মরার পর টাকা দিয়ে কী করবে শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকমরার পর টাকা দিয়ে কী করবে শিক্ষকরা

শফিকুল ইসলাম |

অবসর ও কল্যাণের ৪ শতাংশ বর্ধিত চাঁদা দেয়া যাবে না মর্মে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকরা। তারা প্রশ্ন তোলেন, মরার পরে টাকা পেয়ে শিক্ষকরা কী করবেন? একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কমিটি প্রথা বাতিল ও শিক্ষা ব্যাংক প্রতিষ্ঠারও দাবি জানিয়েছেন তারা। 

বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো: মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গে অধিদপ্তরের সভাকক্ষে  এক বৈঠকে এসব কথা  বলেন রাজধানীর ৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। তারা অবসর ও কল্যাণের চার শতাংশ বর্ধিত চাঁদা না দিলে শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হবে না বলে শিক্ষা সচিব মো: সোহরাব হোসাইন যে কথা বলেছেন, তার সমালোচনা করেন।

আরও পড়ুন: পিঠের চামড়া হারানোর আশঙ্কায় শিক্ষক নেতারা

জাতীয়করণ, বৈশাখী ভাতা, উৎসব ভাতা, ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট কল্যাণ এবং অবসর ফান্ড, শিক্ষা ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রস্তাবের বিষয়ে মহাপরিচালক  অধ্যাপক মো: মাহাবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের প্রস্তাবের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে দেয়া হবে।  

ম্যানেজিং কমিটি বাতিলের বিষয়ে শিক্ষকদের প্রস্তাব নিয়ে অধ্যাপক মো: মাহাবুবুর রহমান বলেন, ম্যানেজিং কমিটির খারাপ দিক যেমন আছে, ভালো দিকও আছে। ভর্তি ও টিউশন ফির নামে অভিভাবকদের গলাকাটা বন্ধের আহ্বান জানান মহাপরিচালক। জবাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলেন, কতিপয় প্রাইভেট (নন-এমপিও) প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি আদায় করে, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তা করে না। 

বিসি এস আই আর উচ্চবিদ্যালয়ের ড. ইদ্রিস আলী শিক্ষা ব্যাংক স্থাপনের দাবি করেছেন।  আর্মি, বিজিবিসহ অন্যান্য অনেক পেশাজীবীদের ব্যাংক রয়েছে। তাই শিক্ষকদের জন্যও আলাদা ব্যাংকের দাবি করেছেন তিনি। এই ব্যাংকের প্রধান থাকবেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। প্রতি জেলায় এই ব্যাংকের একটি করে শাখা স্থাপনের প্রস্তাব করেন। তার এই প্রস্তাবের সমর্থন করেছেন আরও কয়েকজন প্রধান শিক্ষক। ড. ইদ্রিস বলেন, আজকের এই সভায় অবসর ও কল্যাণট্রাস্টের সদস্য-সচিবদ্বয় উপস্থিত থাকলে ভালো হতো।  

শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করার প্রস্তাব রেখে মীরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: নজরুল ইসলাম রনি বলেন, জাতীয়করণের দাবি পূরণ হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। আমরা চরম অবহেলিত। বৈশাখ গেলো কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকরা বৈশখী ভাতা পেলেন না। আমাদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব বোনাস দিতে হবে।  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ক্ষমতা খর্ব করতে হবে। সভাপতির চেক স্বাক্ষরের ক্ষমতা প্রত্যাহার করার প্রস্তাব রাখেন নজরুল ইসলাম রনি।

কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বাতিল চেয়েছেন। আবার কেউ কেউ ম্যানেজিং কমিটির পক্ষে বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ যেন পাঁচ বছর হয়।  

লালবাগের রহমত উল্লাহ মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: আবুল বাশার হাওলাদার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বাতিলের দাবি জানান। তিনি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আদলে পরিচালনা কমিটি রাখার প্রস্তাব দেন। তার এই প্রস্তাবের সমর্থন জানান অনেকেই।

মত বিনিময় সভায় কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার টাকা না পেয়ে ৭৫ হাজার শিক্ষক যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তার অবসান চাওয়া হয়। কল্যাণের ফান্ডে টাকা নেই কিন্তু নামমাত্র কয়েকজন শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে বাহবা নিতে চাওয়ার সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, কল্যাণট্রাস্টের টাকা খরচ করে কতিপয় শিক্ষকের বাড়ীতে হেলিকপ্টারে গিয়ে টাকা পৌছে দিয়ে মিডিয়ায় সুনাম কুড়ানোর চেষ্টা করছেন সদস্য-সচিব। অথচ তিনি তিন দফায় প্রায় নয় বছর ওই পদে রয়েছেন।   

কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার বর্ধিত চাঁদার হার বাস্তবায়নের পক্ষে কথা বলেছেন একাধিক প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ। তাদের মতে, সরকার তাদের বেতন বৃদ্ধি করেছেন  তাই চাঁদার হারও বৃদ্ধি করা যুক্তি সঙ্গত। তবে, সরকারি কলেজ ও হাইস্কুলের প্রধানদের বেতন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতনের বৈষম্য তুলে ধরেন তারা।   সৃজনশীল পদ্ধতি বাতিলের কথাও বলা হয়েছে। 

মতবিনিময় সভায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবু জর গিফারী কলেজের অধ্যক্ষ শিরিন আকতার বানু, মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু বকর চৌধুরী, বশির উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. বিল্লাল হোসেন, নাজনীন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা বেগম মুসলিম গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. কামরুল হাছান মুন্সী, তেজগাঁও স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান, আহমেদ বাওয়ানী একাডেমীর অধ্যক্ষ মো. মোশারফ হোসেন মুন্সি, অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রেজাউজ্জামান ভূঁইয়া। মিরপুরের রাজধানী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: মোজাম্মেল হক মিয়া, লালবাগের ওয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাসান গোলাম মোস্তফা, কলাবাগান লেকসার্কাস গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল, সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ.কে. এম. ওবাইদুল্লাহ, লালবাগের ইসলামিয়া বহুমুখী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন, আশরাফাবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, খিলগাঁও মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, রায়েরবাজার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা, ধানমন্ডির শুক্রবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন, আনন্দময়ী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহফুজা বেগম, হাম্মাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম আব্দুল্লাহ আল আমীন, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আকবর হোসেন, পোগোজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মনির হোসেন,  বাড্ডার সোলমাইদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাদাত হোসেন খন্দকার,  বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মির্জা লুৎফর রহমান, রামপুরা একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম তালুকদার,  মিরপুরের মডেল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক শুভাশীষ কুমার বিশ্বাস,  মোহাম্মদপুর গার্লস হাইস্কুলের  প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন সরকার।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070960521697998