বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি : সমস্যা ও সম্ভাবনা - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি : সমস্যা ও সম্ভাবনা

মাছুম বিল্লাহ |

বহুল আলোচিত নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার প্রস্তাব অবশেষে চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে মোট এক হাজার ৭৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৮৬৫ কোটি টাকা। ১ হাজার ৭৬৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হলে তাতে ব্যয় হবে ৭৯৬ কোটি ৪৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। বাকি ৬৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনকালে আরও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যে এক হাজার ৭৬৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করে বাছাইয়ে টিকেছে এক হাজার ৬৪৯টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বুয়েটের তৈরি করা বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। এমপিওভুক্তির নীতিমালা ২০১৮-এর ১৪ ধারা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান সব শর্ত পূরণ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান বাছাই করার পর দেখা যায় সারাদেশের ৮৯টি উপজেলার একটি শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির যোগ্যতা পূরণ করতে পারেনি। সমতার স্বার্থে এসব উপজেলায় এমপিওভুক্তির নীতিমালার ২২ নম্বর ধারা প্রয়োগ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। সেখানে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা যেতে পারে।’

সর্বশেষ ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের জুনে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু সরকার এমপিও দিতে পারেনি। নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন। ওই দিন এমপিওবিহীন বেসরকারি স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তকরণের নীতিমালা এবং জনবল কাঠামো জারি করা হয়। এরপর একে একে মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চলে আসে। নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষকরাও দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে আসেন। তখন শিক্ষকদের শান্ত করতে গত আগস্টে নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়। সরকারি আহ্বানে নন-এমপিওভুক্ত ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তখন আবেদন করে। কিন্তু এত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনটিকে রেখে কোনটি বাদ দেয়া হবে, আর বাদ দিলে নির্বাচনের আগে শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এমন অবস্থায় আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই নামক বিলম্বের কৌশল অবলম্বন করা হয়।

উপরোল্লেখিত সাড়ে নয় হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭৬২টি এমপিও নীতিমালার তিনটি ধারায় বর্ণিত চার যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করেছে। চার শর্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর রাখা হয়। তবে স্বীকৃতিতে ছাড় না দিলে প্রতিষ্ঠান সংখ্যা আরও কমে ২ হাজার ৭৫৬টি হতে পারে বলে বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ করেছিল।

যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছে এর সবগুলোকে এমপিওভুক্ত করলে প্রয়োজন হবে ৪ হাজার ৩৯০ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা। আর যদি যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হয় তাহলে প্রয়োজন হবে ১ হাজার ২০৭ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। যদি স্বীকৃতির মেয়াদ বিবেচনা না করে এমপিও দেয়া হয় তবে ব্যয় হবে ১ হাজার ২১০ কোটি ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এগুলোর মধ্যে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬১৫টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭৯৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯১টি এবং ডিগ্রি কলেজ ৪৪টি। এ ছাড়াও দাখিল মাদরাসা আছে ৩৬২টি, আলিম মাদরাসা ১২২টি, ফাজিল মাদরাসা ৩৮টি এবং কামিল মাদরাসা ২৯টি। কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এসএসসি ভোকেশনাল (হাইস্কুল সংযুক্ত) ১৪৬টি, এসএসসি ভোকেশনাল (স্বতন্ত্র) ৪৮টি, দাখিল মাদরাসা সংযুক্ত ২টি, এইচএসসি (ব্যবসায় প্রশাসন সংযুক্ত) ৮৯টি, এইচএসসি ব্যবসায় প্রশাসন (স্বতন্ত্র) ২৩৫টি এবং কৃষি ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট ৬২টি।

দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত সর্বশেষ খবরে জানা যায় যে, সারাদেশে এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্ত করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৫১টি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তার জন্য বছরে ব্যয় হবে ১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ১০০২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য বছরে প্রয়োজন হবে ৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ৬৭টি স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য ব্যয় হবে ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ৯৪টি উচ্চমাধ্যমিক কলেজের জন্য ব্যয় হবে ৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ৫৩টি ডিগ্রি কলেজ (অনার্স-মাষ্টার্স) কলেজের জন্য বছরে ব্যয় হবে ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। মোট ব্যয় হবে ৭৯৬ কোটি ৮৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এমপিওভুক্তির জন্য অযোগ্য হয়েছে চার হাজার ৪৯২টি প্রতিষ্ঠান। অনুদানপ্রাপ্ত এক হাজার ৫১৯টি মাদরাসাকে পুরোপুরি এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং জন্য বছরে খরচ হবে ১০৯ কোটি টাকা। এসব মাদরাসার প্রধানেরা মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকেরা ২ হাজার ৩০০ টাকা অনুদান পান। এমপিওভুক্ত এসব মাদারাসার শিক্ষকেরা সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের সমান বেতন পাবেন।

২০১৯-২০ নীতিমালার এ ধারা প্রয়োগ করে ৮৯টি উপজেলার মধ্যে এমপিওভুক্তির শর্ত পূরণে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ন্যূনতম ১০০ জন এবং কমপক্ষে দুই বছরের স্বীকৃতি থাকায় বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বাদপড়া প্রতিটি উপজেলা/থানা থেকে একটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়েছে। এই মানদণ্ডে ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। বিশেষ বিবেচনায় বাছাই করা হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার ছিটমহলের একমাত্র স্বীকৃতিপ্রাপ্ত  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মইদাম কলেজ’-যেটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮৫ জন। ২২ ধারা প্রয়োগ করে মোট ৬১টি প্রতিষ্ঠানকে তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের দূর্গম ও পার্বত্য এলাকা, পাহাড়ি, হাওড়-বাঁওড়, চরাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকায় নীতিমালার ১৪ ধারা অনুসারে এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি এমন ৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫০০ জন বা তার বেশি এবং কমপক্ষে দুই বছরের স্বীকৃতি থাকার শর্ত পূরণ করতে হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাদপড়া ৮৯টি উপজেলায় ২২ ধারা প্রয়োগ করে ৬১টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার পরও ২৯টি উপজেলা বা থানা বাদ থেকে যায়, যেগুলোর মধ্যে উপজেলা ১২টি ও থানা ১৭টি। এই ১২ উপজেলার সাতটি থেকে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাছাই করা হয়েছে। যোগ্য না হওয়ায় অপর পাচটি উপজলোর কোনো প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে, দেশের ২৩টি উপজেলা/থানা এলাকা থেকে এমপিওভুক্তর জন্য এ বছর কোনো আবেদনই পাওয়া যায়নি।
 
দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার (নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি) ৯৭ শতাংশ বেসরকারি ব্যবস্থাপনা নির্ভর। এ স্তরে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্য প্রায় এক হাজার, এমপিওভুক্ত ২৮ হাজারের অধিক, আর স্বীকৃতি আছে কিন্তু এমপিও নেই এমন প্রতিষ্ঠান আছে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো, আর স্বীকৃতিবিহীন আছে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছুটা আর্থিক সক্ষমতা থাকলেও সম্পূর্ণ নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দৈন্যদশার ভেতর রয়েছে। যে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার দিক দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পিছিয়ে পড়েছে।

সরকারি, এমপিওভুক্ত এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নির্বিশেষে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই নিয়ম-নীতিতে পরিচালিত হয়। একই কারিকুলাম, সিলেবাস এবং প্রশ্নপদ্ধতি অনুসরণ করে। শিক্ষার্থীরা বোর্ড থেকে একইমানের সনদ লাভ করে। অথচ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত  ও স্বীকৃতিবিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি বেতন ভাতাদির কিছুই পায় না। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এর শিক্ষক-কর্মচারীরা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটায়। তাদের এই অনিশ্চয়তা হাজার হাজার এমনকি লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ভীত তৈরি, মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে।
 
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ার পর তিন বছর সফলভাবে পাঠদান করলে স্বীকৃতি পায় এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে সেটাই প্রচলিত রীতি। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে এই রীতির অতিরিক্ত নীতিমালার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই নীতিমালা কার্যকর করা যায়নি মন্ত্রী এমপিদের ডিও লেটার এবং অর্থ-লবিং এমপিওভুক্তির নিয়ামক উপাদান হয়ে দাঁড়ানোর কারণে। তখন দেখা যায়, অনেক যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে না পারলেও কম যোগ্যতার এমনকি স্বীকৃতি নেই এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ১২ জুন স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা জারি করা হয়। এর মাসাধিককাল পর ১৯ জুলাই মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা প্রকাশিত হয়। নীতিমালায় কঠিন সব শর্ত আরোপ করা হয়েছে। কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতির তারিখ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পাসের হারের ওপর মান নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবল কাঠামো সম্পর্কিত নির্দেশিকায় নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর ন্যূনতম যে সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ এর নীতিমালায়, সে সংখ্যা ১০ জন করে বাড়ানো হয়। আগে স্কুল ও কলেজে কাম্য পাসের হার নির্ধারিত ছিল ৫০ শতাংশ। এখন পাসের হার বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭০ শতাংশ। অবশ্য মাদরাসার পাসের হার ধরা হয়েছে ৬০ শতাংশ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তকরণে সূচক ধরা হয়েছে একাডেমিক স্বীকৃতির বয়স ২৫ (প্রতি ২ বছরের জন্য ৫, ১০ বা তদূর্ধ্ব বছর হলে ২৫), শিক্ষার্থীর সংখ্যার মান ২৫ (কাম্য হার অর্জনের সংখ্যার ক্ষেত্রে ১৫, কাম্য সংখ্যার পরবর্তী প্রতি ১০ জনে ৫), উত্তীর্ণে ২৫ (কাম্য হার অর্জনের ক্ষেত্রে ১৫, পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৫)। ধরা যাক, বিগত দুই বছরের ভেতর কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখনও ভালোভাবে দাঁড়াতে পারেনি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথেষ্ট নয় বিধায় পরীক্ষার্থীও কম। উত্তীর্ণের হার ৭০ শতাংশের নিচে। তাহলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বসাকুল্যে স্কোর হবে শূন্য (০)। একাডেমিক স্বীকৃতিতে স্কোর পেলেও অন্য তিনটি সূচকে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কোর হয়েছে শূন্য (০)।
 
কোনো একটি ক্লাসের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা শিক্ষার্থীর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। নীতিমালার সবক্ষেত্রে সেই হিসাব যথাযথভাবে অনুসরন করা হয়নি। যেমন, মফস্বলে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (৬ষ্ঠ-৮ম) কাম্য শিক্ষার্থী ধরা হয়েছে ১৫০ জন। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (৬ষ্ঠ-১০ম) ২০০ জন। তাহলে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী বাড়ছে ৫০ জন। নবম ও দশ শ্রেণির প্রতিটিতে গড় শিক্ষার্থী ২৫ জন। এমতাবস্থায় এসএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ পরীক্ষার্থী হওয়া উচিত ২৫ জন। অথচ এখানে কাম্য পরীক্ষার্থী চাওয়া হয়েছে ৪০ জন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত অবস্থান নির্ধারণ করতে হলে স্কোরিং ও গ্রেডিং নতুনভাবে করতে হবে। স্কোরিং করে গ্রেডিংয়ের উদ্দেশ্য হলে একটি সংখ্যার ভেতর দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান সম্পর্কে ধারণা লাভ। সহজ হিসাবটি হচ্ছে, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কোর বেশি সেটির মান ভালো। আর যে প্রতিষ্ঠানের স্কোর কম সেটি দুর্বল। কিন্তু ১ থেকে স্কোরিং না করে ১৫ থেকে স্কোরিং শুরু করলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মান সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে না। নীতিমালার অদ্ভুত মূল্যায়ন রীতিটা এ রকম, শিক্ষক ১০০ এর ভেতর ৬০ নম্বর পাওয়া সব শিক্ষার্থীকে শূন্য (০) স্কোর দিলেন। এটি কোনো আদর্শ মান বন্টন পদ্ধতির কথা বলে না। এ ধরনের বেশ কিছু ত্রুটি থেকে যাচ্ছে নতুনভাবে এমপিভুক্তির ঘোষণায়।

এমপিওবঞ্চিত হলে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়বে। শহর এলাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়তো কোনোভাবে টিকে থাকবে। তবে, মফস্বলের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আমি নিজে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে ঘুরে দেখেছি যে, তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো বেতন নেন না। শুধু এমপিওর টাকার ওপর নির্ভরশীল। আর যেসব প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির বাইরে থাকবে তাদের অবস্থা আরও খারাপ ।

প্রস্তাবিত এমপিও নীতিমালা ২(খ) ধারায় বর্তমানে অনুমোদিত সব স্কুল-কলেজ ভৌগোলিক দূরত্বভিত্তিক ম্যাপিং এবং ভৌগোলিক দূরত্বে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলে তা প্রশাসনিকভাবে একীভূত করার বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একাধিক স্কুল ভবন-কাঠামো একীভূত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস হিসেবে বিবেচিত হবে। নীতিমালার ১২ ধারায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলির প্রস্তাব করা হয়েছে। বদলির মাধ্যমেও অতিরিক্ত বিবেচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে সমন্বয় করা সম্ভব। তবে,  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  স্বীকৃতি থাকবে অথচ এমপিও হবে না, এটিকে সুবিবেচনাসম্মত সিদ্ধান্ত  বলা যাবে না।

স্বীকৃতির শর্তাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করলে কোনো অযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি থাকার কথা নয়। ঠিকভাবে না চলায় সম্প্রতি ২২০টি মাদরাসার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। কোনো জনপদে স্থাপিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে এলাকাবাসী সেটি প্রত্যাশা করে। বহু বছর অপেক্ষার পরও এমপিভুক্ত না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়ে আর সেখানে থেকে আমরা মানসম্মত শিক্ষা কোনোভাবেই আশা করতে পারি না। তাই অনেকেই মনে করেন যে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ এমপিওভুক্ত করা হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়বে, আর শিক্ষক কর্মচারীরা শিক্ষাদানে ও শিক্ষাদানের সঠিক পরিবেশ সৃষ্টিতে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে। তবে, এটিও ঠিক যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দের ৬৫ শতাংশই ব্যয় হয় এমপিওর জন্য।

মানসম্পন্ন শিক্ষার কথাও যেমন ভাবতে হবে, তেমন ভাবতে হবে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা ছাড়াও শিক্ষাদান করে যাচ্ছে তাদের কী হবে? রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও আমলাতন্ত্রের বিচ্যুতির কারণে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায় শুধু কর্মরত শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের নয়। বিষয়টি আমাদের যৌক্তিকভাবে ভাবতে হবে।

লেখক: ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত সাবেক ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজ শিক্ষক।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039708614349365