আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি ঠিক হয়েছে যে দেশের ভাষা আন্দোলনের কারণে, সেই বাংলাদেশে সাইনবোর্ডে বাংলার এখনো বহুল প্রচলন শুরু হয়নি। আদেশ-নির্দেশ কত কিছুই না করতে হচ্ছে সাইনবোর্ডে বাংলা লেখার জন্য। অনেকে মানছে, অনেকে মানছে না। এখনো জ্বলজ্বলে আলোতে জ্বলছে নানা ঢঙে ইংরেজি লেখনীর সাইনবোর্ড। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তৌফিক মারুফ।
তবে একেবারেই ভিন্নচিত্র দেখা যায় দেশের বাইরে পা রাখলে। চোখে পড়ে বাংলায় লেখা উজ্জ্বল সব সাইনবোর্ড। বিশেষ করে বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিংবা অন্য বাঙালিদের কোনো রেস্তোরাঁ বা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলা থাকে বেশ বড় বড় অক্ষরে। সঙ্গে হয়তো অন্য ভাষাও থাকে। আর ওই টুকুন বাংলার জন্য প্রবাসী বাঙালিরা কিংবা স্বল্প সময়ের কাজের জন্য, বেড়াতে কিংবা চিকিৎসার জন্য যাওয়া বাংলাদেশিরা কত না ব্যাকুল থাকে। বাংলা রেস্তোরাঁর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে তারা।
যেমনটা দেখা যায় প্রতিবেশী ভারতের দিল্লি-মুম্বাই-চেন্নাই কিংবা নেপাল-ভুটান-থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ায়। আবার দূর ইউরোপ আমেরিকায়ও আছে এই ধারা। যুক্তরাজ্যে-যুক্তরাষ্ট্রে তো কোনো কোনো এলাকায় বাংলাই যেন সব।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল কিংবা অ্যাম্বাসাডর হোটেলের আশপাশে পর পর চোখে পড়ে অনেক বাঙালির রেস্তোরাঁ। সুইজারল্যান্ডের জুরিখে বসবাসকারী প্রবাসী আতিকুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘এখানে মাঝেমধ্যেই বাংলায় লেখা সাইনবোর্ড-স্টিকার চোখে পড়ে, যা দেখলেই অন্য রকম এক অনুভূতি হয়। এটা বলে বোঝাতে পারব না।’
ভিনদেশে কেন বাংলায় রেস্তোরাঁর নাম লিখেছেন জানতে চাইলে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদের পাশে মনিকা কিচেনসের মালিক বাংলাদেশি মনিকা বলেন, ‘এখানো নিয়মিত বাংলাদেশের মানুষ আসেন। তাঁরা যাতে এই বাংলা লেখা সাইনবোর্ড দেখেই বুঝতে পারেন—এখানে বাংলাদেশের মানুষ আছে, বাংলাদেশের খাবার আছে। এই বাংলা লেখাটুকু দেখে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষ অনেক আনন্দ পান। অনেকে এই সাইনবোর্ডসহ ছবি তুলে নিয়ে যান।’
ইতালির রোম কিংবা ভেনিসে চোখে পড়ে বাংলাদেশের মানুষের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখা। ফ্রান্সের প্যারিসে কিংবা সুইজারল্যান্ডেও একই চিত্র। কানাডাপ্রবাসী হেলেনা আক্তার বলেন, ‘কানাডার কোথাও কোথাও বাঙালিবহুল এলাকায় দোকানপাটের সাইনবোর্ডে বাংলার দেখা মেলে। তখন খুবই ভালো লাগে।’
প্যারিসপ্রবাসী দেবেশ বড়ুয়া জানান, প্যারিসের কয়েকটি এলাকায় অনেক বাঙালি দোকান আছে যেগুলোর সাইনবোর্ড বাংলায়। রেস্তোরাঁ, মোবাইলের দোকান, কাপড়ের দোকানেও বাংলায় সাইনবোর্ড আছে। মুদি দোকানের সাইনবোর্ড আছে বাংলায়।