বরিশাল সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা পারভীনের নেতৃত্বে কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে মারধরের ঘটনা ঘটে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষার কাছে অভিযোগ করে বলেন, বরিশাল সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা পারভীন কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আইসিটির শিক্ষক। তিনি বিদ্যালয়ের সকল কাজে প্রভাব খাটাচ্ছেন। তিনি তাঁর বড় ভাই মো. নূরুল ইসলাম বাচ্চুকে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি করার চেষ্টা চালান। এ ছাড়া পুরো স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে বিদ্যালয়ের দুটি শূন্য পদের একটিতে ছোট ভাই রাসেল মুনশীর স্ত্রীকে অফিস সহকারী এবং বড় ভাইয়ের ছেলে রানাকে পিয়ন হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাপ দেন। স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজেও প্রভাব খাটাতে চান। এইসব কাজ করতে না পেরে তিনি তার ছোট ভাই মনির মুনশী, হৃদয় মুনশী ও স্থানীয় বাসিন্দা খোকন দিদারকে নিয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় তার উপস্থিতিতে খোকন দিদার বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ কেন অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে তার কারণ জানতে চান। সরকারি নিয়মে অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে বলার সঙ্গে সঙ্গে খোকন দিদার তাকে মারধর করেন। এ সময় অন্য শিক্ষকরা তাকে থামাতে গিয়েও হিমশিম খায়।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য সাবেক সভাপতি সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সহযোগিতায় ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় জেলা পরিষদ। ওই বরাদ্দের টাকা ব্যয় করতে প্রকল্প সভাপতি হতে চেয়েছিলেন রেহানা পারভীন। কিন্তু ওই প্রকল্পের সভাপতিও করা হয় মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রমকে। তাতেও তিনি ক্ষিপ্ত হন।
স্থানীয়রা জানান, কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিগত কমিটির সভাপতি ছিলেন বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। ওই কমিটি মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাঁর নির্দেশে অ্যাডহক কমিটি করা হয়। সাদিক আবদুল্লাহর ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় তিনি আর সভাপতি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তিনি মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রমকে কমিটির সভাপতি করার জন্য বলেন। বর্তমানে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ। ওই কমিটি গত বছর অক্টোবর মাসে করা হয়েছে। কিন্তু মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় নিয়মিত কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। তাই পুনরায় অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই অ্যাডহক কমিটি গঠন করায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও স্কুলের সহকারী শিক্ষক রেহানা পারভীন।
এ ব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেহানা পারভীন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, আমাদের অনুরোধেই কমিটিতে মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রমকে আনা হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল তাকে ছয় মাসের অ্যাডহক কমিটিতে না এনে নিয়মিত কমিটির সভাপতি করা হোক। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বারবার অ্যাডহক কমিটি গঠন করায় অভিভাবক সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়েছেন। গতকাল ২০-২৫ জন অভিভাবক সেই বিষয়টি জানতে স্কুলে এসেছিল। সেখানে কমিটি গঠন নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বাকবিতণ্ডা হয়েছে। মারধরের ঘটনা ঘটেনি। এটা প্রধান শিক্ষক বাড়িয়ে বলেছেন।
তিনি আরো বলেন, আমি কখনোই আমার ভাইকে সভাপতি বানানোর কথা বলিনি। আর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেছে। তাকে ক্লার্ক পদে নিয়োগ নিতে বলবো কেন? আর বর্তমানে ইচ্ছে করলেই তো নিয়োগ দেওয়া যায় না। তারপরও কেন ওই অভিযোগ তোলা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্যও তিনি অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলী সেখ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।