ভারতের নাগরিকত্ব আইন : ক্ষোভের আগুন এবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে - দৈনিকশিক্ষা

ভারতের নাগরিকত্ব আইন : ক্ষোভের আগুন এবার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সোমবার পঞ্চম দিনের মতো উত্তাল ছিল ভারত। এদিন দেশটির কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভের আগুন। রোববার রাতে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচার লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ ঘটনার পরই ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। হাজার হাজার শিক্ষার্থী নেমে পড়েন রাস্তায়। ক্যম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, যানবাহন-সরকারি ভবনে আগুন আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে সহিংস রূপ নেয় দিল্লি, মুম্বাই, হায়দরাবাদ ও কলকাতাসহ ভারতের বড় বড় শহরগুলো। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী, আটক করা হয় অন্তত ৫০ জনকে।

এদিন কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। সেখানে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘আমার লাশের ওপর দিয়ে এ আইন কার্যকর করতে হবে।’ বিতর্কিত এ আইনের বিরুদ্ধে অনশনে বসেছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী।

এদিকে চলমান ইস্যুতে দীর্ঘ সময় পর নীরবতা ভাঙলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক টুইটে আন্দোলনকারীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সহিংস বিক্ষোভ দুর্ভাগ্যজনক।’ খবর পিটিআই, এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

খবরে বলা হয়, রোববার রাতে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার লোক প্রতিবাদে অংশ নেয়। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করলে একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় প্রতিবাদকারীরা বাসে, গাড়িতে ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বলে দাবি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 
রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানান, প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে তারা পিছু হটে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে পাথর ছুড়তে শুরু করলে পুলিশ ক্যাম্পাসে চড়াও হয়ে নির্বিচার লাঠিপেটা করে।

স্থানীয় দুটি হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের পর শতাধিক আহতকে তাদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাজমা আক্তার পুলিশি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

ছাত্ররা অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই জোর করে ঢুকে পড়ে পুলিশ, চালানো হয় কাঁদানে গ্যাস এবং লাইব্রেরি ও মসজিদ থেকে টেনে বের করে এনে হামলা করা হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। পুলিশ শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি করে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে ভারতজুড়ে বহু শহরে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। একই ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর জের ধরে ক্যাম্পাস ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। 
লখনৌ থেকে আসা লাইভ ফুটেজে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। টিভি ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ ছাত্রদের ওপর লাঠিচার্জ করছে। মর্যাদাপূর্ণ ইন্ডিয়ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। সংহতি প্রকাশ করে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা এসেছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও। বড় বিক্ষোভ হয়েছে হায়দরাবাদেও, যেখানে দিল্লিতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন মৌলানা আজাদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মোমবাতি হাতে মিছিল করেছেন মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদে শামিল হয়েছে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও।

তামিলনাড়ুতে আইআইটি মাদরাসসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ হয়েছে। চেন্নাই, মাদুরাই এবং কোয়েম্বাটোর রেলস্টেশনে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। চেন্নাইয়ের লয়োলা কলেজে জামিয়া মিলিয়া কাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান শিক্ষার্থীরা।

বেনারস ও কলকাতার মতো আরও অনেক শহরে সংহতি প্রকাশ করে মিছিল হয়েছে। বেনারসে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়েও শুরু হয়েছে প্রতিবাদ সমাবেশ। শিক্ষার্থীরা বলেন, গতকাল জামিয়ায় যা হল, তাকে দমনপীড়ন বললে কম বলা হয়। এটা পরিষ্কার গুণ্ডামি। পুলিশ নিজেরাই বাইক ভাঙছে, তারপর ছাত্রদের মারছে, এমন ভিডিও ছেয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

সোমবার পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ করছে রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগে জনতার সঙ্গে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। এদিন মমতার নেতৃত্বে বিশাল মিছিল রেড রোড থেকে জোড়াসাঁকো যায়। সেখানে সমাবেশে মমতা বলেন, আমার মৃতদেহের ওপর দিয়ে এই আইন প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, কেউ দয়া করে ট্রেনে আগুন জ্বালাবেন না। অধিকাংশ ট্রেন ভারত সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, বিজেপির টাকাতেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বলছে। আমরা হিংসা সমর্থন করি না। আমার কাছে প্রমাণ আছে, কেউ কেউ বিজেপির টাকা খেয়ে এদিক-ওদিক আগুন জ্বালাচ্ছে।

দেশটির প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে মোদি সরকার সমাজে বিভাজন তৈরি করছে। এদিকে টুইটে বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং গভীর পীড়াদায়ক। বিতর্ক, আলোচনা এবং মতভেদ গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ। কিন্তু সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনে বিশৃঙ্খলা তৈরি আমাদের আইনের পরিপন্থি। এদিকে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে অনশনে বসেছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা পিনারাই বিজয়ন। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি দলীয় নেতা ও বেশকিছু ‘অ-বিজেপি’ জাতীয় দলের নেতা তিরুবনন্তপুরমের পালায়মের শহীদ মিনারে অনশনে বসেন।

পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির হুশিয়ারি বিজেপির : বিক্ষোভের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আইনটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও সহিংসতার জন্য মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল সরকারকে দায়ী করে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি ছাড়া কেন্দ্র সরকারের অন্য কোনো উপায় থাকবে না। রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকেও আমরা এখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পক্ষে।

জানা গেছে, নতুন আইনে বাংলাদেশসহ ভারতের প্রতিবেশী তিনটি দেশ থেকে আসা অমুসলিম সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। তবে যারা বিক্ষোভ করছে তারা প্রতিবাদের কারণ হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছেন। কিছু সমালোচক বলছেন, আইনটি মুসলিমবিরোধী, আবার সীমান্ত অঞ্চলে অনেকে এ আইনের কারণে বড় ধরনের অভিবাসী ঢলের আশঙ্কা করছেন। বেশ কয়েকজন আইনজীবী এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য সুপ্রিমকোর্টের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বলেছেন, শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ বন্ধ না করা পর্যন্ত তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004025936126709