বিভিন্ন সরকারি সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষকদের সক্রিয় রাজনীতি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে দৈনিকশিক্ষা ডটকমে খবর বেরিয়েছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা এসেছে বেসরকারি শিক্ষকরা যাতে রাজনীতি করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা। কারণ দেখানো হয়েছে, শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় লেখাপড়ার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
তাছাড়া শিক্ষকরা বিভিন্ন সালিশ-দরবার ও ব্যবসাবাণিজ্য করে ব্যস্ত থাকেন। শিক্ষকতার মত মহান পেশায় থেকে এসব কাজ যাতে করতে না পারে সেজন্য বিশেষ করে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের লাগাম টেনে ধরার জন্য নিষেধাজ্ঞা আসছে। তবে শিক্ষকরা আরো কিছু কাজ করেন যেমন, বিভিন্ন নির্বাচন, ভোটার তালিকা, বিভিন্ন শুমারি, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি, সরকারি -বেসরকারি নানারকম কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ। এগুলো বলা হয়নি এ রিপোর্টে।
এখানে শিক্ষকতাকে মহান পেশা বলা হয়েছে। কিন্তু মহান পেশার মানুষগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন কারা প্রশ্ন জাগে। অপ্রিয় হলেও সত্য, এদেশে শিক্ষকদের মর্যাদা কখনও দেখা যায়নি। যাদের মর্যাদা দেয়া হয় না তাদেরকে মহান বলা কতটা যুক্তিযুক্ত তা আমার বোধগম্য নয়। শিক্ষকতা যদি মহান হয় তবে রাজনীতিও মহান বলে আমি মনে করি। আমার জানামতে, খুব কম সংখ্যক শিক্ষকই সক্রিয় রাজনীতি করেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষক মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। পাঁচ লাখ শিক্ষকের মধ্যে এ সংখ্যা খুবই নগন্য। বর্তমান জাতীয় সংসদেও তো শিক্ষক আছেন।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মহান মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা ছিলো । অনেক শিক্ষক শহীদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। আমি জানি, শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষেই আছেন তাদের পেশায়। শিক্ষকরা এদেশে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন যুগ যুগ ধরে। শিক্ষকরা মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন, স্থানীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন এবং যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততার পরিচয় দিয়ে আসছেন।
পড়াশোনার মানোন্নয়নের কথা যদি বলেন, শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে ধারণা দিতে সংস্থাগুলোকে পরামর্শ দিচ্ছি। আর তাহলেই শিক্ষার মান বাড়বে। নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা এই মহান পেশার প্রতি অন্যায় হবে কিনা ভেবে দেখুন। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, শিক্ষকরা মাদকব্যবসা বা সেবন করেন না, চাঁদাবাজি করেন না, দুর্নীতি করেন না, সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের দুঃখ মোচন করার চেষ্টা করেন। কিছু শিক্ষক রাজনীতি করেন বলেই কিছুটা হলেও তাদের অস্তিত্ব টিকে আছে। তারপরও শিক্ষকরা পদে পদে অসম্মানিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। শিক্ষকদের কান ধরে ওঠবস করানো, শরীরে মল ঢালা কেমন মর্যাদা। এরপরও শিক্ষকদের মহান বলবেন? আমি বলছি, শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার আছে রাজনীতি করার। যেহেতু তারা বেসরকারি।
তাছাড়া রাজনীতির মত মহান কাজে আদর্শ পেশায় নিয়োজিত শিক্ষকদেরই শোভা পায়। আর একটি কথা ভুলে গিয়েছিলাম, ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে "বেসরকারি শিক্ষকরা নির্বাচন করতে পারবেন" বলা আছে অর্থাৎ রাজনীতি করায় বাধা নেই। গত উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন বেসরকারি শিক্ষকরা নির্বাচন করতে পারবে না। পরে নিজেদের ভুল স্বীকার করে সেই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নেয়। বিষয়টি থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুধাবন করা উচিত।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]