সরকারি হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভুয়া প্রত্যবেক্ষক, প্রার্থীদের সহায়তার অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

সরকারি হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভুয়া প্রত্যবেক্ষক, প্রার্থীদের সহায়তার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) পরীক্ষায় ভুয়া কক্ষ প্রত্যবেক্ষক (ইনভিজিলেটর) পরিচয়ে সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে প্রার্থীদের অনৈতিক সহায়তার অভিযোগ উঠেছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের স্কুলগুলোতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ওই কেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়োজিত কর্মকর্তারা কক্ষ প্রত্যবেক্ষক (পরিদর্শক) পরিচয়ে বিভিন্ন রুমে বহিরাগত ৮ জন লোককে প্রার্থীদের সাহায্য করার সুযোগ দিয়েছে। আর কক্ষ প্রত্যবেক্ষক হিসেবে যাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তারা কেউ পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করেননি। দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জানা যায়, সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ উপকেন্দ্র-১৪ তে বরিশাল বিভাগের সরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বাংলা বিষয়ের এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. মো. আরিফুর রহমানের বাড়ি বরিশাল জেলায়। ড. মো. আরিফুর রহমান একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। তিনি ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এ রশীদ মিঞাঁ মিলে পরীক্ষা কমিটির অন্যান্য সদস্যদের প্রভাবিত করে এ অনিয়ম ও জালিয়াতি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, তাদের সহায়তায় কক্ষ পরিদর্শক পরিচয়ে ৭-৮ জন বহিরাগত পরীক্ষার রুমে উপস্থিত হয়ে নির্দিষ্ট কয়েকজন প্রার্থীকে উত্তর বলে দেন এবং উত্তরপত্রে লেখায় সাহায্য করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৬ সেপ্টেম্বরের নিয়োগ পরীক্ষায় সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষার পরিদর্শক তালিকার ৪৭, ৪৮ এবং ৪৯ নং ক্রমিকে গুলশান মডেল কলেজের তিনজন সহকারী শিক্ষকের নাম রয়েছে। তারা হলেন, মো. হাসান আলী, সাথী আক্তার এবং আনোয়ার ইসলাম। পিএসসিতে কক্ষ প্রত্যবেক্ষকদের যে বিল জমা দেয়া হয়েছে তাতে ৫১, ৫২ ও ৫৩ নম্বর ক্রমিকে এই তিন জনের নাম রয়েছে। যারা প্রকৃতপক্ষে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক নন। এ বিষয়টি গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, এই নামে তাদের প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক কর্মরত নেই এবং অতীতেও ছিল না। তারা আরও জানিয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষায় কক্ষ প্রত্যবেক্ষক হিসেবে শিক্ষক প্রেরণ করার জন্য গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক পত্রও দেয়া হয়নি। তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রকেই দায় বহন করতে হবে। 

গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমের বলেন, মো. হাসান আলী, সাথী আক্তার এবং আনোয়ার ইসলাম নামে আমার প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক কর্মরত নাই। তারা আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নন।

কক্ষ প্রত্যবেক্ষক তালিকার ৪৬ নম্বরে রয়েছে সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নুরুন্নাহার বেগমের নাম। বিলে দাবি করা হয়েছে তিনি ৩০৬ নম্বর কক্ষে দায়িত্ব পালন করেছেন। যিনি বর্তমানে বিএড প্রশিক্ষণের জন্য এক বছরের শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে, যিনি ৬ সেপ্টেম্বর কক্ষ প্রত্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি। এ বিষয়ে নুরুন্নাহার বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি গত ১ বছর ধরে ঢাকা টিটিসিতে ট্রেনিং এ আছি। আমি ৬ সেপ্টেম্বর কক্ষ প্রত্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করিনি। আমার নামে কীভাবে বিল হল, আমি তা বলতে পারছি না।  

পিএসসিতে কক্ষ প্রত্যবেক্ষকদের যে বিল জমা দেয়া হয়েছে, তার ৫৫, ৫৬, ৫৮ এবং ৫৯ নম্বর ক্রমিকে রয়েছেন সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংযুক্ত প্রাথমিক শাখার খণ্ডকালীন শিক্ষক মো. আরিফ হোসেন, অপর্ণা সেন, জুহিন সুলতানা এবং সুব্রত কুমার ঘোষের নাম। তারা কেউ ৬ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষায় কক্ষ প্রত্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি বলে জানা গেছে। 

মো. আরিফ হোসেন প্রতিষ্ঠান ছেড়ে নিজ জেলা রাজবাড়ির একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি গত ২৯ জুন সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংযুক্ত প্রাথমিক শাখার খণ্ডকালীন শিক্ষক পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি ৬ সেপ্টেম্বরের পরীক্ষায় কক্ষ প্রত্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করিনি।  

একইভাবে দায়িত্ব পালন করেননি জুহিন সুলতানা ও সুব্রত কুমার ঘোষ। জুহিন সুলতানা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর আমি পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করিনি। কিন্তু জালিয়াতি করে আমার স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে। শুধু আমি নই। বেশ কয়েকজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন না করলেও তাদের হাজিরা দেয়া হয়েছে। জালিয়াতি করে এমনটা করা হয়েছে।

সুব্রত কুমার ঘোষ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি ৬ সেপ্টেম্বর আমি দায়িত্ব পালন করিনি। আমার নাম কি করে আসল তা আমি বলতে পারছি না।

জানা যায়, অধ্যক্ষ ড. আরিফুর রহমান মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে তার সঙ্গে যোগাযোগকারী পরীক্ষার্থীদের সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে কক্ষ প্রত্যবেক্ষক হিসেবে তাদের সবার নাম ব্যবহার করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তারা কেউ সেদিনের পরীক্ষায় প্রত্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি। সূত্র জানায়, ড. আরিফুর রহমান সেদিন প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে লোকজন এনে পরীক্ষার ভুয়া প্রত্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলেন। 

এ বিষয়ে সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আরিফুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে অভিযোগ আস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে প্রতিবেদককে দেখা করতে বলেন তিনি। ড. মো. আরিফুর রহমান বলেন, আপনি কে তা আমি জানি না। আমি তথ্য কেন দিব। আমি কাকে প্রত্যবেক্ষক করে বিল পাঠিয়েছি তা আমার বিষয়। তিনি বলেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য নিতে আবেদন করতে হয়। আপনি আবেদন করলে তথ্য দিব। আপনি যে অভিযোগ করেছেন তা আমি জানি না।’ 

সরকারি কালাচাঁদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক এম এ রশীদ মিঞাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।  

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00341796875