ভুঁইফোড়দের ভিড়ে কোণঠাসা মানসম্মত কোচিং সেন্টার - দৈনিকশিক্ষা

নেই নীতিমালা নেই কোচিংয়ের নিয়ন্ত্রণভুঁইফোড়দের ভিড়ে কোণঠাসা মানসম্মত কোচিং সেন্টার

শরীফুল আলম সুমন |

স্কুল শিক্ষকদের কোচিং বন্ধে নীতিমালা করেছে সরকার। যার বৈধতা দিয়েছেন আদালতও। ফলে স্কুলের শিক্ষকরা একটা নিয়মনীতির মধ্যে এসেছে। এই নিয়মের ব্যত্যয় হলে তাঁদের শাস্তির সুযোগও আছে। কিন্তু সারা দেশের হাজার হাজার কোচিং সেন্টারে অসংখ্য শিক্ষার্থী পড়লেও তাদের ব্যাপারে কোনো নীতিমালা নেই। ফলে ভুঁইফোড় কোচিং সেন্টারের ভিড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মানসম্মতরা। তবে কয়েক বছর ধরে কোচিং সেন্টারের উদ্যোক্তারা তাদের জন্য একটা নীতিমালা করার তাগিদ দিয়ে এলেও সেদিকে কান দিচ্ছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক মাস কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এর মধ্যেও ভুঁইফোড় কিছু কোচিং সেন্টার গোপনে চলছে। গত কয়েক দিনে এদের অনেককেই র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত শাস্তির আওতায় এনেছে। মূলত কোচিং সেন্টারগুলোর জন্য কোনো নীতিমালা না থাকায় অখ্যাত কিছু কোচিং সেন্টার তাদের ইচ্ছামতো পরিচালনা করছে।

এসব বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল  বলেন, ‘সারা পৃথিবীতেই কোচিং সেন্টার আছে। শিক্ষা থাকলে কোচিংও থাকবে। তবে আমরা কোচিং বাণিজ্যটা বন্ধ করতে চাই। কোচিংয়ের মাধ্যমে কেউ যাতে শোষিত না হয়, সেটা বন্ধ করতে চাই। আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর স্কুল শিক্ষকদের কোচিং নীতিমালা আমরা সংশোধন করব। আর ফ্রিল্যান্সাররা যেসব কোচিং চালাচ্ছে সেগুলোর জন্য দেশের প্রচলিত নিয়মনীতি রয়েছে। তার পরও তাদের কোনো সমস্যা থাকলে, তারা যদি আমাদের কাছে আবেদন করে, আমরা ব্যাপারটা দেখব।’

সূত্র জানায়, দেশে দীর্ঘদিন ধরে কোচিং সেন্টার চললেও তাদের কোনো ইউনিটি বা সংগঠন ছিল না। যে যার মতো চলত। তবে গত বছর অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন, বাংলাদেশ নামে কোচিং সেন্টারের

মালিকদের একটি সংগঠন তৈরি হয়। কিন্তু দেশে হাজার হাজার কোচিং সেন্টার থাকলেও তাদের সদস্য সংখ্যা পাঁচ শর নিচে। ফলে সংগঠনটিও সব কোচিং সেন্টারের দায়ভার নিতে পারছে না। কিন্তু কোচিং সেন্টারের জন্য সরকারের নীতিমালা থাকলে ভুঁইফোড় কোচিংগুলোর সৃষ্টিই হতো না। আর যারা আছে, তারাও একটি নিয়মের মধ্যে চলে আসত। ভূমিকা রাখতে পারত অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন।

জানা যায়, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালের নীতিমালা অনুসারে দেশের সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা কোচিং করাতে পারবেন না। তবে যেসব ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত নয়, শুধু তারাই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোচিং করাতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।

তবে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালায় স্কুলের একজন শিক্ষকের তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে ১০ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। আর অভিভাবকদের অনুরোধে স্কুল কর্তৃপক্ষের আয়োজনে শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাসেও অংশ নিতে পারবেন বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি এই নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, আদালত যেখানে ফ্রিল্যান্সার বা যেসব ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত নয় তাদের কোচিং করতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন, সেখানে বাদ সাধছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তারা পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ করছে, আবার শেষ হলে খুলছে। নীতিমালা না থাকায় ন্যূনতম শর্ত পূরণ ছাড়াই গড়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার। তাদের কোনো নিবন্ধনের আওতায় না আনায় নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব হচ্ছে না।

তবে পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। কারণ স্কুল শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়লে একেক বিষয়ের জন্যই সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকা দিতে হয়। অথচ কোচিং সেন্টারে সব বিষয়ের কোচিংয়ের জন্য খরচ করতে হয় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে এবার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। সামনে জেএসসি পরীক্ষা। অথচ স্কুলে খুব একটা পড়ালেখা হয় না। তারা শুধু পড়া দিয়ে দেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা কিভাবে বুঝবে সেই দায়িত্ব তারা নেয় না। আর আমার যে আয় তাতে প্রতি বিষয়ের জন্য প্রাইভেট টিচার দেওয়াও সম্ভব নয়। কারণ আমার আরো দুটি সন্তান আছে। এ জন্যই কোচিং সেন্টারে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটাও এই মাসে বন্ধ। ফলে ছেলেটি পড়ালেখায় বেশ পিছিয়ে গেল।’

জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছায়া শিক্ষা চালু আছে। এমনকি উন্নত দেশের শিক্ষার্থীরাও স্কুল-কলেজের পাশাপাশি কোচিং সেন্টার বা সহায়ক বইয়ের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ছায়া শিক্ষা নিয়ে ভিন্ন চিন্তায় রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়ায় সব ধরনের কোচিং স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। সহায়ক বইও বন্ধের কথা বলা হয়েছে। দক্ষ শিক্ষক তৈরি না করে ও স্কুলে পড়ালেখা নিশ্চিত না করে এগুলো বন্ধ করলে তা আরো হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভারতে ছায়া শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সিঙ্গাপুরে ২০১২ সালে রেজিস্টার্ড কোচিং সেন্টারের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৭০০টি, ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে ৮৫০টিতে দাঁড়িয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব শ্যাডো এডুকেশন, বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক ইমদাদুল হক (ই. হক স্যার) বলেন, ‘কোচিংয়ে আসে মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা। আমরা যেসব কোচিং পরিচালনা করি, এগুলোর সঙ্গে স্কুল শিক্ষকদের কোনো সংযোগ নেই। তবে তার পরও আমাদের মধ্যেও কেউ যদি অনিয়মের সঙ্গে জড়ায়, তাদের কঠোর শাস্তি আমরাও চাই। কিন্তু এর জন্য পুরো কোচিং বন্ধ রাখা হলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরাই সমস্যায় পড়ে। তাই আমাদের দাবি, কোচিং সেন্টারগুলোকে একটা নীতিমালার মধ্যে আনা হোক। আর এই দায়িত্বটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই নেওয়া উচিত।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075578689575195