ঈশ্বরদীর অদম্য মেধাবী তুহিন আলম আফতাব। এবার সাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। সবক'টিতেই ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। সবজি বিক্রেতা বাবার পক্ষে তার উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করা অসম্ভব। তাই পড়াশোনাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে সবগুলোতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছেন তুহিন। তবে তিনি বুয়েটে ভর্তি হতে চান। সন্তানের এই সাফল্যে তার বাবা-মা আনন্দিত ও গর্বিত হলেও অভাবের কারণে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
তুহিনদের নিজেদের কোনো জমিজমা নেই। সপরিবারে থাকেন পাকশীতে রেলের জমিতে। এর আগে পাকশী নর্থবেঙ্গল পেপার মিলস হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি।
তুহিনের বাবা সাহাবুল আলম পাকশী রেলওয়ে বাজারে সবজি বিক্রি করেন। মা লাভলী বেগম গৃহিণী। তার ছোট ভাই স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সাহাবুল আলম জানান, একদিন সবজি বিক্রি করতে না পারলে সংসার চলে না। এমন 'দিন আনি দিন খাই' অবস্থায় সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন অনেকটা অধরা হলেও তিনি হাল ছাড়েননি কখনও। ছেলে দুটি মেধাবী হওয়ায় নিজে কষ্ট করলেও তদের পড়ালেখার প্রতি যত্নশীল তিনি।
অদম্য মেধাবী তুহিন আলম জানান, আমার জন্য বাবার নিদারুণ কষ্ট ও ত্যাগকে আমি শ্রদ্ধাভরে স্যালুট জানাই। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে আমার ইচ্ছা বুয়েটে পড়ব। এখন ভর্তির সুযোগ পেয়েছি, ভালো রেজাল্ট নিয়ে একদিন প্রকৌশলী হয়ে বাবার সব কষ্ট দূর করতে চাই।
পাকশীর বাসিন্দা সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার জানান, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েও তুহিন আলম যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে, আমরা তাতে গর্বিত।
পাকশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুল ইসলাম জানান, তুহিন পাকশীর মুখ উজ্জ্বল করেছে, প্রয়োজন হলে আমরা এলাকার সব মানুষ তার পাশে থাকব। পাকশী রেলওয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা ইমরুল কায়েস পারভেজ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুহিনকে।
ইউএনও শিহাব রায়হান বলেন, সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সবগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার ঘটনা বিরল। এ অদম্য মেধাবীর পাশে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন সবসময় থাকবে। তিনি বলেন, তার বাবা ভূমিহীন হলে যাচাই-বাছাই করে তার জন্য জমির ব্যবস্থা করা হবে।