ভালো ছাত্র নয়, ভালো মানুষ হোন - দৈনিকশিক্ষা

ভালো ছাত্র নয়, ভালো মানুষ হোন

আয়ান নুহা আলামিন |

ছাত্রজীবনের পাশাপাশি থেকেও আজ শিক্ষকতা পেশার একটি বছর পূর্ণ হলো। বছরের এই দিনটিতেই সবচেয়ে জুনিয়র টিচার হিসেবে যোগদান করে আজ অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। মহান শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত থেকে এই একটি বছর অনেক কিছু শিখেছি ও দেখেছি। দেখেছি বাচ্চাদের মায়ের অদ্ভুত কিছু আচরণ ও মনোভাব। এখানে একটা ছাত্রের মেধার চেয়ে ভালো রেজাল্টকেই বেশি মূল্যায়ন করা হয়। যেভাবেই হোক তোমাকে প্রথম হতেই হবে, এরকম একটি অহংকারী প্রতিযোগিতায় বাচ্চাদের ঠেলে দিচ্ছে অভিভাবকরাই। চলমান ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে পরীক্ষার ধুম চলছে। বছরের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অভিভাবকরা খুব উদগ্রীব থাকে ছেলে-মেয়েদের ফাইনাল পরীক্ষা, তারপর রেজাল্ট, রেজাল্টের পর নতুন শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে। আর এ সময়ে তারা এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগেন।

সারা বছরের অন্য দিনগুলোতে বাচ্চাদের পড়াশুনার কোনো খোঁজ-খবর না নিলেও এই সময়টাতে তারা খুব মরিয়া হয়ে পরীক্ষার হলে ভিড় জমায়। অথচ এই গাইড লাইনটা বাচ্চাদের বছরের শুরুতে দেওয়া হলে হয়তো আজ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অভিভাবকদের এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হতো না। আজ এক নার্সারি ক্লাসের সেকেন্ড বয়-এর মাতার আচরণে খুবই ব্যথিত হলাম। কথাটা একটু পরিষ্কার করেই বলি, ‘নার্সারি শ্রেণিতে ‘ধর্ম’ বিষয়ে ৫০ নাম্বারের মৌখিক পরীক্ষা ছিল। আমি পরীক্ষা শুরুর প্রায় ৩০-৩৫ মিনিট পরে এসে স্কুলে পৌঁছাই। লাইব্রেরিতে ঢোকার আগেই এক অভিভাবক অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। ভদ্র মহিলার বাচ্চা ৫০ থেকে ৪৯ কেন পেল?

ওর অভিযোগ ছিল পনেরোটি প্রশ্ন থেকে যেকোনো দশটি প্রশ্নের উত্তর বলা। বাচ্চা দশটি থেকে একটি ভুল করেছে, আরো তো পাঁচটি প্রশ্ন অতিরিক্ত ছিল। ওখান থেকে কেন নেওয়া হয়নি? এটার জন্য ভদ্র মহিলা ডিউটি শিক্ষককে যাচ্ছেতাই বলেছেন। পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বাচ্চাটিকে আবার স্কুলে নিয়ে এসেছে।

ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আমি পরীক্ষার হল রুমটিতে ঢুকলাম। প্রথমে প্রশ্নটি হাতে নিতেই দেখলাম ৫ নং প্রশ্নে পাঁচটি প্রশ্ন দেওয়া এবং পাঁচটি প্রশ্নেরই উত্তর বলতে হবে। কোনো প্রশ্ন বাবদ দেওয়ার অপশন নেই। একটি ভুলের জন্য এক নাম্বার কাটা হবে। তখন ভদ্র মহিলা মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন এবং বলে গেলেন বাচ্চাকে আর এই স্কুলে পড়াবে না। বর্তমান অভিভাবকদের এমন আরো অসংখ্য নীতিহীন আচরণ আমি শিক্ষকতার পেশায় থেকে দেখেছি এবং দেখছি। ছোট্ট ছোট্ট কোমলমতি শিক্ষার্থী বাচ্চাদের পরীক্ষার হলে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে মায়েদের উত্তর বলে দেওয়া, চিরকুটে উত্তর লিখে দেওয়া, বাচ্চা ফার্স্ট, সেকেন্ড না হলে অন্যের বাচ্চার সঙ্গে তুলনা করে মারধর করা, এমন অসংখ্য অদ্ভুত সব অসুস্থ আচরণ আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। আজকাল বাচ্চাদের মাঝে না যতটুকু প্রতিযোগিতা থাকে, তার চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা থাকে অভিভাবকদের। কচি কচি মনগুলোকে খুব অল্প বয়স থেকেই এক অসুস্থ প্রতিহিংসার প্রতিযোগিতায় আর হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমাদের সমাজের অভিভাবকরাই। এসব বাচ্চারাই বড় হয়ে নিজ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে বিভিন্ন হতাশায় ভোগে।

বর্তমানে শৈশব, প্লে থেকে ফাইভ পর্যন্ত যে বাচ্চাগুলো ১ থেকে ২ রোল হওয়ার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে, তারা হয়তো এটা এখনো স্বপ্নেও ভাবে না যে, একটা সময় আসবে যখন তাদের এই ১ কিংবা ২ রোল কোনো কাজে আসবে না বরং এটা তাদের পরবর্তী সময়ের কোনো ব্যর্থতার ফলস্বরূপ ‘হতাশা’ নামক শব্দটির সঙ্গে খুব ভালোভাবে পরিচয় করিয়ে দিবে।

তাই মনুষ্যত্ব অর্জনই হোক শিক্ষার উদ্দেশ্য। ভালো ছাত্র নয়, ভালো রেজাল্ট নয় বরং ভালো মানুষ হওয়াটাই হোক আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।

 

লেখক:শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006087064743042