আড়াই বছর আগেই চাকরির বয়সসীমা শেষ হয়েছিল। তখন কলেজ পরিচালনা কমিটিকে 'ম্যানেজ' করে দুই বছরের জন্য মেয়াদ বর্ধিত করেন। এক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। 'বর্ধিত' সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সিলেট নগরীর শামীমাবাদে অবস্থিত মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পদ আঁকড়ে আছেন মো. গিয়াস উদ্দিন।
২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে কলেজটিতে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন গিয়াস উদ্দিন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে তার চাকরির বয়সসীমা শেষ হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ১৫ (ক) অনুযায়ী, বয়স ৬০ বছর হলে অবসরে যেতে হবে। অবশ্য কলেজ পরিচালনা কমিটি চাইলে অধ্যক্ষের মেয়াদ বাড়াতে পারে। সেক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাগবে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন মেয়াদ বৃদ্ধি করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনপত্র দেখাতে পারেননি। এ নিয়ে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভায় প্রশ্ন তোলায় অধ্যক্ষ একজন সদস্যকে কৌশলে কমিটি থেকেই বাদ দেন। বিভিন্ন সময়ে অধ্যক্ষের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্যও বাদ পড়েন বলে একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অভিযোগ করেছেন।
এদিকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ায় কলেজের সাবেক প্রভাষক মাহবুবর রউফ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। গত ৬ জুন তিনি অভিযোগ করার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) শারমিন সুলতানা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ সময় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমা বেগম অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানালেও তিনি সহযোগিতা করেননি।
কলেজের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর গিয়াস উদ্দিন অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য আবেদন করলে তা অনুমোদন দেয়নি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে চলতি বছরের মার্চে অধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় গত ১৪ মার্চ পরিচালনা কমিটির সভাপতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় পদে থাকতে মরিয়া চেষ্টা চালান গিয়াস উদ্দিন। ওই সভায় উপস্থিত অনেকে তার বিরোধিতা করলে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে থাকার আবদার করেন গিয়াস উদ্দিন। শেষ পর্যন্ত বেশির ভাগের সদস্যের সমর্থনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে এক বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ালেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেটির অনুমোদন দেয়নি। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে কলেজে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়নি। এ জন্য জেলা প্রশাসন থেকে লিখিতভাবে অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিনকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন বলেন, একজন প্রভাষককে বরখাস্ত করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কলেজ পরিচালনা কমিটি তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন আছে।