ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজার তারিখ পড়েছে একই দিনে, আগামী ৩০ জানুয়ারি। ভোটের আগে এই সময়টি প্রচার-গণসংযোগে এবং ভোট আমেজে রাজধানী সরগরম থাকার কথা। কিন্তু সব ছাপিয়ে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে ভোট আর পূজা একই দিনে হওয়ার বিষয়টি।
ইতোমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সাধারণ ভোটার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), শিক্ষক সমিতি, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শাহবাগ মোড় অবরোধ, সভা-সমাবেশ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আমরণ অনশনে বসেছেন, তাদের মধ্যে অসুস্থ হয়েছেন জনা দশেক। তাদের চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
সার্বিকভাবে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে সবার সমর্থন থাকলেও, নির্বাচন কমিশন বলছে, এই পর্যায়ে এসে এটা সম্ভব না। তারা এও বলছে, একই দিনে ভোট ও পূজা অনুষ্ঠানে কোনো সমস্যা হবে না। দুটোকেই উৎসব হিসেবে উল্লেখ করে আলাদা আলাদাভাবে তা অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছে কমিশন।
ভোটের ১২ দিন আগে এসে শুক্রবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ পরিবর্তন করলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। এর আগেও তিনি বলেছেন, ভোটের তারিখ নির্ধারণে নির্বাচন কমিশনকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলোচনা সভায় পূজার দিন ভোটের তারিখ ফেলার সমালোচনা করেছেন।
ভোটের তারিখ পরিবর্তনের পক্ষে রয়েছেন প্রধান চার মেয়রপ্রার্থী আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, শেখ ফজলে নূর তাপস এবং বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন। তারা প্রত্যেকে মনে করেন নির্বাচন পেছানো উচিত।
ভোটের বর্জনের আহবান
বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট আজ এক বিবৃতিতে পূজার দিন ভোট হলে তা বর্জনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে। এই সংগঠনটি ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার আছে।
অবশ্য পূজাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনে নির্দেশনা চেয়ে ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ। ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট রিট সরাসরি খারিজ করে দেন। অবশ্য বৃহস্পতিবার রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। রোববার আপিলের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যে তোড়জোড় তাতে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে আপিল বিভাগের নির্দেশনার ওপর।