লাশের খোঁজে সবাই তখন ব্যস্ত। সার্জেন্ট তৈয়েবুর রহমান তপু তখন খুঁজছিলেন একটি মোটরসাইকেল। বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাতটার দিকে চকবাজারের চুড়িহাট্টার ধ্বংসস্তূপে দেখা যায় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত মোটরসাইকেলটি খুঁজে পেলেন তৈয়েবুর। তিনি বললেন, ‘ভাগ্যগুণে আমি গতকাল বেঁচে গেছি। ভয়াবহ এই আগুনের মধ্যে আমিও পড়েছিলাম। আমিও এখানে ওদের মতো মরে যেতে পারতাম।’ সার্জেন্ট তৈয়েবুরের সামনেই বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টার গলির রাজ্জাক ভবনে আগুন লাগে। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি ভবনে। দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে এ খবর জানানো হয়েছে।
অন্যদিনের মতো সার্জেন্ট তৈয়েবুর বুধবার রাতে সোয়ারীঘাটে দায়িত্ব পালন শেষে মোটরসাইকেলে করে চকবাজারের চুড়িহাট্টার গলি হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে আসার পর তিনি দেখেন, গলিতে ভয়াবহ যানজট। গলিতে ঠাসা মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেট কার ও ঠেলাগাড়ি। রাত সাড়ে ১০টার পর হঠাৎ বিকট আওয়াজ শুনতে পান তৈয়েবুর।
তৈয়েবুর বলছিলেন, ‘বিস্ফোরণের পর আমি যেখানে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যাই সেই জায়গাটা রাজ্জাক ভবন থেকে ২০-২২ ফুট দূরে। আমি বাইক থেকে পড়ে গিয়ে যদি বাইক উঠতে যেতাম, তাহলেই পুড়ে মরতাম।’ নিজের বাইকটি দেখিয়ে তৈয়েবুর বললেন, ‘মোটরসাইকেলটি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। আমারও একই অবস্থা হওয়ার কথা ছিল। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’
সার্জেন্ট তৈয়েবুর বলেন, ‘আমি তখন মসজিদের সামনে। বিকট আওয়াজের পর দেখি চারদিকে আগুন। পড়ে গেলাম। কীভাবে আমি যেন মসজিদের বাঁ পাশের চাপা গলি দিয়ে দৌড় দিলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি, চুড়িহাট্টা গলির রাস্তার সব গাড়ি পুড়ছে, ভবন পুড়ছে।’
আগুন থেকে বেঁচে যাওয়ার পরই তৈয়েবুর বাসায় ফেরেননি। রাত তিনটা পর্যন্ত চুড়িহাট্টা গলিতে দাঁড়িয়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখেছেন।
তৈয়েবুর বললেন, ‘বিকট আওয়াজের ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে চুড়িহাট্টার গলিতে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। আমি যেখানে ছিলাম, সেখান থেকে ১০ হাত দূরে থাকলে দৌড়ে পার পেতাম না। সঙ্গে সঙ্গে আগুনে পুড়ে আমি ওদের মতো লাশ হয়ে পড়ে থাকতাম।’