মতিঝিল মডেলের সভাপতির অপসারণ দাবি, স্কুল রক্ষায় শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা - দৈনিকশিক্ষা

মতিঝিল মডেলের সভাপতির অপসারণ দাবি, স্কুল রক্ষায় শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

মুরাদ মজুমদার |

রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে আওলাদ হোসেনের অপসারণ ও নতুন সভাপতি মনোনয়ন দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও অভিভাবকরা মানবন্ধন করেছেন। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শত শত শিক্ষক-কর্মচারী ও অভিভাবক এ মানববন্ধনে অংশ নেন। মানববন্ধনে শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও কথায় কথায় বরখাস্ত করেন। প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন সভাপতি।’ 

নির্যাতিত শিক্ষকরা সভাপতির হাত থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী তথা প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কয়েকজন শিক্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দেন। সভাপতির বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন তারা। শিক্ষকরা বলেন, সভাপতি ঢাকায় চারটি বাড়ি করেছেন যদিও তার কোনও বৈধ আয় নেই।

আরও পড়ুন: সভাপতির ‘টর্চার সেলে’ শিক্ষক নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা!

প্রায় ১১ বছর ধরে আওলাদ হোসেন প্রতিষ্ঠানটি লুটেপুটে খাচ্ছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের পদে থাকায় ভয়ে অনেকে মুখ খুলতে চান না অনেক শিক্ষক-কর্মচারী। নির্যাতিত শিক্ষকরা দাবি করেন, সভাপতি স্কুলের ভেতরে একটা টর্চার সেল তৈরি করেছেন। “যেখানে ঢোকার সময় মনে হবে বেহেশতখানায় ঢুকছেন কিন্তু বের হওয়ার সময় কাঁদতে কাঁদতে বের হতে হয়।’

প্রশ্নফাঁস, কোটি কোটি টাকার কেনাকাটা, শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের বেশ কিছু অভিযোগ দীর্ঘ দিন ধরেই। বছরের পর বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি; আবার অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন পদে পূর্ণ দায়িত্ব না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালানো হচ্ছে। এসব পদেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের যখন খুশি তখন পরিবর্তন করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে ভেতরে-ভেতরে অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে।

আর এসব কারণে একসময়ে ভালো ফল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এসএসসি পরীক্ষার ফল ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ (‘এ’ প্লাস) পেয়েছিল ১ হাজার ১৩০ জন শিক্ষার্থী। সেটা প্রতিবছর কমতে কমতে চলতি বছর জিপিএ-৫ পায় ২২৫ জন। যদিও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা শামসী দাবি করেন, আশপাশে একাধিক ভালো প্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীদের অনেকে একপর্যায়ে চলে যায়। এরপরও তাঁরা ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

মানববন্ধনে একটি নতুন ভবনের কাজে ১ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন মর্মে অভিযোগ করেন। পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার প্রায় ৮০ লাখ সভাপতিকে দিতে হয়। অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়।  

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখা মতিঝিল কলোনিতে অবস্থিত, আরেকটি শাখা ক্যাম্পাস বাসাবো এলাকায়। বর্তমানে ১১ হাজার ৩০০–এর কিছু বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে। 

প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ১১ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন।

তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওলাদ হোসেন। দৈনিক শিক্ষার প্রশ্নের জবাবে আজ সোমবার তিনি বলেন, “দুদক আমাকে ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে। দুদকের ক্লিয়ারেন্স থাকার পরও একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা কঠিন। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।” 

জানা যায়, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটিতে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথমে একজন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। পরে নিয়োগ পরীক্ষার সময় আরও একটি পদ বাড়ানো হয়। কিন্তু নিয়োগ দেয়া হয় তিনজনকে। এর মধ্যে জিয়াউল হক নামে একজন বিধি অনুযায়ী প্রথম হওয়ায় তাঁর নিয়োগটি অনুমোদন করে তৎকালীন পরিচালনা কমিটি। ওই কমিটি আরও দুজনকে নিয়োগ দিলেও বলেছিল, বিধি অনুযায়ী নিয়োগ না হওয়ায় এই দুজন সরকারি অনুদানের (এমপিওভুক্ত) জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তাঁরা কেবল প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া বেতনের অংশটুকু পাবেন। এর মধ্যে লুবনা আক্তার এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত তৃতীয় শ্রেণি পাস। আর ফাতেমা আক্তার এইচএসসি ও স্নাতকে তৃতীয় শ্রেণি পাস। কেবল এসএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগে পাস। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান পরিচালনা কমিটি এই দুজনকেই নানা ‘কায়দা’ করে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত করিয়েছেন। তবে এই তিনজনের মধ্যে বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া জিয়াউল হক এখনো এমপিওভুক্ত হতে পারেননি।

একাধিক শিক্ষক বলেছেন, গত ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ১৫০ জন। এসব নিয়োগের অনেকগুলোতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলেও প্রতিষ্ঠানের একজন সাবেক অভিভাবক প্রতিনিধি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেছেন। প্রথমে অস্থায়ী ভিত্তিতে এবং পরে স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়।

প্রশ্নফাঁস নিয়ে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১, ১২ ও ১৩ মার্চ প্রথম আলো ও দৈনিক শিক্ষাসহ একাধিক পত্রিকায় মতিঝিল মডেলসহ ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষসহ কয়েকজন শিক্ষকের প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে যুক্ত থাকার খবর প্রকাশ হয়।  দৈনিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে কয়েকজন শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে এই নয় যে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর সব শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সবাই প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত বা দোষী। বিষ্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করা গেছে মতিঝিল মডেল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রশ্নফাঁসের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্নফাঁস নিয়ে মতিঝিল মডেল স্কুলের একাধিক শিক্ষকের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকার দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশ হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মো. জাকির হোসেনের। সাক্ষাৎকারে পাবলিক পরীক্ষা শুরুর আগে কীভাবে মতিঝিল মডেলের দুইজন শিক্ষক প্রশ্ন বের করে তার উত্তর প্রস্তুত করেন তা উঠে আসে। সাক্ষাৎকারে প্রশ্নফাঁস চক্র নিয়ে ঢাকার এডিসির কাছে নালিশ এবং তৎপরিপ্রেক্ষিতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠানো এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিষয়ে উল্লেখ করা করেছেন জাকির হোসেন।

জাকির হোসেন বলেছেন, দৈনিক শিক্ষায় দেয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে যা যা বলেছেন তা সবৈব সত্য। বিবেকের তাড়নায় তিনি এডিসি শিক্ষার হাতে ওই ভিডিওর কপি সরবরাহ করেছেন। বিবেকের তাড়নায় মতিঝিল মডেলেরেই অপর এক শিক্ষকের করা ওই ভিডিওটি জাকির হোসেনসহ অনেকের কাছে রয়েছে। প্রশ্নফাঁসের মতো অন্যায় যাতে বন্ধ হয় সেটাই তাঁর লক্ষ্য। 

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043699741363525