রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ানের (র্যাব) মহাপরিচালক এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে চিঠি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষসহ ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এছাড়া এ তিন শিক্ষকের এমপিও বন্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং অভিযুক্তদের বরখাস্তসহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকেও পৃথক দুটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বুধবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শাখা প্রধান এবং এক শ্রেণিশিক্ষককে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। এই তিন শিক্ষক হলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখা প্রধান জিন্নাত আখতার ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা।
বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের জানান, কমিটি তাদের (তিন শিক্ষক) প্ররোচক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইতিমধ্যে ওই তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করতে পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের কমিটি। এই তিন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া নির্দেশনা না মানলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গভর্নিং বডি বাতিল করবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট এই ঘটনায় কমিটি গঠনের যে নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুয়ায়ী একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি আজকের মধ্যেই করা হবে। সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে এ ধরণের ঘটনা না ঘটে এবং শিক্ষার্থীরা যাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মকর্তাকে হুশিয়ার করে এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণের আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। এসময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অধ্যক্ষ নিয়োগ না দেয়া, নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি, অনুমোদন ছাড়া শাখা খোলাসহ আরও নানা অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত সোমবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক মো. ইউসুফকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
গত সোমবার অরিত্রিদের শান্তিনগরের বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা অরিত্রিকে মৃত ঘোষণা করেন। শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা এই ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করেন। আজও সকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেইলি রোডের শাখার প্রধান ফটকে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েকশ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অনেক অভিভাবক।
এদিকে মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে অধ্যক্ষ-শিক্ষকসহ তিনজনকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা করেন অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারী। তাঁরা হলেন কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিন্নাত আখতার ও শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনা।
অরিত্রির বাবা দিলীপ অধিকারীর অভিযোগ, রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রির কাছে মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রিকে সোমবার তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সোমবার স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাঁদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে দেওয়া ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রি দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রি তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।