বরিশালে এসএসসির ব্যাবহারিক পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি বিষয়ের জন্য একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। এই অর্থ শিক্ষা বোর্ড, কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ, বহিরাগত পরীক্ষক (এক্সটারনাল) ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। আর নির্ধারিত অর্থ না দিলে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
তবে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যাবহারিক পরীক্ষার কেন্দ্র ফি এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময়ই নিয়ে নেওয়া হয়। পরে আর কোনো টাকা দাবি করলে তা অবৈধ। আর কেন্দ্রসচিবদের দাবি, পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থই নেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ তাঁদের বাধ্য করছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে।
সরেজমিনে গিয়ে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল জেলার চরমোনাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ব্রজমোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সিংহের কাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তালুকদার হাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাধবপাশা চন্দ্রদীপ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চন্দ্রমোহন এম আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাশাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাবিবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গারুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরকালেখান আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাউনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উদয়পুর মুসলিম আখন্দ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ শতাধিক কেন্দ্র ব্যাবহারিক পরীক্ষার বিষয়প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। এবারের এসএসসিতে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের ১৭২ কেন্দ্রের অন্যগুলোতে চুপিসারে নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাবহারিক পরীক্ষায় অর্থ।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার তদন্তে যায় বরিশাল ব্রজমোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেখানে গিয়ে অভিযোগের সত্যতাও পায়। কারণ যেসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা তোলা হয়েছে তারাই শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত টিমকে বিষয়টি বলে দিয়েছে। তাই কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তাও দিয়েছে।
মো. নিজাম উদ্দিন নামের এক শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের ১৫৬ জন পরীক্ষার্থীর কেন্দ্র হচ্ছে ব্রজমোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেখানে কেন্দ্রসচিবসহ শিক্ষকরা আমাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ব্যাবহারিক পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়ে ২০০ টাকা করে নিয়েছেন। তাঁরা পরীক্ষার আগেই বলে দিয়েছেন টাকা না দিলে পূর্ণ নম্বর দেওয়া হবে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে দিয়েছি।’
আরজু মনি নামের এক শিক্ষার্থী বলে, সে দুটি বিষয়ে ব্যাবহারিক পরীক্ষা দিয়েছে কাউনিয়া শেরেবাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা বোর্ডকে দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে দুটি বিষয়ে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। আর বলা হয়েছে, টাকা না দিলে ফেল করিয়ে দেওয়া হবে।
সরকারি জিলা স্কুল কেন্দ্রসচিব সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, তাঁর কেন্দ্রে কোনো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাবহারিকের নামে অর্থ নেওয়া হচ্ছে না। এ রকম অভিযোগ কোনো শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী দিতে পারবে না।
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে আজাদ ফারুক বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যাবহারিক পরীক্ষার কেন্দ্র ফি ফরম পূরণের সময় নেওয়া হয়েছে। এখন আর ব্যাবহারিক পরীক্ষার জন্য কোনো ফি নেওয়ার বৈধতা নেই। তিনি বলেন, ‘এর পরও কিছু কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাবহারিক পরীক্ষার নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান নিচ্ছে তারা অবৈধভাবে অর্থ আদায় করছে। আমরা প্রত্যেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে সভা করে বলে দিয়েছি ব্যাবহারিক পরীক্ষার নামে কোনো কেন্দ্র অর্থ আদায় করলে সরাসরি অভিযোগ জানাতে। তাহলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, তাঁরা দু-একটি অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নিষ্পতি করেছেন। এর পরও অভিযোগ পাওয়া গেলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।