চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছিল ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন। এর প্রভাবে সিটি করপোরেশনের প্রায় সব কাজেই ছিল ধীর গতি। নির্বাচনের সময় সবচেয়ে বেশি ধীর গতি দেখা গেছে মশার ওষুধ ছিটানো কার্যক্রমে। ফলে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে রাজধানীতে ফের শুরু হয়েছে মশার উপদ্রব। আর এই উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী। পাশাপাশি তাদের মধ্যে ফের বিরাজ করছে ডেঙ্গু আতঙ্ক।
রাজধানীবাসীরা বলছেন, গত ডেঙ্গু মৌসুমে (আগস্ট-নভেম্বর) মশার ভয়াবহতায় দুটি সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করেছিল এখন আর সেভাবে চোখে পড়ে না। এমনও এলাকা আছে যেখানে গত এক মাসেও কোনো মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। ফলে ঢাকা সিটিতে এই শীত মৌসুমে মশা বেড়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে মশার উপদ্রব অতিষ্ঠ করে তুলেছে নগরবাসীদের।
কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষকরা বলছেন, রাজধানীতে যেভাব মশার উপদ্রব দেখা দিয়েছে, তা যদি শিগগিরেই নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে আগামী দুয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বড়ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। শুষ্ক মৌসুমের কারণে সৃষ্ট মশার লার্ভা যদি বৃষ্টির পানির সংস্পর্শ পায় তবে মশার ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেন তারা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসারের নেতৃত্বে একদল গবেষক মশা নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষক দল এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে (ঝুঁকিপূর্ণ মশার প্রজনন স্থল) গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা মশার জন্মস্থান পর্যবেক্ষণ করে সেখান থেকে মশা সংগ্রহ করেন এবং ল্যাবে নিয়ে এসে শনাক্ত করেন।
এর মাধ্যমে তারা কিউলেক্স মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ করেন তারা। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহের জরিপে তারা দেখেছেন যে, ঢাকার বেশিরভাগ জায়গায় কিউলেক্স মশার ঘনত্ব ২০০-এর উপরে। সেই সঙ্গে ড্রেন, ডোবা ও নর্দমাতে প্রচুর লার্ভাও দেখতে পেয়েছেন গবেষকদল।
গবেষকরা জানান, বর্তমানে রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে কিউলেক্স মশা। এই মশা ড্রেন, ডোবা, নর্দমা ও পচা পানিতে জন্মায়। অনেকদিন ধরে কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মশা জন্মানোর স্থানগুলোতে পানির অর্গানিক বস্তু বেড়ে গেছে। এই অর্গানিক বস্তু কিউলেক্সের লার্ভা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সারাদেশে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে, যা মশা জন্মানোর জন্য উপযুক্ত সময়। এই সময়ের পর যেকোনো সময় যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে কিউলিক্স মশা কিছুটা কমবে। কিন্তু ঘটবে উল্টো ঘটনা; বেড়ে যাবে এডিস বা ডেঙ্গু মশার প্রবণতা।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাসার বলেন, ‘গত কয়েকদিনে মশা যে পরিমাণে ডিম দিয়েছে সেগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রূপ নেবে। যদি জরুরি ভিত্তিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া না হয় তবে বড়ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। সেইসঙ্গে মশা জন্মানোর স্থানগুলোতে লার্ভিসাইড ছিটানো না হলে মার্চে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখা দিতে পারে।’
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘মশার ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেইসঙ্গে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে আমরা বিশেষ প্রোগ্রাম শুরু করব। আশা করছি এর মাধ্যমে আমরা মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে একটি স্পেশাল ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করেছি। এর মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এর ফলে বর্তমানে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
মশার ওষুধ ছিটানো যেহেতু চলমান প্রক্রিয়া তাই গবেষকদের তথ্যটি আমলে নিয়ে কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে বলে জানান জামাল মোস্তফা।