সেলিম হোসেন (আসল নাম নয়)। একটি সরকারি ব্যাংকের ‘অফিসার ক্যাশ’ পদে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছেন। যোগদানও করেছেন। চার মাস চাকরির পর আরেকটি ব্যাংকে অফিসার পদে নিয়োগের সুপারিশ পান। এই পদে নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার মধ্যেই অন্য আরেকটি সরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগের সুপারিশ পান তিনি। বেতন ও সুযোগ-সুবিধা অপেক্ষাকৃত ‘ভালো’ হওয়ায় তিনি সর্বশেষ পদে যোগ দেন। ফলে আগের দুটি পদ শূন্যই থাকে। উচ্চশিক্ষিত বেকাররা বলছে, এমন উদাহরণ দু-একটি নয়। কারো একটিই হয় না, কারো একাধিক চাকরি হচ্ছে এমন শত শত উদাহরণ রয়েছে। চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছে, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে স্বচ্ছ নিয়োগ হলেও ফল প্রকাশে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সিনিয়র থেকে জুনিয়র অফিসার পদের ফল পর্যায়ক্রমে প্রকাশ না করায় এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং এতে বেকারদের পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে ব্যাংক ও গ্রাহকদেরও।
জানা যায়, ব্যাংকে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে এ বিষয়ে জনমত গঠন করেছে। তাদের কয়েকজন একত্র হয়ে মিটিংও করেছে। পরে তারা গত ৬ ডিসেম্বর ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটিকে চিঠি দিয়েছে বলেও জানা যায়। উচ্চশিক্ষিত এই বেকাররা চিঠিতে বেকারত্ব নিরসনে সমন্বিত নিয়োগের দাবি জানায়।
শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্যানুুযায়ী, বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে প্রায় আট হাজার পদে নিয়োগের সার্কুলার চলছে। কোনোটির প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষাও হয়েছে। কোনো কোনো পদে মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ফল প্রকাশও শুরু হবে। ফল প্রকাশের আগে সুষম ও সমন্বিতভাবে ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদে ২০০ ও অফিসার (জেনারেল) পদে ২৫০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে ৭০১ জন, আট ব্যাংকে সমন্বিত সিনিয়র অফিসার পদে ১৩৭৮ জন, তিন ব্যাংকে সমন্বিত সিনিয়র অফিসার পদে ৩৬৭ জন, জনতা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার সমমানের এক্সিকিউটিভ অফিসার (ইও) পদে ৮৩৪ জন, পাঁচ ব্যাংকে সমন্বিত অফিসার পদে ২৫৭৪ জন, দুই ব্যাংকে অফিসার পদে ১৬৪ জন, সোনালী ব্যাংকে অফিসার পদে ৮২০ জন ও সমন্বিতভাবে অফিসার ‘ক্যাশ’ পদে ১৬১৩ জনকে নিয়োগ দেবে সরকার।
বেকারদের দাবির মধ্যে আছে—বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি, বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার, সিনিয়র অফিসার, অফিসার (জেনারেল), অফিসার ক্যাশ পর্যায়ক্রমে ফল প্রকাশ করা, সমগ্রেডের ফল একই সময় দেওয়া, মেধায় নিয়োগের পর অবশিষ্টদের নিয়ে পর্যায়ক্রমে প্যানেল গঠন এবং এর মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস নির্ধারণ করা এবং কেউ অন্যত্র যোগদানে পদ খালি হলে প্যানেল থেকে নিয়োগ দেওয়া।
চাকরিপ্রত্যাশী ও বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া ব্যক্তিদের অন্যতম এম হাসান বলেন, ‘সুষম নিয়োগ দিতে সিনিয়র পদগুলোর ফল আগে প্রকাশ করতে হবে। সিনিয়র পদে কারো চাকরি হলে তিনি নিচের পদে করবেন না। নিয়োগ দেওয়ার সময় পদ ফাঁকা থাকলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নিয়োগ পূর্ণ করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো আসন খালি থাকবে না। প্রত্যেকেরই একটি করে চাকরি নিশ্চিত হবে।’ তিনি আরো বলেন, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে যে নিয়োগ চলছে সেখানে মেধার মূল্যায়নের মাধ্যমে মেধাবীদের সুযোগ তৈরি হয়েছে। যাদের প্রস্তুতি ভালো তারা একাধিক ব্যাংকে নিয়োগ পাচ্ছে, আবার অপেক্ষাকৃত কম প্রস্তুতিসম্পন্নরা অল্প ব্যবধানে বাদ পড়ছে।
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছে চাকরিপ্রত্যাশীরা। প্রিলিমিনারি, তারপর লিখিত, শেষে মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় নম্বর মাত্র ২৫। তারা বলছে, স্বজনপ্রীতি কিংবা দুর্নীতির সুযোগ খুবই কম হওয়ায় মেধাবীরা নিয়োগ পাচ্ছে বেশি।
সূত্র : কালের কন্ঠ