মতিঝিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেকাল একাল - দৈনিকশিক্ষা

মতিঝিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেকাল একাল

মো.সিদ্দিকুর রহমান |
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ শিক্ষার্থী সংকট। ৬২৫টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ ও ২৫টির ২০ এর নিচে। এর মাঝেও কতিপয় বিদ্যালয় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি আর্থিক সহযোগিতায়  সুনাম অক্ষুন্ন রেখে যাচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়সূচি, শিক্ষক সংকট, ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর অভাব, শিক্ষকদের পাঠদান বহির্ভূত কাজের ব্যাপকতাসহ বিদ্যালয়ের পরিবেশগত অব্যবস্থাপনা বিদ্যমান। শিক্ষকেরা পাঠদান ব্যাহত করে উপবৃত্তিসহ নানা অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকে। শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হলেও জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। অথচ পাঠদানের চেয়ে অফিসিয়াল কাগজপত্র ঠিক রাখার ওপরই সংশ্লিষ্টদের খবরদারি দৃশ্যমান। এসব কারণে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। 

 

 
আজ একটি অস্তিত্ব সংকটময় প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে আলোকপাত করছি। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষার্থী ছিল ৭৬ জন। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫৬০ জন। চারপাশে খ্যাতিসম্পন্ন মতিঝিল সরকারি উচ্চ বালক/বালিকা, আইডিয়ালসহ অসংখ্য বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঝে নানা প্রতিকূল অবস্থায় সুনাম অক্ষুন্ন রেখে চলেছে বিদ্যালয়টি। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় মতিঝিল পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সরকারিকরণ হয়। মতিঝিল সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অবস্থান ও তখনকার পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে সকাল ৮ টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা ও ১ টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা পর্যন্ত মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হতো। যার ফলে ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবী হোসেন তালুকদারের দৃষ্টি কেড়ে নেয়, ডেমরা থানার তরুণ সাহসী প্রধান শিক্ষক নূরজাহান হামিদা। তিনি তাঁকে মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেন। শুরু হলো মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংগ্রামী অগ্রযাত্রা। তখন হাজিরা খাতায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২১২ জন। উপস্থিতির হার ছিল অতি নগণ্য। শিক্ষক সংখ্যা ১৭ থেকে কমে ৮ এ দাঁড়ালো। নূরজাহান হামিদা বিদ্যালয়ে যোগদান করে জমির নামজারি কাজটি সর্বাগ্রে করেন। সরকার ভবন নির্মাণে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেন। ঠিকাদার কাজ শুরু করতে গেলে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বিলকিছ বেগম (তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালামের স্ত্রী) নির্মাণে বাধা দেন। এছাড়া ও ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে যথাক্রমে মামলা নং ২২৯৮/২০০২ ও ১৯৬৫/২০০৩ দুটি মামলা দায়ের করেন। মুখ্ মহানগর হাকিম ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৫ ধারা মামলা দুটি ২৮/০২/২০০৪ খ্রিস্টাব্দে খারিজ করে দেন। 
 
বিদ্যালয়ে কার্যক্রম চলে আসছে। বিদ্যালয়ে কার্যক্রম স্থানান্তরের ফলে নতুন দখলদার কলোনী উচ্চ বিদ্যালয় তাদের দখল সম্প্রসারণ করেন। সাইন বোর্ড সরিয়ে বিদ্যালয়ের মোট ভূমি ৬৩ দশমিক ২৮ শতাংশ হতে ২০ শতাংশ ভূমি মতিঝিল কলোনী উচ্চ বিদ্যালয় দখল করে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য ১০০ কোটি টাকা। ১৩/০৬/১২ খ্রিষ্টাব্দে জেলা প্রশাসক ঢাকা প্রধান শিক্ষক মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আবেদনক্রমে অবৈধ দখল উচ্ছেদের নিমিত্তে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে অবৈধ উচ্ছেদের  অদৃশ্য কারণে কাজ স্থগিত হয়। 
 
২০১৮ খ্রিস্ট্রাব্দ শিক্ষার্থী ছিল ২১২৭ জন। মাতৃত্বকালীন, চিকিৎসা ছুটি, ট্রেনিং বাদে নিয়মিত শিক্ষক ছিল ১৩ জন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কার্যত্রুম নতুন শিক্ষক নিয়োগ না করায় বিদ্যালয়ের চরম অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষা কার্যত্রুম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি অভিভাবকদের কাছ থেকে স্বেচ্ছায় আর্থিক অনুদান নিয়ে ১২ জন খ-কালীন শিক্ষক, ০৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেন। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে কর্তৃপক্ষ নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ফলে শিক্ষক সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩ জন ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২,৫৬০ জন। বর্তমানে কল্যাণ সমিতি নামে ব্যাংকে ৪,০০,০০০ টাকা জমা আছে। বাকি ১,৭৭,০০০ টাকা দিয়ে জানুয়ারি মাসে ২০১৯ প্যারা শিক্ষকের বেতন ও ৫ জন কর্মচারীর বেতন দেয়া হয়। এছাড়াও বিদ্যালয়ের চুরি যাওয়া থাই গ্লাস ও গ্রিলের খাঁচা নির্মাণ বাবদ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তারপরেও মতিঝিল সরকারি বিদ্যালয়ের ৮টি মামলা পরিচালনাসহ বর্তমান ৬ তলা বিশাল ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ ও ১৯টি টয়লেট পরিষ্কার রাখা অনেকটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য হাতি পোষার মতো।
 
২৫৬০ শিক্ষার্থী, মামলার চাপ বিশেষ করে জানুয়ারি মাসে বিদ্যালয়ে সমূহ বই বিতরণ, ভর্তি, উপবৃত্তি সহ  বিদ্যালয়ে ভীষণ কাজের চাপ। এ মুহুর্তে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অভিভাবকদের চাহিদাকে গৌণ করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অথচ তাৎক্ষণিক পরিদর্শনে এসে কাগজ পত্র দাখিলের পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রচার করা গোটা শিক্ষক সমাজকে বিস্মিত করেছে। নূরজাহান হামিদা ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বেচ্ছায় স্বচ্ছল অভিভাবকদের কাছে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। 
 
সংশ্লিষ্টদের কাছে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক চাহিত অভিভাবকদের টাকা ফেরত দেয়ার কথা লিখে দিয়েছেন। বিশাল বিদ্যালয় ভবন রক্ষণাবেক্ষণ ১৯টি টয়লেট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, দীর্ঘ সময় শিক্ষকের অভাব দূরীকরণে ১২ জন প্যারা শিক্ষক ও ৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বেতন প্রদানসহ ও তাৎক্ষণিক আনুষাঙ্গিক খরচ করে আসছেন। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের ফলে আজ আশেপাশের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে। 
 
লেখক: আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা।
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034449100494385