ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে ক্যান্সারের চিকিৎসায় সৈয়দ ফজলুল রহমান (৪২) নামে এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে ভারতের চেন্নাইয়ে অ্যাপোলো ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে তিনি মারা যান।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার বোয়ালিয়া পাড়ার বাসিন্দা দুই সন্তানের বাবা ফজলুর রহমান সাতকানিয়া মডেল হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক।
তার স্বজনদের অভিযোগ, চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা ফজলুর রহমানের ফুসফুসে ক্যান্সার পেলেও ভারতের অ্যাপোলো ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে পরীক্ষায় তার শরীরে কোনো ধরনের ক্যান্সার নেই বলে নিশ্চিত করেছে। এছাড়া অ্যাপোলেতে পরীক্ষায় ফজলুর রহমানের যক্ষ্মা (টিবি) ধরা পড়ে।
ফজলুর রহমানের ছোট ভাই মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে গত নভেম্বরের শুরুতে ফজলুর রহমান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. শিমুল কুমার ভৌমিকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন।’
‘ওই চিকিৎসকের পরামর্শে ১৫ নভেম্বর নগরের কেয়ার ইনভেস্টিগেশন নামে একটি রোগ নিরূপণ কেন্দ্রে ফজলুর রহমানের হিস্টোপ্যাথলজির পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্টে তার শ্বাসনালির টিস্যুতে ক্যান্সারের জীবাণু রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টিতে স্বাক্ষর রয়েছে চমেক হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা. মো. জিল্লুর রহমানের। প্রতিষ্ঠানটির মালিকও তিনি।
মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘ক্যান্সার ধরা পড়ায় ডা. শিমুল কুমার ভৌমিক ফজলুর রহমানকে চমেক হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. তাপস মিত্রের কাছে রেফার করেন। ২১ নভেম্বর ডা. তাপস মিত্র ফজলুর রহমানকে চিকিৎসা দেন এবং ২৪ ও ২৫ নভেম্বর তার তত্ত্বাবধানে নগরের একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে ফজলুর রহমানকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।
‘কিন্তু কেমোথেরাপি দেওয়ার পর ফজলুর রহমানের রক্তবমি শুরু হয়। তার শারীরিক অবস্থারও অবনতি হয়। বিষয়টি চিকিৎসককে জানালে তিনি কেমোথেরাপি দিলে রোগীর রক্তবমি হওয়া স্বাভাবিক বলে জানান।’
মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে ফজলুর রহমানকে ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত হয়। ৫ ডিসেম্বর তাকে ভারতের চেন্নাইয়ে অ্যাপোলো ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সঙ্গে চট্টগ্রামে যে টিস্যু পরীক্ষা করে ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া যায়, সেটির নমুনাও ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়।
‘পরবর্তীতে ওই টিস্যু দিয়ে অ্যাপোলো ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে ফজলুর রহমানের হিস্টোপ্যাথলজির পরীক্ষা করানো হয়। ৬ ডিসেম্বর রিপোর্ট হাতে পাই। রিপোর্টে ফজলুর রহমানের শরীরে কোনো ধরনের ক্যান্সারের জীবাণু নেই এবং তার যক্ষ্মা হয়েছে উল্লেখ করা হয়। তারপরেও অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ ফজলুর রহমানের শ্বাসনালির নতুন টিস্যু পরীক্ষা করে দেখে। এতেও কোনো ধরনের ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া যায়নি।’
ফজলুর রহমান ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে দাবি করে মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘রোগীর মরদেহ এখনো আনা হয়নি। পরিবারের সদস্যরা দেশে ফিরলে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে চমেক হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পরীক্ষায় শ্বাসনালির টিস্যুতে ক্যান্সারের জীবাণু পাওয়া গেছে। তাই সে অনুযায়ী রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
‘তবে আমাদের এখানে যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। এতে করে রিপোর্ট ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সেটি অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু ক্যান্সারের মতো রোগের চিকিৎসা শুধু একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে করা উচিত নয়।’ বলেন ডা. মো. জিল্লুর রহমান।
অন্যদিকে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. তাপস মিত্র বলেন, হিস্টোপ্যাথলজির রিপোর্ট দেখে আমরা রোগীকে ক্যান্সারের চিকিৎসা দিই। এক্ষেত্রে রিপোর্টটাকে আমরা অুনসরণ করি।
‘রিপোর্টে যেহেতু ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তাই আমরা ক্যান্সারের চিকিৎসা দিয়েছি। এক্ষেত্রে রোগ নিরূপণে ভুল হলে, রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হতে পারেন।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, কোন রিপোর্টটি ভুল সেটি নিশ্চিতের জন্য তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করানো উচিত।
‘রোগীর স্বজনরা যদি অভিযোগ দেন, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্তে গাফিলতির প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’