ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হবে কবে - দৈনিকশিক্ষা

ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হবে কবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নগরের দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা শামীম সরকার। তার ইচ্ছা ছিল, মেজ মেয়েকে নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করবেন। এ ইচ্ছা থেকে তিনি ওই স্কুলেরই এক ইংরেজি শিক্ষকের কোচিংয়ে মেয়েকে ভর্তি করান; কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় শামীমের মেয়ে মেধা তালিকায় আসতে পারেনি। ফলে শামীম স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক শওকত আলীর মাধ্যমে মেয়েকে স্কুলটিতে ভর্তি করানোর চেষ্টা করেন। ওই সময় শওকত আলী শামীম সরকারের কাছে তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তির জন্য এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত শামীম তার মেয়েকে স্কুলটিতে ভর্তি করাননি। তবে শামীম সরকারের মেয়ের বেশ কয়েকজন বান্ধবী ওই পরিমাণ টাকা শওকত আলীর হাতে দিয়েই স্কুলটিতে ভর্তি হন। এ ঘটনা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের। মেয়েদের ভালো স্কুল হিসেবে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম রয়েছে। তাই এ স্কুলে মেয়েদের ভর্তি করাতে অভিভাবকদের আগ্রহ থাকে বেশি। শামীম সরকারসহ অনেক অভিভাবক আক্ষেপ করে বলেন, অবৈধ এ ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হবে কবে? রোববার (৮ ডিসেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন এমএ খান মিঠু।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এভাবেই ভর্তিবাণিজ্য চলে আসছে। আগামী বছরও স্কুলটিতে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভর্তির জন্য ৫০ শিক্ষার্থীকে টার্গেট করে মাঠে নেমেছেন শওকত আলী ও অন্য শিক্ষকরা। এবার গত বছরের চেয়ে বাড়িয়ে এ টাকার অঙ্ক করা হয়েছে দুই লাখ টাকা।

এ ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে স্কুলটির ইংরেজি শিক্ষক শওকত আলীর সঙ্গে স্কুলের আরও ১০ শিক্ষক জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ চক্রটি স্কুলের পাশের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থীদের সংগ্রহ করে। শওকত আলী ও তার অনুসারীরা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে গিয়ে কোচিং করিয়ে থাকেন। এ ধরনের পাঁচটি কোচিং সেন্টারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলটিতে ভর্তি করাতে ওইসব কোচিং সেন্টারে সাড়ে তিন হাজার থেকে শুরু করে চার হাজার টাকায় ভর্তি করাচ্ছেন।

এদিকে আগামী বছর নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রভাতি ও দিবা শাখায় ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন নেয়া হচ্ছে। গত রোববার থেকে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করা যাবে অনলাইনে। দুই শাখায় ৩৬০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তবে আবেদন জমা পড়ে কয়েক হাজার। আগামী ২১ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শওকত আলী নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। ২০ বছর শিক্ষকতা জীবনে ১৮ বছরই তিনি এ স্কুলে রয়েছেন। তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন ফতুল্লার বক্তাবলী এলাকার কানাইনগর সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের কলেজ শাখার হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। স্বামী-স্ত্রী বসবাস করেন স্বামীর স্কুলের কোয়ার্টারে। স্কুলের পাশেই স্ত্রী শামীমার নামে কোচিং সেন্টার। তবে এ কোচিং সেন্টারটিকে সবাই শওকত স্যারের কোচিং বলেই চেনেন এবং জানেন। কয়েকদিন আগে কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, বিকেলের দিকে শওকত আলী নিজেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু ছাত্রীদের ভর্তি করাচ্ছন চার হাজার টাকায়। এ ছাড়া স্কুলের পাশেই উত্তরণ, পাঠশালা এবং সাইনবোর্ডবিহীন আরও তিনটি কোচিং সেন্টারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ওইসব কোচিং সেন্টারে গিয়ে নাম-পরিচয় গোপন রেখে নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে কথা বলা হলে তারা জানান, স্কুলে ভর্তি হতে হলে তাদের কোচিং সেন্টারে কোচিং করতে হবে। তাদের কোচিং সেন্টারের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকরা জড়িত রয়েছেন। এ স্কুলে ভর্তির আরেকটি কোচিং সেন্টারের সন্ধান পাওয়া গেছে নগরের আমলাপাড়া প্রেসিডেন্ট রোড এলাকায়। এসব কোচিংয়ের প্রতিটির সঙ্গে শওকত আলী জড়িত রয়েছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক শওকত আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ মিথ্যা। তার সুনাম নষ্ট করতে একটি পক্ষ এ অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, তার স্ত্রী এমপিওভুক্ত শিক্ষক নন। স্ত্রী শামীমার নামে একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। সেখানে তিনি বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে থাকেন। স্কুলের অধ্যক্ষ ফাতেমা বেগম বলেন, তিনি মাত্র কয়েকদিন আগে এ স্কুলে যোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে এখনই তিনি কোনো কিছু বলতে পারবেন না। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রেহেনা আকতার বলেন, নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তিবাণিজ্য হয়- এমন অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছরের জন্য ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষার হলে গার্ড সবকিছু জেলা প্রশাসন তদারকি করবে। স্কুলের কোনো শিক্ষককে এ ক্ষেত্রে যুক্ত করা হবে না। অর্থাৎ পরীক্ষার দিন ভোরে জেলা প্রশাসনই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি এবং ছাপার ব্যবস্থা করবে। হলে গার্ড হিসেবে থাকবেন এডিসি ও ম্যাজিস্ট্রেটরা। খাতাও দেখবেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0087530612945557