বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রভাষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তবে এখনো অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে গভর্নিং বডি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির হাতে। কিন্তু খুব শিগরিরই এসব পদে নিয়োগের ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছে পরিচালনা পর্ষদ। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বর মাসের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাসিক সমন্বয়সভায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব নিয়োগ এনটিআরসিএর মাধ্যমে সম্পন্ন করার ব্যাপারে বিধিবিধান তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষকের মতো একই প্রক্রিয়ায় অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকের মতো পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। এ জন্য আলাদা বিধি-বিধান প্রয়োজন। তাই এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখানে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টিও উল্লেখ রাখতে বলা হয়। আর এই কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক-২ শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব এবং এনটিআরসিএর চয়ারম্যানকে।
এসব বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো নিয়োগ পরিচালনা পর্ষদের হাতে রাখা হবে না। তবে এনটিআরসিএর মাধ্যমে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক কীভাবে নিয়োগ দেয়া যায়, সে ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা তৈরির কাজ চলছে। সেটা শেষ হলে আরও আলোচনার পর এনটিআরসিএর মাধ্যমে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারটি চূড়ান্ত হবে।’
অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দিত—বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট ছিল। এতে মেধা ও দক্ষতার মূল্যায়ন হয় না। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেত অনেক অদক্ষ ও অযোগ্য ব্যক্তি। এ কারণে আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার মান তেমনভাবে বাড়ছে না। তবে সরকার ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা এনটিআরসিএকে দেয়ায় এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমেছে। নিয়োগ পাচ্ছেন মেধাবীরাও।
কিন্তু অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে একই ধারার দুর্নীতি রয়ে গেছে ঠিক আগের মতোই। সূত্র মতে, অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে গেলে এখন কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় পরিচালনা পর্ষদকে। ফলে যাঁরা নিয়োগ পান তাঁরাও শিক্ষার মানের দিকে জোর না দিয়ে ‘বিনিয়োগ করা টাকা’ উসুলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব পদেও এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে যেহেতু অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক একটা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদ, তাই এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার বলেও মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত গণসাক্ষরতা অভিযানের এডুকেশন ওয়াচ ২০১৮-১৯ প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে মাত্র ১৫ শতাংশ শিক্ষক দক্ষ ও উচ্চপর্যায়ে দক্ষ ০ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া পরিমিত দক্ষ ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ, গড়পড়তা দক্ষ ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ, সীমিত পরিমাণে দক্ষ ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ ও অদক্ষ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
জানা যায়, শিক্ষার স্তরগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সবচেয়ে দুর্বল। মূলত অদক্ষ শিক্ষকই এই স্তরে দুর্বলতার অন্যতম কারণ। এমনকি এমনও অনেক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও নিজেদের দক্ষতার স্তর বাড়াতে পারছেন না। নতুন নতুন সিলেবাস ও কারিকুলামের সঙ্গেও তাঁরা তাল মেলাতে পারছেন না। এর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপিওভুক্ত সব প্রতিষ্ঠানে যেহেতু বর্তমানে সরকার শতভাগ বেতন দেয়, অবকাঠামো নির্মাণ করছে, তাই সর্বোচ্চ পদ অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে সব পদের নিয়োগই সরকারের দেয়া উচিত। আর পড়ালেখার মানোন্নয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে কাজ করা উচিত পরিচালনা পর্ষদের।