বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজের মাকে নির্যাতন ও ঘর থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ওই শিক্ষককে সাবধান করে দিলে বৃদ্ধা মাকে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলম। নির্যাতন ও অপমান সহ্য করতে না পেরে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বিচার দাবি করেছেন বৃদ্ধা মা জাহানার বেগম (৮০)। বিষয়টি তদন্ত চলছে বলে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন।
অভিযুক্ত মাসুদ আলম বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত আলী আকবরের ছেলে ও ৪৬ নং শিংড়াবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক কর্তৃক বৃদ্ধা মাকে পিটিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে শিক্ষক সমিতি ও সুশীল সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দাখিল করার সময় জাহানার বেগম সাংবাদিকদের জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি তার স্বামীর নির্মাণ করা ঘরে ছেলে মাসুদ আলমের সঙ্গে থাকতেন তিনি। কিন্তু প্রায়ই তাকে ঘর থেকে নেমে যেতে বলে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করত মাসুদ আলম ও তার স্ত্রী। সম্প্রতি মাসুদ আলম ও তার স্ত্রী মোসা. রুমা আক্তার জাহানারা বেগমকে বেধমভাবে পিটিয়ে গুরতর আহত করে ঘর থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি জাহানারা বেগম স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানালে তিনি ঐ শিক্ষককে ডেকে সাবধান করে দেন। এরপর সংসদ সদস্যদের বাসা থেকে বের হয়ে পাথরঘাটা কলেজের সামনে আবারো মা জাহানারা বেগমকে মারধর শিক্ষক মাসুদ আলম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত জানালে মাসুদ আলম ক্ষিপ্ত হয়ে পুনরায় জাহানারা বেগমকে মারধর করেন। এতে স্বামীর ঘরে ঠাঁই না পেয়ে অবশেষে বাড়ির পাশে দেবরের ঘরে আশ্রয় নেন জাহানার বেগম। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, তার পিতা আলী আকবর ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষক মাসুদ আলমকে কাকচিড়া পুলিশ ফাড়িতে সোপর্দ করেন। এছাড়া এর আগে শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। এ দায়ে তাকে জরিমানাও করা হয়। শিক্ষক মাসুদ আলমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, মাদক ও সুদের ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
নির্যাতনের কারন জানতে চাইলে মা জাহানারা বেগম দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, জোরপূর্বক সম্পত্তি লিখে নিতে চাইলে তা না দেওয়ার কারনে আমাকে মারধর করে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদ আলমের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালককে সুপারিশ প্রদান করেছেন বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জমি সংক্রান্ত ঘটনায় মায়ের সঙ্গে একটু বিরোধ আছে।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, শিক্ষক মাসুম আলমের বিরুদ্ধে আগেও নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। আর প্রাথমিকভাবে মাকে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অধিনে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।