ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার পর ওই স্কুলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে গেলে তাকে দেখে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষামন্ত্রীর সামনে ‘বিচার চাই, বিচার চাই’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে।
স্কুলে যাওয়ার আগে মন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণলায় থেকে তিন সদস্যের একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে তাৎক্ষণিকভাবে ভিকারুননিসা নুন স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অধ্যক্ষ, উপস্থিত শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রীদের সাথে কথা বলেন। তিনি শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষার হল পরিদর্শন করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী কলেজ প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি মেধাবী ছাত্রী অরিত্রির অনাকাঙ্খিত মৃত্যুকে বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক উল্লেখ করে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিকক সমবেদনা জানান।
মন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মত পথ বেছে নেয়… যে ঘটনাগুলো আমরা শুনেছি, এর পেছনের কথা শুনছি। ঘটনার পেছনে বা ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক মানসিক বা শারীরিকভাবে কোন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করতে পারেন না। এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য। তিনি বলেন, আজ প্রথিতযশা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি, তাদের নানা ক্ষোভের কথা শুনেছি। তদন্ত কমিটি সব বিষয় বিবেচনায় নেবে আশা করি। তিনি সবাইকে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা এবং ধৈর্য্য ধারনের আহ্বান জানান।
এসময় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত সচিব ড. অরুনা বিশ্বাস, অতিরিক্ত সচিব ড. মো. মাহামুদ-উল-হক ও নাজমুল হক খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, কারিগরি ও মাদ্রসা শিক্ষা বিভাগের উপসচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকবৃন্দ।
সোমবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শান্তিনগরের নিজ বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল (ঢামেক) কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: ভিকারুননিসায় ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিটি
অরিত্রির আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে গতকাল তারা বাবা দিলীপ অধিকারী বলেছিলেন, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। গতকাল রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। সোমবার স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমার মেয়ের সামনে আমাকে অনেক অপমান করে। এই অপমান এবং পরীক্ষা আর দিতে না পারার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বাসায় ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেয় অরিত্রি।