বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা) ৩৮ হাজার ৮০০টি শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা পেয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকাটি আরেকবার যাচাই-বাছাই করে আগামী এক মাসের মধ্যে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা কিছুটা শিথিল। নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী এবং পুরুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষ শরীর চর্চা শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, দুই দফা মন্ত্রণালয়ে নারী কোটি শিথিল করতে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মহানগর ও জেলা শহরের পৌর এলাকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট শিক্ষক পদের ৪০ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ নারী শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক রয়েছে। একই উপজেলায় মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন নারী কোটার হার থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হিসাব বের করতে ভুল হয়ে যায়। যে কারণে একই হারে মহিলা কোটা (যেমন ২০, ২৫ বা ৩০ শতাংশ) নির্ধারণ করলে নিয়োগ কার্যক্রম সুচারুভাবে করা সহজ হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, শরীর চর্চা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষ শিক্ষক এবং পুরুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষক নিয়োগ দিলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মহিলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আপত্তি করে। যে কারণে পুরুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষ এবং নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী শরীর চর্চা শিক্ষক নিযোগের বিষয়টি বিবেচনা করতে অনুরোধ জানান এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘নারী কোটায় যোগ্য নারী না পাওয়ায় অনেক পদ শূন্য থাকছে। এছাড়া মহিলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরুষ শরীর চর্চা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। নারী কোটা শিথিল এবং মহিলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহিলা শরীর চর্চা শিক্ষক নিয়োগ করতে এনটিআরসিএর প্রস্তাবটি বিবেচনায় নেওয়া হবে। এনটিআরসিএর নতুন চেয়ারম্যান যোগদানের পরে সভা করে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো।’
অপরদিকে এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, দুই দফা সময় দিয়ে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শূন্য পদের তালিকা পাঠানোর শেষ সময় ছিল। সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ে ৩৮ হাজার ৮০০ জন শিক্ষক নিয়োগের চাহিদা পেয়েছে এনটিআরসিএ। নিয়োগের জটিলতা এড়াতে এখন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শূন্য পদগুলো যাচাই-বাছাই করবে এনটিআরসিএ। তালিকা চূড়ান্ত করার পরে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এরপর সফট ওয়ারের মাধ্যমে জাতীয় মেধা তালিকা অনুযায়ী শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি স্কুল,মাদরাসা ও কলেজের প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষক নিয়োগ দিতেন। এ নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে প্রথম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা চালু করা হয়। এরপরে ১২টি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এতে পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৯৬৩ জন পাস করে। এর মধ্যে চাকরি পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৩২২ জন। এনটিআরসিএ শুধু পরীক্ষা নিয়ে সনদ দিতো। আর চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা আগের মতোই ম্যানেজিং কমিটির হাতে থাকায় নিয়োগ ব্যাণিজ্য অব্যাহত ছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর এনটিআরসিএ আইন সংশোধন করে মেধা তালিকার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ চালু করে। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর প্রথমবারের মতো জাতাীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করে এনটিআরসিএ।
প্রথম থেকে ১২তম শিক্ষক নিবন্ধ পরীক্ষায় পাস করেও চাকরি না পেয়ে আদলতে ৩৫টি মামলা করেন বঞ্চিতরা। মামলার কারণে গত দুই বছর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ আটকে আছে। আদালত নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করাদের মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের রায় দিয়েছেন। রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এনটিআরসিএ ছয় লাখ চার হাজার ৬৮৫ জনের মেধা তালিকা প্রকাশ করে।
এনটিআরসিএ সূত্র জানিয়েছে, আদালতের রায় ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক মেধা তালিকার পরিবর্তে এবার জাতীয় মেধা তালিকার মাধ্যমে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। ফলে এক জেলার নিবন্ধিতরা অন্য জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুযোগ পাবেন।