ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যিক ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি এলেই মনে পড়ে যায় কত রক্ত, ত্যাগ-তিতিক্ষা আর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে হয়েছে। আপন মর্যাদায় এই মহিমান্বিত মাতৃভাষাকে গৌরবান্বিত করতে দেশপ্রেমিক বাঙালীরা কুণ্ঠিত হয়নি। সর্বোপরি বিশ্বসভায় আন্তর্জাতিক সম্মানে ২১ ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতিও পেয়েছে। ভাষা, সংস্কৃতি আর চিরায়ত মূল্যবোধকে প্রতিদিনের যাপিত জীবনে যে মাত্রায় উজ্জীবিত করা হয়েছে সে সংগ্রাম ও দুর্বিষহ পথযাত্রা নির্বিঘ্ন এবং নিষ্কণ্টকও ছিল না।
যুগ যুগ ধরে আবহমান সম্পদশালী বাংলা অবিভক্ত ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও শাসকবর্গের মূল কেন্দ্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানের কারণে দিল্লীর রাজন্যবর্গের একাধিপত্যকে সেভাবে আমলে নিতে হয়নি। অনেক ঐতিহাসিক এমন বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করে এই ধারণাও ব্যক্ত করেন, নির্দিষ্ট খাজনা প্রদানের বিনিময়ে দিল্লীর বশ্যতা স্বীকার করলেও অনেকটা স্বাধীনভাবে বাংলার নবাবরা তাদের নিজস্বতা বজায় রাখতেন।
সেখানে প্রজাপালন থেকে শুরু করে সৈন্য সামন্ত তৈরি করা, রাজকার্য পরিচালনা করা, এমনকি অভ্যন্তরীণ কলহ, বিবাদ, সংঘর্ষ করাও হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজেরা মোকাবেলা করতেন। বৈষয়িক সম্পদ এবং অফুরন্ত প্রাকৃতিক প্রাচুর্যের মধ্যে চিরায়ত বাংলার সাংস্কৃতিক বৈভবও ছিল অবিভক্ত ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক অগ্রগামী। আর্থ-সামাজিক, নৈসর্গিক এবং ঐতিহ্যিক ভাব সম্পদে সমৃদ্ধ বাংলার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও ছিল ভিন্ন মাত্রার। বিভিন্ন রাজবংশের উত্থান-পতনের মধ্যেও অতি সাধারণ জনগোষ্ঠীর প্রতিদিনের জীবনে তার ছাপ লাগেনি।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রাম সম্প্রদায় এই বিশাল সামাজিক অচলায়তনের নিয়ামক শক্তি। আর কঠোর বর্ণাশ্রম প্রথা- সেই অসাড় সামাজিক অবয়বকে আরও স্থবিরতার আবরণে ঢেকে দেয়। অতি সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের কর্মপ্রবাহ ছাড়া অন্য কোন দিকে নজর দেয়ারও সুযোগ ছিল না। কৃষি উৎপাদন, কুলবৃত্তি, ধর্মীয় উপাসনা, জমিদার, রাজা, নবাবদের সর্বময় কর্তৃত্বে গণমানুষ ছিলো নিরীহ, নির্বিরোধী এবং শুধু উৎপাদক শ্রেণীর ভূমিকায়। আর এই সমৃদ্ধ গ্রামবাংলা বাঙালীর মন ও মনন চেতনায় যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখে সেটাই চিরায়ত ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির বলয়ের এক অকৃত্রিম শৌর্য।
বাংলা মূলত একচ্ছত্র শাসকের অধীনতায় ছিলো না বলেই বিভিন্ন পণ্ডিত্যের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়। বোধহয় সে কারণেই বাংলা যেখানে আপন ঐশ্বর্যে মহীয়ান সেখানে তার কর্তৃত্ব অনুপমই শুধু নয়, অবিভক্ত ভারতেও এক অজেয়, অপ্রতিহত শক্তি। শুধু কি তাই? আধ্যাত্মবাদের দেশ বলে খ্যাত ভারতীয় উপমহাদেশের বর্ণাশ্রম প্রথা এবং মৌলবাদের নিগূঢ় কাঠিন্য থেকেও অনেকটাই মুক্ত। হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদ কিংবা মুসলিম মৌলবাদ তার শক্ত অবস্থান নিয়ে সেভাবে কখনও বাংলায় আসন গাড়তে পারেনি। নদীমাতৃক বাংলার উর্বর পলিমাটি অবিভক্ত বাংলার সামগ্রিক অবয়বে যে নমনীয়তা আর কোমলতার স্পর্শ দেয় তাও বাংলাদেশকে আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল করে।
আর এই ঐতিহ্য সমৃদ্ধ বাংলা উনিশ শতকের নতুন দিগন্তের অনেক সম্ভাবনাকে ধারণ করতে থাকে। সেই যুগসন্ধিক্ষণে যে বৈপ্লবিক জোয়ার অবারিত হয় সেই মাত্রায়ও বাংলা তার নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতিতে অম্লান থাকে। উনিশ শতকের নবযুগের বাহন ইউরোপিয় সভ্যতা বাঙালীর মেধা ও মননে যে অবিস্মরণীয় বৈপ্লবিক যুগের সঞ্চার করে, তারই যথার্থ প্রতিনিধি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ব্যঙ্গ রসাত্মক কবি ঈশ্বর গুপ্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং আরও অনেক বেশি করে এই নতুন সময়ের কাণ্ডারির ভূমিকায় অবগাহন করলেন ঐতিহ্যিক ঠাকুর পরিবারের কীর্তিমান উত্তরসূরি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
উনিশ শতকের এমন সব যুগস্রষ্টা প্রাণপুরুষ শুধু যে বাঙালী সমাজকে নতুন পথের সন্ধান দিলেন তা নয়, তার চেয়েও বেশি বাংলা ভাষাকে দিলেন তার এতদিন চলে আসা ঐতিহ্যিক মর্যাদার ব্যাপক সম্প্রসারণের নতুন মাত্রা। রাজা রামমোহন করলেন বেদ উপনিষদের প্রথম বাংলা অনুবাদ। দ্বারকানাথ হলেন বাঙালী শিল্পোদ্যোক্তাদের পথিকৃৎ। বিদ্যাসাগর মনোযোগ দিলেন দুর্ভেদ্য বাংলা ভাষার সহজগামিতা প্রণয়ন করে সর্বসাধাণের হাতের নাগালে নিয়ে আসতে।
আর সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ভারতীয় প্রথম স্নাতক ডিগ্রীধারী এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাংলার সৃজনশীল ভাণ্ডারকে নতুন মাত্রায় ভরিয়েই শুধু দিলেন না, আজ অবধি ঔপন্যাসিক বঙ্কিম অপ্রতিহত ও অপরাজেয়। আরও বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষাকে নিয়ে গেলেন আন্তর্জাতিক সীমানায়। শুধু নোবেলই জয় করলেন না, বিশ্ব দরবারে বাংলা ও বাঙালীকে চিনিয়েও দিলেন। আর কুষ্টিয়ার লালন শাহ যা করলেন তার দ্যুতি আজও বাংলার ঘরে ঘরে উদ্দীপ্ত চেতনায় আলো বিকিরণ করছে।
নবজাগরণের ছোঁয়া না পেয়েও এই কীর্তিমান বাউল সাধক যে মাত্রায় বাংলা ভাষা এবং তার চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বাণী আর সুরের অনবিচ্ছেদ মিলনে ভাব জগতের যে মাহাত্ম্য ছড়ালেন, সেখানে আজও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আর কাজী নজরুল ইসলাম জাত, ধর্ম, বর্ণ, বিত্ত নির্বিশেষে সর্ব বাঙালীর যে ঐক্যতান বাজিয়ে দিলেন সেখানেও তিনি অনন্য কৃতী পুরুষ। আবহমান বাংলার এসব অগ্রনায়ক বাংলা ভাষা ও বাঙালীর সার্বিক পরিমন্ডলে যে একাত্মতার ব্যঞ্জনা ঝঙ্কৃত করলেন, সেখানেই মাতৃভাষা তার মহিমান্বিত বৈভবকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
১৯০৫ সালে বঙ্গ ব্যবচ্ছেদ কিংবা ১৯৪৭ সালে অযাচিত দেশ কর্তন বাংলা ও বাঙালীর জীবনে যে অশুভ পদচারণা শুরু হয় সেই কঠোর সামাজিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে দেশপ্রেমিক বাঙালীর অনেক লড়াই করতে হয়েছে। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রাজপথ রাঙিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেনি- মাতৃভাষার সুরক্ষায় বছরের পর বছর সংগ্রামী বৈতরণী পার করতে জীবনবাজি রেখেছে। প্রতিপক্ষ অপশক্তির অপঘাতে নিঃশেষে জীবনও বিলিয়ে দিয়েছে। সবই করতে হয়েছে আপন ঐতিহ্যিক সাংস্কৃতিক বলয়কে তার নিজের ঠিকানায় সমুন্নত রাখতে।
বাংলা ভাষা তার নিজস্ব বৈভব হারাতে বসে ’৪৭-এর দেশ বিভাগের চরম দুঃসময়ে। ঔপনিবেশিক শাসনের করাল গ্রাসে নিপতিত বাংলার কৃষি-অর্থনীতির যে বিপন্ন অবস্থা, সেই সমূহ বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আগেই পাকিস্তানের নয়া উপনিবেশের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয় বাংলাদেশ। পূর্ব বাংলার সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে হতদরিদ্র নিঃস্ব জনগোষ্ঠীর মানসিক দীনতায় মাতৃভাষার মূল্য গৌণ হয়ে যাচ্ছিল।
সুতরাং নিজের মায়ের মুখের ভাষা নিয়ে তাদের সচেতন মনোবৃত্তি ছিল একেবারে শূন্যের কোঠায়। উর্দুভাষী বাঙালী নবাবরাও বাংলা ভাষাকে কখনও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনেননি। ফলে নবগঠিত পাকিস্তান সরকার উর্দু এবং ইংরেজিকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের বাহন হিসেবে ভাবতে থাকে। এমন অনাকাঙ্খিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন বহু ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আবদুল হক এবং সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী।
গোটা পাকিস্তানে ভাষার দিক থেকে বাঙালীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সঙ্গত কারণে ড. মোঃ শহীদুল্লাহ দাবি তুললেন- বাঙালীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় দেশের সরকারী ভাষা হওয়া উচিত বাংলা। তবে উর্দুকে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। শহীদুল্লাহ কিন্তু নিজেকে মুসলমান এবং পাকিস্তানী ভাবলেও বাঙালী হিসেবেও অকুণ্ঠচিত্তে পরিচয় দিতেন। সৈয়দ মুজতবা আলী দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বললেন- অনেক দেশে একাধিক রাষ্ট্রভাষা চালুর ব্যবস্থা বিদ্যমান। বহুভাষাবিদ ড. মোঃ শহীদুল্লাহ সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রচলনের ব্যাপারে তাঁর সক্রিয়, আপোসহীন ভূমিকা পাকিস্তান সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই অব্যাহত ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের কর্তৃক সংগঠিত ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় নিয়ে যেতে তাদের উদ্দীপ্ত মনোবলকে লড়াইয়ের অভিযাত্রায় শাণিত করে। তারই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায় সেই ১৯৪৮ সালের গোড়া থেকেই। এমনই সংগ্রামী অভিগমনের যুগান্তকারী পর্বে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ আসেন ঢাকায় মার্চ মাসে। আন্দোলনের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় প্রতিবাদ যখন তুঙ্গে তখনই ঘোষণা আসে জিন্নাহর কাছ থেকে। তার আগে ১১ মার্চ ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের এক স্বৈরাচারী অবদমন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদসহ কিছু ছাত্র নেত্রাকে পাকিস্তানী পুলিশ আটক করে। প্রতিবাদে ছাত্ররা ১২ থেকে ১৫ মার্চ সর্বাত্মক ধর্মঘট পালন করে। অবশ্য ছাত্ররা আশা করেছিল জিন্নাহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে ছাত্রদের দাবি বিবেচনায় রাখবেন। কিন্তু তিনি তা না করে আন্দোলনরত সংগ্রাম পরিষদকে চরম হতাশায় হতভম্ব করে দিলেন। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে উপস্থিত জনতার সামনে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর কঠিন আর স্পষ্ট অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন- উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
জনাকীর্ণ এই সভায় তাঁর বক্তব্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দৃঢ়তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুও বলে ফেললেন- না, বাংলাও হবে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ছাত্রদের রাষ্ট্র ভাষার ব্যাপারে আশ্বস্ত করলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ তিনি নেননি। কারণটা গভীরে এবং শিকড়ে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই ছিলেন উর্দুভাষী। তখন বাঙালী-অবাঙালী মুসলমানদের সাংস্কৃতিক বিরোধ, দ্বন্দ্ব, আর্থ-সামাজিক কাঠামোর মধ্যে লালন করাই হতো না শুধু, জিইয়ে রেখে প্রয়োজনে তাকে সংহত করতেও কুণ্ঠিত হয়নি প্রতিক্রিয়াশীল শাসক শক্তি।
আর এর প্রত্যক্ষ আঘাত আসে কোন নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক আঙ্গিনার ওপরই নয়, পুরো আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বলয়েও। ফলে পারিপার্শ্বিক অবরুদ্ধ, নির্মম সামাজিক বেষ্টনীর ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা এসে বর্তায় সেই সময়ের উদীয়মান ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক সর্বস্তরের মানুষের ওপর। যার অবশ্যম্ভাবী সংগ্রামী অভিযাত্রায় ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক লড়াই অনেকের অংশগ্রহণে ভাষা আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। আর এই ঐতিহ্যমন্ডিত ভাষা সংগ্রাম তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীর স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনালগ্ন। ইতোমধ্যে সাহিত্যিক বলয়ে শুরু হয়ে যায় বাংলা ভাষার ওপর স্বনামখ্যাত কিছু বাঙালী সৃজন ব্যক্তিত্বের বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
তারই অবশ্যম্ভাবী প্রকাশ বাংলা কবিতায় অনাবশ্যক, অপ্রয়োজনীয় আরবী, ফার্সী এবং উর্দু ভাষার অনুপ্রবেশ। শুধু তাই নয়, নজরুলের কিছু বাংলা শব্দ চয়নকে আরবী, ফার্সীতে রূপান্তরিত করা হয়। বাংলা শব্দের ব্যবহারে টানাহেঁচড়ার এমন বিপন্ন পরিবেশে ড. মোঃ শহীদুল্লাহ আবারও বলিষ্ঠ কণ্ঠে মাতৃভাষার পক্ষে তার অনমনীয় দৃঢ়তা প্রকাশ করেন। বাংলা ভাষা প্রচলন এবং চর্চার ওপর সমধিক গুরুত্ব দিয়ে আরবী হরফে বাংলা লেখা কিংবা ইংরেজি শব্দে বাংলা লেখার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
বাংলা ভাষার জন্য লড়াই সংগ্রামের ঐতিহাসিক পথযাত্রায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অনিবার্য পরিণতি সময়, যুগ এবং ঘটনা পরম্পরায় নির্ধারণ হয়ে যায়। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন উর্দুকেই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষার ঘোষণা দেন।
এর পর পরই ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়া থেকেই শুরু হয়ে যায় ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদের’ পক্ষ থেকে বিক্ষোভ, সমাবেশ, মিছিল, ধর্মঘট। এই দুঃসাহসিক সংগ্রামী অভিযাত্রা শুধু রাজধানীতেই কেন্দ্রীভূত ছিল না, তৎকালীন সারা পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলেও তা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। আর এরই অনিবার্য পরিণতি রাষ্ট্রভাষা ও মাতৃভাষা বাংলার অমল ধবল হিরন্ময় স্বীকৃতি।
লেখক : সাংবাদিক
সূত্র: জনকন্ঠ