মাদরাসার সব শ্রেণিকক্ষের দরজা বন্ধ। সুপারিনটেনডেন্টসহ শিক্ষকদের কক্ষও তালাবদ্ধ। মাদরাসার মাঠে একজন কৃষক গরু চড়াচ্ছেন। পাশেই দু’জন শিশু খেলা করছে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা সদরের খাস কাউলিয়া দক্ষিণ জোতপাড়া দাখিল মাদরাসা সরেজমিন গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। এ সময় মাদরাসা প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে দৌড়ে আসেন আয়া সেলিনা বেগম।
তিনি বলেন, আজ মাত্র তিনজন ছাত্র উপস্থিত হয়েছিল। শিক্ষক ছিলেন ১০ জন। ছাত্র কম থাকায় সামান্য কিছুক্ষণ আগে (১২টার দিকে) মাদরাসা বন্ধ করে শিক্ষকরা চলে গেছেন। মাদরাসা মাঠে গরু চড়াতে আসা কৃষক মানিয়ার শিকদার বলেন, এই মাদরাসায় ছাত্রছাত্রী খুব কম আসে। আমরা নিজেরাই আমাদের ছেলেমেয়েদের মাদরাসায় দিতে চাই না। কারণ মাদরাসায় লেখাপড়া করলে ভিক্ষা করে খেতে হয়। শিক্ষার্থী এত কম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন করে ছাত্রছাত্রী এলেও আজকে একেবারেই কম। মাদরাসাতে কেউ পড়তে চায় না বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকদের উদাসীনতায় শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানমুখী হচ্ছে না। সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেও তারা নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না এসে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর এজন্য উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের কর্তাদের দায়িত্বে অবহেলাকে দুষছেন তারা।
এ বিষয়ে মাদরাসা সুপার লুৎফর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, রেজিস্টারে যা প্রয়োজন তা মেইনটেইন করে চলি। বাস্তবতায় অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আছি। এলাকার পোলাপান হতদরিদ্র। তারা পড়াশোনা বাদ দিয়ে বেশিরভাগই যমুনায় মাছ ধরতে যায়। এ কারণে উপস্থিতি খুবই নগণ্য হয়। প্রতি ক্লাসে ৫ থেকে ১০ জন করে উপস্থিত হয় বলে তিনি স্বীকার করেন। সুপার আরও বলেন, ৫টি শ্রেণিতে মোট ১৬৬ জন শিক্ষার্থীর নাম রেজিস্টারে রয়েছে। মোট শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম ওবায়েদ জানান, মাদরাসাটিতে দীর্ঘদিন হল পরিদর্শনে যাওয়া হয়নি। তবে মাদরাসার শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেক কম হলেও শিক্ষকরা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। নদী ভাঙনের কারণে এ সমস্যা বলেও জানান তিনি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবু তাহির জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এরকম অবস্থা মেনে নেয়া হবে না। কারও দায়িত্বে অবহেলা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।