছিল অন্যতম। আচার্যের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জিন্নাত রেহেনা স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
তাতে ১৪টি ক্যাটাগরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট করতে বলা হয়েছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক কার্যক্রম ব্যাংকে পরিচালিত হয় কিনা, কেনাকাটা ও ব্যয়ের ভাউচার যাচাই, সব আয়-ব্যয় নির্দিষ্ট খাতে হয় কিনা, না হলে কবে নাগাদ চালু হবে তা নির্ধারণ করা, বিবিধ ব্যয় দেখিয়ে ব্যয়ের খাত গোপন হয় কিনা তা পরীক্ষা করা, আর্থিক লেনদেনে লেজার সংরক্ষণ না হলে কত দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে তা নির্দিষ্ট করা, যারা ব্যাংক ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নগদ টাকা আদায় করলে তা ব্যাংকে জমা দেয়া হয় কিনা।
টাকা আদায়ের ছাপানো রসিদ বইয়ের যথাযথ হিসাব সংরক্ষণ করা হয় কিনা তা যাচাই করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভূমি, ইমারত, ব্যাংকের স্থায়ী আমানত, মূল্যবান যন্ত্রপাতি, যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কেনা ও রেজিস্ট্রেশন হয় কিনা-না হলে কার নামে তা উল্লেখ করতে হবে, ব্যাংকের হিসাব কে কে পরিচালনা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিয়োগ তহবিল থেকে আয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা হয় কিনা, হিসাব বিবরণীতে অন্যান্য আয়-ব্যয় দেখানো হলে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক পারফরমেন্স সম্পর্কে মন্তব্য করা, পূর্বের কোনো মন্তব্য থাকলে তার বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা, ভ্যাট, আইটি আর্থিক বিধি অনুযায়ী কর্তন করা হয় কিনা তা নিশ্চিত করা, স্থায়ী আমানতের বিপরীতে কোনো ব্যাংক ঋণ নিয়েছে কিনা- নিলে কোনো ব্যক্তির নামে হয়েছে কিনা তা বের করা। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৪৫ (১) অনুযায়ী প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক ব্যয়ের হিসাব ইউজিসির নির্ধারিত ফরমে প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করা হয় কিনা তা যাচাই করা।
সৌজন্যে: মানবজমিন