ব্যাংক ঋণের সুদহারে চক্রবৃদ্ধি থাকবে না। এটি সরল সুদহার হবে। আসন্ন বাজেটের আগেই এটি কার্যকর হবে। সোমবার (১৮ মার্চ) ব্যাংক পরিচালকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে সংবাদিকদের এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে চক্রবৃদ্ধি হারে ঋণের সুদ আরোপ হয় না। একমাত্র বাংলাদেশেই হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক পরিচালক হতে হলে আগামী দিনে ইন্টারভিউ দিয়ে পাস করতে হবে। হিসাববিজ্ঞান ও আইনের জ্ঞান থাকতে হবে। যে কাউকে ব্যাংক পরিচালক বানানো হবে না। ব্যাংকের পরিচালক বানানোর বর্তমান পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তার অনুমতি নেব।
ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, খেলাপিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এজন্য আইন সংশোধনের কাজ চলছে।
অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণখেলাপি হওয়ার জন্য অসাধু ব্যবসায়ী যেমন দায়ী, তাকে যে সহায়তা করেছে সেই ব্যাংক কর্মকর্তাও দায়ী। তাদের উভয়ের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য বিদ্যমান আইনসহ সব ধরনের আইন প্রয়োগ করা হবে। যে কোনো উপায়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হবে। পাশাপাশি ভালো ঋণগ্রহীতাদের আরও সহায়তা করা হবে।
তিনি বলেন, ভালোদের সহায়তা করা এবং খারাপ ঋণগ্রহীতাদের শাস্তি দেয়া হবে আমাদের কাজ। তবে খারাপদের জেলা হাজতে পাঠিয়ে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে শাস্তি দেয়া হবে না। কারণ একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সে ধরনের আরও একটি গড়ে তুলতে ১০ বছর সময় লাগবে। তিনি বলেন, ১০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অনেক বড় কাজ। কিন্তু সমাজে যারা বড় বড় কথা বলে খোঁজ নিয়ে দেখেন তারা একজনকেও চাকরি দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, এসব আইন উন্নত বিশ্বে রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন কর্মসংস্থান। যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে, তারাই কর্মসংস্থানের কাজটি করছে। ফলে ভালো কাজগুলো আরও উৎসাহিত করতে হবে। তবে ব্যাংকিং খাতের ত্রুটিবিচ্যুতি ধীরে ধীরে ঠিক করা হবে। বিশ্বাসের জায়গা নিয়ে কাজ করতে হবে। সবাই মিলে কাজ করলে মানুষের আস্থা ফিরবে ব্যাংকিং খাতে।
এ সময় নিজের সমালোচনা করে বলেন, আমি বড় কথা বললেও কিছু লোকজনের চাকরি দিয়েছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাতে সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি আছে। ব্যাংকিং খাতের এ সমস্যা ৫ কিংবা ১০ বছরের নয়, দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা বাড়তে বাড়তে আজ এ পর্যায়ে এসেছে। এখন মনে হচ্ছে, এসব সমস্যা পরিষ্কার করার জন্য হাত দেয়ার প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাতে সম্পদের পরিমাণ কত, সত্যিকার ব্যালেন্স শিটে কী আছে- এসব জানতে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ অডিট কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ অডিটের মাধ্যমে ভালো ও খারাপ (অসৎ উদ্যোক্তা) ঋণগ্রহীতাকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। অর্থমন্ত্রী ইনসলভেন্সি অ্যাক্ট ও এসেট রিকভারি আইন প্রণয়ন এবং শস্যবীমা চালুর ঘোষণা দেন।