না কথা বলার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ছাড়া কোনো গণতন্ত্রই ‘গণতন্ত্র’ না। বলছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক মনিকা আলী। মনিকা আলী আরও বলেন, মানুষকে কথা বলতে দিতে হবে। মত প্রকাশ তার অধিকার। অনেক দেশে মৌলবাদীরাও সমস্যার সৃষ্টি করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমিতে ঢাকা লিট ফেস্টের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, শুধু একজন লেখক হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবেও আমি মনে করি মুক্ত চিন্তার স্বাধীনতা এবং সবার কথা বলার স্বাধীনতা থাকতে হবে। আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি; গণতন্ত্রের মানের কথা বলতে গেলে ভালো গণতন্ত্রের কথাও বলি। পশ্চিমা দেশগুলোতে আইনের চর্চা বেশি বলে সেখানে গণতন্ত্রের চর্চাটাও সমুন্নত। যে কারণে সামান্য কিছু হলেও মানুষ একত্রিত হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করে না।
চতুর্থ ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলিউশনের কথা বলছি। সেখানে ই-বুক কি ছাপার বইয়ের জায়গা করে নিচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে মনিকা আলী বলেন, আমার কাছে ছাপার বই অনেক আকর্ষণীয় ব্যাপার এখনো। এবং ছাপার বইয়ের কাটতি আসলে সারা বিশ্বেই অনেক বেশি।
তবে বিশ্বের একেক জায়গায় এই চিত্রটা একেক রকম। কোনো কোনো জায়গায় ই-বুকের চাহিদা বাড়ছে আবার কোথাও কোথাও ই-বুকের বাজার তেমন নেই। আবার ছাপার বইয়ের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম, কোথাও বাড়ছে কোথাও কমছে।
লেখালেখিকেই কেন বেছে নিলেন—জানতে চাইলে মনিকা আলী বলেন, আমার সামনে আসলে আইডল হিসেবে কেউ ছিল না। অন্য অনেক কিছুই আমি হতে পারতাম; কিন্তু লেখালেখি আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলছিল।
কারণ, এখানে আমি যা করতে চাই তাই করতে পারছি, সত্যিকার অর্থেই যা করতে চাই। সেখান থেকেই আমার লেখক হওয়া। আমার নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান মনে হয়। আমি পাবলিশার খুঁজছিলাম। এবং একটা সময় পেয়েও গেলাম। সত্যিই অনেক সময় জাদুকরি অনেক কিছু জীবনে ঘটে!
মনিকা আলী যখন বাংলাদেশ ছেড়ে যান তখন তার বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। কোনো স্মৃতি মনে আছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছেড়ে আসি যখন আমার বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। তখনো আসলে লং টার্ম মেমোরি বলতে যা বলা হয় তা থাকবার কথা নয়। আমার একটু মনে আছে—আমাদের একটা কালো বিড়াল ছিল।
এরকম টুকরো টুকরো কিছু ছবি আমার মনে পড়ে। ওগুলো আসলে কোনো পোক্ত স্মৃতি নয়। তবে এখানে এসে এত মানুষ দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলা বলতে পারি না। তবে, বাংলা ভাষা, রবীন্দ্রনাথ আমার অস্তিত্বে মিশে রয়েছে। আমার সাহিত্য রচনার প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে।
মনিকা আলী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লেখক। তার লেখা বই ২৬টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রান্টার জন্য ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে সেরা তরুণ ঔপন্যাসিক নির্বাচিত হন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘ব্রিক লেন’ বিশ্বখ্যাত ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।