মন্ত্রিসভায় তারুণ্যের এমপি নওফেল - দৈনিকশিক্ষা

মন্ত্রিসভায় তারুণ্যের এমপি নওফেল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চট্টগ্রামের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এক সময় হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার। চেয়েছিলেন ক্রিকেটার হতেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবার পথেই হেঁটেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সাংগঠনিক সম্পাদক এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। একজন তরুণ রাজনীতিক। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বাবা চট্টগ্রামের এক সময়ের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার হাত ধরেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি নওফেলের। বর্তমান মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য তিনি। বয়স মাত্র ৩৫ বছর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন তিনি। এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। রাজনীতিতে এসেই সবার নজর কাড়েন। এখন লাখো তরুণের আইডল। শনিবার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ ইমন।

নওফেলের বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৯৩ সাল থেকে টানা সাড়ে ১৬ বছর চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন। এ ছাড়া তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন। ফলে ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন নওফেল। তার জন্ম ১৯৮৩ সালের ২৬ জুন। লন্ডন স্কুল অব কমার্স থেকে ‘ল অ্যান্ড এনথ্রোপলজি’ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি বার এট ল সম্পন্ন করেন।

রাজনৈতিক পরিম-লে বড় হলেও কঠোর পারিবারিক বিধিনিষেধের মধ্যে তাকে থাকতে হয়েছে। চাইলেই তিনি আর ১০ জন শিশুর মতো যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারতেন না। তার বেশিরভাগ সময়ই কাটত আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে। ছোটবেলা থেকেই ‘আমরা রাসেল’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। পাঁচ বছর বয়সেই মিছিলে স্লোগান দিতেন ‘আমরা সবাই রাসেল হবো, রাসেল হত্যার বদলা নেব’। মাথায় পড়তেন শেখ রাসেলের ছবিসহ টুপি। তখন থেকেই বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাজনীতি সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি হতে থাকে ছোট্ট নওফেলের। সেই বয়সেই বাবার হাত ধরে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যোগ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ তার দুরন্ত শৈশব কেটেছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে। জনসভা অথবা মিছিলে বাবার পাঞ্জাবির কোনা ধরে থাকতেন সবসময়। বাবা যেখানে ছেলেও সেখানে। মাঝে মাঝে হাত ছুটে গেলে হারিয়েও যেতেন। তখন আবার খুঁজে বের করতে হতো তাকে। ফলে অন্য আট-দশটা শিশু-কিশোর থেকে একেবারেই আলাদা ছিল নওফেলের শৈশব জীবন। রাজনীতি ঠিক বুঝে ওঠার আগেই রাজনীতির মাঠে বিচরণ তার।

বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শেষ করেছেন পড়াশোনার প্রাথমিক পাঠ। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেরা পড়তে পারত সে স্কুলে। এ নিয়ে তার বাবা বেশ রসিকতাও করতেন। হঠাৎ দেখা যেত সবার সামনে নওফেলকে ডাক দিয়ে স্কুলের নাম বলতে বলতেন। মেয়েদের স্কুলের নাম নিয়ে ছোট্ট নওফেলকে বেশ বিপাকে পড়তে হতো প্রায়ই। সংবাদ সম্মেলন, রাজবন্দী, অধিকার আদায়, মিটিং-মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি বিষয়গুলো এভাবেই ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বর্তমান মন্ত্রিসভার এ সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের জীবনে। রাজনৈতিক কারণে বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে প্রায়ই জেলে যেতে হয়েছে। তখন বাবাকে দেখতে যাওয়া ছিল তার কাছে ফ্যামিলি পিকনিকের মতো। তার অনেকগুলো ঈদ কেটেছে বাবাকে ছাড়াই।

নওফেল বলেন, কিছু বিষয় আছে যা আমার কাছে মনে হতো এটাই স্বাভাবিক। আমরা ছোটবেলা থেকেই রাজবন্দী কথাটার সঙ্গে পরিচিত। বাচ্চারা বাল্যশিক্ষার বই পড়ে। আমি কিন্তু কখনো বাল্যশিক্ষার বই পড়িনি। আমি বাংলা পড়া শিখেছি বানান করে করে পত্রিকা পড়ে। আমার দাদা আমাকে দিয়ে বানান করে পত্রিকা পড়াতেন। আমি বুঝতাম না। কিন্তু পড়ে যেতাম। তখন অনেক শব্দ সামনে আসত যেমন আহত, নিহত, মর্মান্তিক ইত্যাদি শব্দের অর্থ আমি বুঝতাম না। তখন দাদা আমাকে বুঝিয়ে বলতেন।

আমার  প্রথম বই ছিল পত্রিকা আর সাইনবোর্ড। যখন আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি তখন কালারফুল বইগুলোর সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করলাম। কিন্তু সেসব আমাকে টানত না। কারণ আমি ‘অ’-তে অজগর শেখার আগে ‘স’-তে সোভিয়েত ইউনিয়ন শিখেছি। বাসায় তখন নিয়ম করে আটটি পত্রিকা রাখা হতে। পত্রিকা পড়া ছিল আমার নেশার মতো। আমার দাদা অনেকটা শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন। কিছু না বুঝলেই দাদাকে প্রশ্ন করতাম। যেমন হয়তো জানতে চাইলাম, এইডস দিবস মানে কী? দূরারোগ্য ব্যাধি কী? দাদা বলতেন যে রোগ কখনো সাড়ে না। তখন আমি বলতাম তাহলে তো ভালোই। এ রোগ আমার হলে আমাকে আর স্কুলে যেতে হবে না। ওষুধ খেয়ে থাকব। আমার তখন স্কুল ফোবিয়া ছিল। স্কুলের প্রতি আমার একেবারেই আগ্রহ ছিল না। একবার এক শিক্ষক ক্লাসে বললেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চ্যাপ্টার তিনি পড়াবেন না। এতে আমি ভীষণ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলাম। ফলে ওই শিক্ষকের চক্ষুশুলে পরিণত হই। আমি ক্লাস এইটে পড়া অবস্থাতেই প্রতিবাদ করেছিলাম।

ছোটবেলা থেকেই ফুটবল, ক্রিকেট আর টেবিল টেনিসের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। এক সময় স্বপ্ন দেখতেন অনেক বড় ফুটবল তারকা হবেন। তাই ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় ঘর থেকে পালিয়ে চলে গিয়েছিলেন ফুটবলার হওয়ার জন্য।  কারণ পারিবারিক বিধিনিষেধের কারণে খেলাধুলা করার খুব একটা সুযোগ তিনি পেতেন না। ক্লাস এইটে পড়ার সময় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপ্টেন আকরাম খান নওফেলকে একটা ব্যাট উপহার দিয়েছিলেন। তখন তার মাথায় ঝোঁক উঠেছিল ক্রিকেটার হবেন। কিন্তু অবশেষে হলেন একজন সফল রাজনীতিবিদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান এ উপমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক যদি তার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের মাধ্যমে তার পেশাকে পরিচালিত করেন তাহলে ছাত্ররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পাশাপাশি নিজের পেশাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষককে নিরপেক্ষ মানসিকতার হতে হবে। ব্যক্তি জীবনে দুই সন্তান ও স্ত্রী এমা বার্টনকে নিয়ে সংসার করছেন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004270076751709