উচ্চশিক্ষার চাহিদা মিটাইতে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়িয়া উঠে। তাহার পর অনেক সময় অতিবাহিত হইয়াছে। বর্তমানে দেশে ১০১টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রহিয়াছে। ইহার মধ্যে চালু আছে ৯১টি; কিন্তু সেইগুলির ব্যাপারেও বিস্তর অভিযোগ রহিয়াছে। ইহাছাড়া ইউজিসি ২২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করিয়া বলিয়াছে, এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সরকার বন্ধ করিয়া দিয়াছে, কয়েকটির মালিকানা নিয়া মামলা চলিতেছে, কয়েকটির ক্যাম্পাস অনুমোদিত নয় এবং কোন প্রতিষ্ঠান এমন কোর্স পরিচালনা করিতেছে যেইসবের অনুমোদন নাই; এমনকি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড নিয়া আদালতে মামলা পর্যন্ত চলিতেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সম্প্রতি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়াছে। প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ফুটিয়া উঠিয়াছে। বলা হইয়াছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের তোয়াক্কা করিতেছে না বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়। রোববার (৫ জানুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, উল্লেখ্য, পূর্বে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৯২’-এর আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিচালিত হইত। পরে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ২০১০’ (সংশোধনীসহ) এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে। তবুও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ২০১০’-এর আলোকে পরিচালিত হইতেছে না। সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করিয়া ৩০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনো অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করিতেছে। যাহা ২০১০-এর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৯ ধারার ১ ও ২ উপধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন। এই আইনে বলা হইয়াছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে, প্রস্তাবিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অন্যূন এক একর পরিমাণ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য অন্যূন দুই একর পরিমাণ নিষ্কণ্টক, অখণ্ড ও দায়মুক্ত জমি থাকিতে হইবে। যাহা অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েরই নাই। ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়নের পর হইতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাইবার জন্য ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তত পাঁচ বার সময় দেয় কর্তৃপক্ষ; কিন্তু তাহার পরও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বারবার ব্যর্থ হইতেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিচালিত হইতেছে বাণিজ্যিক মনোভাবসম্পন্নদের দ্বারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বৈশ্বিক ধারণা, তাহা হইবে জ্ঞান অর্জন ও সম্প্রসারণের একটি উন্মুক্ত কেন্দ্র; কিন্তু দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি হইল—এইগুলির বেশির ভাগ পরিচালিত হয় বদ্ধ বাণিজ্যিক ভবনে যাহা উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার সহিত মানানসই নহে।
ইহা ছাড়াও ইউজিসির নির্দেশনা সত্ত্বেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই দুই সিমেস্টার পদ্ধতি চালু করে নাই। শিক্ষার্থী ভর্তিতে মানিতেছে না অনুমোদিত আসনসংখ্যা। ভিসি-প্রোভিসি-কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের বিধানও মানা হইতেছে না। মিটিং, সিটিং আর নানা কেনাকাটার আড়ালে কোটি কোটি টাকা নিয়া যাইতেছেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা। বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য সুনির্দিষ্ট ও সুলিখিত কোনো চাকরি বিধিমালা নাই। এত অপূর্ণাঙ্গতা লইয়া উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান চলিতে পারে না। দেশে সরকারি মাধ্যমের উচ্চশিক্ষায় আসন সীমিত থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বেসরকারি খাতের বিকাশ ঘটিয়াছে; কিন্তু এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে উন্নীত হয় নাই। বর্তমানে সরকারি মাধ্যমের শিক্ষার্থীর তুলনায় বেসরকারি মাধ্যমের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষার উচ্চ মান নিশ্চিত করিতে হইবে। এই লক্ষ্যে ইউজিসি কর্তৃক প্রস্তাবিত ২৯টি সুপারিশ অবশ্যই বাস্তবায়ন করিতে হইবে।