বেসরকারি শিক্ষক : দুর্যোগে দুর্গতির উদাহরণ - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি শিক্ষক : দুর্যোগে দুর্গতির উদাহরণ

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি বড় অংশের বেতন নেই। এরা নন-এমপিও। বিনা বেতনে চাকরি করেন। স্বাভাবিক অবস্থায় স্কুল-কলেজের বাইরে অফটাইমে তারা এ কাজ সে কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। এখন অস্বাভাবিক সময়। করোনা মহামারির অসময়ে স্বেচ্ছায় নিজ গৃহে পরবাসীর মতো। পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব এমপিওবিহীন শিক্ষক-কর্মচারী আজ কেমন আছেন? কেমন করে  দু’বেলা দু’মুঠো আহারের সংস্থান করছেন? এই দুর্যোগে কার কাছে আশ্রয় খুঁজছেন? এই দুঃসময়ে কে-ই বা তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে?

ত্রাণের চাল আর তেল চুরির হিড়িক। শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর সময় কার আছে? মানবতা একেবারে মুছে গেছে-সে কথা বলি না। ডাক্তার, নার্স আর পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সাংবাদিকরা মানবতা জিইয়ে রেখেছেন। তদুপরি করোনা দুর্দিনে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের দুর্গতির খবর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানার কথা নয়।

গত বছরের শেষ দিকে প্রায় তিন হাজারের মতো প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর আর কোনো খবর নেই। ঘোষণার পর এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন। করোনা মহামারির এই সময় পর্যন্ত এমপিও না পেয়ে সেই আলোটি নিভে গেছে। হতাশার অন্ধকারটি করোনার ঘোর অমানিশায় আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে।

সদাশয় সরকার করোনা দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার জন্য একটি মেগা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। দেশের নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা এই দুঃসময়ে যাতে এই প্রণোদনা থেকে বেশি উপকৃত হতে পারেন, সে বিষয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করি। আর যাদের এমপিও দেবার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, মানবিক বিবেচনায় চরম দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে এক মাসের ভেতরে তাদের এমপিও ছাড় করে দিন। নতুন এমপিও ঘোষণা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে ওয়ান-টুতে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই দুর্দিনে শিক্ষক-কর্মচারীদের মুখে হাসির সঞ্চার করুন। 
 
গত দুই তিন বছরে এমপিওভুক্ত অনেকে পেনশনে চলে গেছেন। রিটায়ার্ড করা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা কেমন আছেন? করোনা মহামারির এই দুর্যোগকালে তারা একদম ভালো নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বৈশ্বিক মহামারি করোনায় তাদের দিন কেমন কাটছে-সে খবরটি  কেউ রাখছে না। যারা এখনো কল্যাণ ট্রাস্ট কিংবা পেনশন সুবিধার টাকা হাতে পান নাই, তাদের টাকাগুলো এই দুর্দিনে দিতে পারলে খুব ভালো হয়। যারা অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে বিভিন্ন পদ আছেন, তারা বেশিরভাগ বেসরকারি শিক্ষক ও কর্মচারী নেতা। তারা একটু সদয় হলে রিটায়ার্ড বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা এই মহা দুর্দিনে কিছুটা হলেও উপকৃত হতেন। তারা সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীর উপকারের চেয়ে সংগঠনের নেতার পদটি ব্যবহার করে উপর মহলের সুনজরে থেকে নিজেদের আখের গোছানো  পছন্দ করেন। অন্যভাবে বললে দালালিও বলা যায়। সব সরকারের আমলেই এটা হয়। ফলে বেসরকারিদের দুর্দশা লেগেই থাকে।

সরকারি  চাকুরেদের মতো প্রতি মাসে পেনশনের কিছু টাকা হাতে পেলে দুর্যোগকালে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতে পারতো। এই বিবেচনায় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারিদের মতো মাসে মাসে পেনশন দেবার আওতায় আনার জোর দাবি জানাই। তাহলে শেষ জীবনটা তারা একটু স্বস্তিতে কাটাতে পারবেন। বিশেষ করে করোনা মহামারির মতো বিপদকালে পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পারবেন। তা না হলে, আল্লাহ মাবুদ ছাড়া তাদের কোনো উপায় নাই। করোনার মতো যে কোনো দুর্যোগে বিনা চিকিৎসায় না খেয়ে সবার আগে তারাই মারা যাবেন। নিজের কোনো সঞ্চয় নেই। এ দুঃসময়ে তারা কার কাছে হাত পাতবেন?

 
আপদকালীন মানবিক বিবেচনায় যে সব রিটায়ার্ড শিক্ষক-কর্মচারী আজ পর্যন্ত তাদের কল্যাণ ট্রাস্ট ও পেনসনের টাকা হাতে পান নাই, তাদের টাকাগুলো আগামী এক মাসের মধ্যে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। এই কঠিন সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে দিন।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের বিরুদ্ধে অনেক আবেদন-নিবেদন ও আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তাদের কথা কেউ শুনেনি। এ বিষয়ে কল্যাণ ট্রাস্টের বড় পদে আসীন নেতাদের ওপর শিক্ষক-কর্মচারীরদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে। অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনে এই নেতা অতি উৎসাহী ভূমিকা পালন করেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। এখন বিপদের সময়। এই অতিরিক্ত কর্তন শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। আপদকালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করে অতিরিক্ত কর্তনটি এখন থেকে বন্ধ করা উচিত। তাহলে করোনার এই দুঃসময়ে তাদের কিছু অর্থ সাশ্রয় হবে।

দেশের ৮০ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যাংক লোন আছে। চড়া সুদসহ প্রতিমাসের বেতন থেকে ব্যাংকগুলো ঋণের কিস্তি আদায় করে থাকে। কিস্তি কাটার পর অনেকের বেতন অর্ধেকে বা তারও কমে চলে আসে। এই অর্ধেক বেতনে স্বাভাবিক সময়েও পরিবার চালানো কঠিন। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে কিস্তি কেটে নেয়া হচ্ছে। ফলে এ আপদের সময় ঋণগ্রস্থ শিক্ষক-কর্মচারীরা কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছেন।

যতদিন এই দুর্যোগ না কাটে, ততদিন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে লোনের কিস্তির টাকা কর্তন যেন বন্ধ থাকে-সেটি তারা চান। এই বিষয়ে বরাবরের মতোই শিক্ষকবান্ধব একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম শিক্ষকদের মনের কথা তুলে ধরছে। 

দয়া করে এই বিপদের সময়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের টাকাটা সরকারিদের মতো প্রতি মাসের এক-দুই তারিখে দিয়ে দেবার ব্যবস্থাটি করেন। গত বৈশাখি ভাতার টাকাটি তারা পহেলা বৈশাখের আগে হাতে পান নাই। বড় কষ্টের কথা। সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। সময়ের এক টাকা আর অসময়ের দশ টাকা। সময় মতো বেতন দিলে গরীব শিক্ষক-কর্মচারীর অন্তত কিছু টাকা বেঁচে যায়।

বাকিতে অনেক ফাঁকি। দোকান থেকে বাকি খেয়ে অনেকে বেতন পাবার আগে সব টাকা শেষ করে ফেলেন। কোনো কোনো অসাধু দোকানদার খাতায় এক টাকার মাল দশ টাকায় লিখে রাখে। তারা দোকানে ক্যাশ বাক্সের গায়ে বড় হরফে লিখে রাখে- ‘বাকির নাম ফাঁকি’। বেতন যখন দেন-ই, তখন এক-দুই তারিখে দিতে অসুবিধা কোথায়? করোনা দুর্যোগের সময় এ কাজটি করতে পারলে ভারি সুবিধা হয়। এটি করতে পারলে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা সবিশেষ উপকৃত হন। সময় মতো বেতন না পাওয়ার মতো দুর্গতি দুনিয়ায় আর কারো নেই। আমাদের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এটি এক বড় দুর্গতি। 

লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077250003814697