করোনা মহামারির এমন পরিস্থিতে বেতন না দিয়েই ফ্যাক্টরি বন্ধ ঘোষণা করায় বাক-বিতণ্ডা ও এক পর্যায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শ্রমিকরা। সোমবার (৬ এপ্রিল) সকালে ময়মনসিংহের ভালুকার জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। এ সময় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে গুলি ছুড়লে কয়েকজন আহত হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকালে উপজেলার মাস্টারবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ক্রাউন ওয়্যারস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ কারখানা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে। এসময় শ্রমিকরা মার্চ মাসের বেতন দাবি করলে ১৩ এপ্রিল প্রদানের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। শ্রমিকরা না মানায় তোপের মুখে তারিখ পরিবর্তন করে ১০ এপ্রিল নির্ধারণ কওে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ। এ সিদ্ধান্তও মেনে নেয়নি শ্রমিকরা। তারা ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে এবং বেতন পরিশোধপূর্বক ছুটি ঘোষণার দাবিতে অনড় থাকে।
বেতন ভাতার দাবি ছাড়াও শ্রমিকদের অভিযোগ ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যখন তখন শ্রমিক ছাঁটাই করে আসছে ক্রাউন ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ। এ ছাঁটাই বন্ধ করার দাবিও তুলে ধরা হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দাবি আদায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশকে খবর দেয় ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ। শিল্প পুলিশ ও ভালুকা মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নেয়ায় যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
এসময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পাল্টা ইটপাটকেল ছুঁড়ে জবাব দেয়। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ শর্টগান থেকে ফাঁকা গুলিবর্ষণ শুরু করলে শ্রমিকরা পিছু হটে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনার পর ফ্যাক্টরি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে এক দল যুবক লাঠি হাতে শ্রমিকদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। পুলিশের পাশাপাশি অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলেও তাদের কাউকে আটক কিংবা কাজে বাধা দেয়া হয়নি। তাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি গণমাধ্যম কর্মীরাও। ছবি তুলতে চাইলে বাঁধা দেয়াসহ ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায় তারা। শ্রমিকদের অভিযোগ ওরা ফ্যাক্টরীর ‘ভাড়টিয়া লাঠিয়াল বাহিনী’। প্রতিনিয়ত এদেরকে দিয়েই শ্রমিকদের উপর নিপীড়ন ও আগ্রাসন চালায় কারখানা কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশের এএসপি নুরনবী গনমাধ্যমকে জানায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ৩০টি টিয়ারশেল ও শর্ট গান থেকে ৩০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে কয়জন আহত হয়েছে তা জানা যায়নি। লঙ্কাকাণ্ডের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও আগামী ৮ এপ্রিল বেতন পরিশোধ করবে বলে পুলিশের সঙ্গে সিদ্ধান্ত দেয়।