ভুল আর নোট গাইডের হুবহু প্রশ্ন - দৈনিকশিক্ষা

ভুল আর নোট গাইডের হুবহু প্রশ্ন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ভুল প্রশ্ন বিতরণের পর এবার আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিকে কেন্দ্র করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড। প্রথম দিনই বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় অনেক জেলায় ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের ঘটনার মধ্যে গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেয়ার ঘটনা নিয়েও চলছে বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত শিক্ষা বোর্ডগুলো। পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যকর সমাধানের পথ খুঁজছে। গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ । 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এর আগে সোমবার পরীক্ষার প্রথম দিন ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বহু জেলা ও উপজেলায়। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে অসংখ্য পরীক্ষার্থী। কোথাও কোথাও ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পর আবার ডেকে এনে আসল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিবাদ হয়েছে কোথাও কোথাও। বরিশাল, যশোরের চৌগাছা, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, নীলফামারী, ময়মনসিংহের গফরগাঁওসহ অনেক এলাকায় ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ২০১৮ সালের সিলেবাসে অর্থাৎ অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নে উত্তর লিখতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলেছে, বহু নির্বাচনী পরীক্ষা ৩০ মিনিটের ও ৩০ মার্কের। এই পরীক্ষা প্রথমেই দিতে হয়। তাদের সুযোগ ছিল না হলে বসে সিলেবাস যে ২০১৮ সালের, তা দেখার। এই ভুল যারা প্রশ্ন বণ্টন করেছে তাদের। এজন্য তারা পরীক্ষায় সঠিক উত্তর দিতে পারেনি বলে চিন্তিত।

সোমবারের ঘটনার মধ্যেই কয়েকটি কেন্দ্রের সচিব ও কক্ষ পরিদর্শককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাকি কোথায় কোথায় এ ঘটনা ঘটেছে তা খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেছেন, আসলে নিয়মিত ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের আলাদা আলাদা করে বসার ব্যবস্থা করা ও প্রশ্ন বিতরণের বিষয়ে বলা হলেও কিছু কিছু কেন্দ্র সচিব ও কক্ষের দায়িত্বে যারা থাকেন তারা ভুল করেছেন। আমাদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক আন্তঃবোর্ড সমন্বয়ক হিসেবে ইতোমধ্যেই সকল বোর্ড চেয়ারম্যানকে বলেছেন কোথায় কোথায় এমন হয়েছে ও কারা দায়ী তা বের করতে। তথ্য আসার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তথ্য পাঠানো হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোমবারের ঘটনার মধ্যেই কয়েকটি কেন্দ্রের সচিব ও কক্ষ পরিদর্শককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাকি কোথায় কোথায় এ ঘটনা ঘটেছে তা খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এদিকে গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে এসএসসির বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে তা তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড। ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম আমিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, বাজারের গাইড বই থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেয়ার অভিযোগটি দেখার পর খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্তে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। জড়িতদের খুঁজে বের করতে কাজ শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন গাইড বই থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে। মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭০ নম্বরের সৃজনশীল। আর ত্রিশ নম্বরের এমসিকিউ। সৃজনশীল প্রশ্নের মধ্যে ৪০ নম্বরই হুবহু গাইড বই থেকে কমন পড়েছে। অথবা অন্যভাবে বলা যায়, ৪০ নম্বরের প্রশ্ন তিন/চার বছর আগের অন্য শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নের সঙ্গে প্রায় মিল। অথচ পুরনো প্রশ্ন না দেয়ার বিধান রয়েছে। উদ্দীপক অংশের কোন কিছুই মেলার কথা নয়।

এছাড়া এমসিকিউ অংশের কয়েকটি প্রশ্নের রয়েছে একাধিক উত্তর। ভুল প্রশ্নও রয়েছে। এতে বিভ্রান্ত হয়েছে পরীক্ষার্থীরা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রটিতে কুমিল্লা ও সিলেট বোর্ডের ২০১৬ সালের একটি উদ্দীপক ও সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন হুবহু এ বছরের ৯নং প্রশ্ন হিসেবে সেট করা হয়েছে। উপন্যাস অংশের সঙ্গে ২০১৭ সালের বাংলা প্রথম পত্রের উপন্যাস অংশের ৮নং প্রশ্নটি এ বছরের উপন্যাস অংশের ১০ নং প্রশ্ন হিসেবে সেট করা হয়েছে। যেখানে শুধু ক নং প্রশ্নটি পরিবর্তন করা হয়েছে। যেটা কাম্য নয়। প্রশ্নগুলো বিগত কয়েক বছর ধরে টেস্ট পেপার ও গাইড বইতে ছিল।

এদিকে গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মঙ্গলবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, যারা বাংলার বিষয়ে স্বতন্ত্রভাবে একটা প্রশ্ন করতে পারেন না, তারা শিক্ষা বোর্ড চালান কেমন করে? গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেয়ায় অভিযুক্তদের লজ্জা-শরম নেই, কিছুদিন পরপরই তারা এটা করেন।

উল্লেখ্য, গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় একইভাবে ভুল প্রশ্ন বিতরণের পর জাতীয় সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন একাধিক সংসদ সদস্য। উত্তরের ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীদের খাতা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন জানিয়েছিলেন, বাংলা প্রথম পত্রে ভুল প্রশ্নপত্রের শিকার পরীক্ষার্থীরা কোনভাবেই কম নম্বর পাবে না, বরং তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে। কেন্দ্র সচিব ও কক্ষ পরিদর্শকদের ভুলে যেসব কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের নতুনের বদলে পুরনো সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে। নতুন ও পুরনোর তালগোলে পড়া সব পরীক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের খাতা আলাদা করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এক বছর আগে যে ঘটনায় সমালোচনার মুখে পরেছিল পরীক্ষা, ঠিক এক বছরের মাথায় সেই একই ভুল কিভাবে হলো?

আরও পড়ুন: 

বাজারি গাইডের প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা, জড়িতদের চিহ্নিত করার নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর

একটা বাংলা প্রশ্ন করতে পারে না, শিক্ষা বোর্ড চালায় কীভাবে : ড. জাফর ইকবাল

গাইড থেকে হুবহু প্রশ্নে এসএসসির বাংলা পরীক্ষা, আছে ভুলও

আবারো ভুল প্রশ্নে এসএসসি পরীক্ষা, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বিক্ষোভ

হুবহু বাজারি গাইডের প্রশ্ন এসএসসি পরীক্ষায়, তদন্ত শুরু

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045030117034912