মাতৃভাষার অধিকার - দৈনিকশিক্ষা

মাতৃভাষার অধিকার

যতীন সরকার |

মে মাসের একটি দিনকে 'দিবস'-এ পরিণত করেছিল শিকাগোর শ্রমজীবী মানুষের রক্ত। আর 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো' ফেব্রুয়ারির একুশেও হয়েছিল তেমনই একটি দিবস। শিকাগোর সীমানা ছাড়িয়ে মে দিবস আন্তর্জাতিক হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই, আমরাও সে দিবসটি পালন করে এসেছি একান্ত গর্বে ও গৌরবে। দু'হাজার সাল থেকে আমার একুশে ফেব্রুয়ারিও আর কেবল আমার রইল না, হয়ে গেল বিশ্বের। যে দিবসটি ছিল একান্তই আমার জাতীয়, সেটিই হয়ে গেল আন্তর্জাতিক।

এতে আমার জাতিটিও আন্তর্জাতিকতার গৌরবে ভূষিত হলো। কাজেই এ রকমটি ঘটার সংবাদ যখন পেলাম, তখন আমার আনন্দ যে একেবারে বাঁধভাঙা জোয়ারের রূপ ধারণ করেছিল, তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকতে পারে না। আমার মতো সকল বাঙালিই এ খবরে আনন্দে উদ্বেল হয়েছিল, উৎসবে সে আনন্দের প্রকাশ ঘটিয়েছিল। সে আনন্দই তো আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে প্রতি বছরের একুশে ফেব্রুয়ারিতে। একুশে যে একটি শোক দিবস সে কথা আমরা বহু আগেই ভুলে গিয়েছি। কারণ শোককে আমরা যথার্থই শক্তিতে পরিণত করতে পেরেছি বলে এ দিবসটি হয়ে গেছে আমাদের আত্মশক্তির উৎসবময় প্রকাশের দিন। এ প্রকাশ এখন থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির আলো পেয়ে আরও দীপ্তিময় হয়ে উঠল।

কিন্তু প্রশ্ন : আমাদের এই জাতীয় দিবসটির আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভের ব্যাপারে আমরা ক'জন বাঙালি কতটুকু অবদান রেখেছি? অবদান রাখা তো দূরের কথা, দুদিন আগেও কি আমরা ভাবতে পেরেছি যে এ দিবসটি বিশ্ব-স্বীকৃতি লাভের যোগ্য?  ব্যক্তিগতভাবে আমার একান্ত নিজের দিকে তাকালেই দেখি : প্রতি বছর একুশে উদযাপনের উপলক্ষে অনেক আবেগ ও গর্বের কথা বলেছি, কখনও কখনও মে দিবসের সঙ্গে এর তুলনাও করেছি, কিন্তু কোনোদিন কোনো বক্তৃতায় বা লেখায় দিবসটিকে মে দিবসের সমমর্যাদায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেবার দাবি উত্থাপন করিনি। আমার মতো ধীশক্তিহীন নগণ্য মফস্বলি মানুষ তো দূরের কথা, আমাদের জাতীয় পর্যায়ের ধীমান ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদেরও কেউ তেমনটি করেছেন বলে শুনিনি।

যদি কেউ করেও থাকেন, তবু সেটি একটি জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়নি। আর রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে যে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে তো কোনো সন্দেহই নেই। উদ্যোগটি নিলেন বিদেশে বসবাসরত কতিপয় মাতৃভাষাপ্রেমী মানুষ। বিদেশে বিভাষীদের মধ্যে বাস করলেই বোধহয় স্বদেশ ও স্বভাষা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ে, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার গুরুত্বও উপলব্ধি হয়। সেই সচেতনতা ও উপলব্ধি থেকেই কানাডা প্রবাসী বিভিন্ন ভাষাভাষী একদল মানুষ মাতৃভাষা-প্রেমিক সংগঠন গড়ে তোলেন। এদের মধ্যে আছেন ইংরেজিভাষী জাসন মোরিন ও সুসান হভগিন্স, ক্যান্ডানিজভাষী ডক্টর কেলভিন চাও, জার্মানভাষী বিনেতে মার্কিস, হিন্দিভাষী কল্পনা যোশি এবং বাংলাভাষী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামসহ আরও অনেকজন। আপন আপন মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকেই এরা সকলে মাতৃভাষার জন্য প্রাণোৎসর্গকারী বাঙালি শহিদদের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেন। এবং তাদেরই প্রয়াসে বাঙালি জাতির শহিদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি পেয়ে গেল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান।

কিন্তু এই সম্মান যে আমাদের মাথায় অনেক ভারি বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, সে বিষয়ে কি আমরা সচেতন? মনে তো হয় না। যদি সচেতন হতাম, তবে সেই সচেতনতার অভিব্যক্তি সর্বত্র দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়ে উঠত। অথচ, তার বদলে সকলের সামনে আমরা আমাদের একটি নিষ্ক্রিয় আত্মপ্রসন্ন রূপই তুলে ধরেছি। আত্মপ্রসন্নতা আমাদের সীমাহীন অহংকারে ডুবিয়ে দিয়েছে। আর অহংকার যে পতনের মূল- সে সত্যও আমরা বিস্মৃত হয়েছি। তা না হলে আমরা কেবল অতীত গৌরবের জাবর না কেটে বর্তমান ও ভবিষ্যতের দায়িত্বের কথাও ভাবতাম; অহংকারে স্ফীত হওয়ার বদলে দায়িত্ব চেতনার ভারে বিনয়ী হয়ে উঠতাম।

কিন্তু বিনয়নম্র না হয়ে আমরা হয়ে উঠেছি একান্ত দুর্বিনীত। শুধু দায়িত্ব চেতনাই হারিয়ে ফেলিনি, আমরা আজ সর্বনাশের অতলে তলিয়ে যাচ্ছি। ভাষার জন্য আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা যে স্বাধীনতার অমৃত ফল লাভ করেছিলাম, সেই স্বাধীনতার খোলসটাই কেবল এখন অবশিষ্ট আছে, এর শাসটা ইতিমধ্যে প্রায় উবে গেছে। নিষ্ক্রিয় অহংকারের মাদকে আমরা বুঁদ হয়ে থেকেছি। আর এই সুযোগে আমাদের স্বাধীনতার শত্রুরা বাঙালির রাষ্ট্র ক্ষমতার মঞ্চটিতেও গাঁট হয়ে বসে গেছে। সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আমাদের স্বাধীনতাকে বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল, সেই মার্কিন প্রেমের দরিয়ায় আমরা নিজেরাই এখন হাবুডুবু খাচ্ছি।

সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের চরণে আজ আমরা নতমস্তক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা রক্ষার জন্য দায়িত্ব চেতনার স্থান দখল করে নিয়েছে তথাকথিত আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজির প্রতি সীমাহীন আসক্তি। যেকোনো ভাষাই যে আসলে কোনো না কোনো জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা তথা জাতীয় ভাষা, এবং আন্তর্জাতিক ভাষা বলে কোনো ভাষার অস্তিত্বই যে থাকতে পারে না- বিশ্বায়নের ধাক্কায় এই অবিতর্কিত বৈজ্ঞানিক সত্যটিকেই আমরা ভুলে বসে আছি। আর বিশ্বায়ন কথাটি যে সাম্রাজ্যবাদের নিছক স্তুতি ছাড়া আর কিছুই নয়- এই সত্যটির দিক থেকেও আমরা চোখ ফিরিয়ে রেখেছি।

এ রকম সত্যান্ধ হওয়ার ফলেই মাতৃভাষার প্রতি আমাদের অবজ্ঞা একেবারে কুণ্ঠাহীন হয়ে উঠেছে। এ রকম কুণ্ঠাহীন অবজ্ঞার বশেই ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠিয়ে আমরা আভিজাত্য-গৌরবে টইটুম্বুর হয়ে উঠি। মাতৃভাষাকে নিগড়মুক্ত করার লক্ষ্যে সংগ্রামে নেমেই মাতৃভূমিকে বিজাতীয় শাসনমুক্ত করে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছে যে জাতি, সে জাতিই যখন মাতৃভাষার বদলে পরভাষায় কৃতবিদ্য হওয়াকেই কৃতির পরাকাষ্ঠা বলে বিবেচনা করে, সে জাতির পতন ও সর্বনাশকে তখন ঠেকিয়ে রাখবে কে?

আমরা অবশ্যই পরভাষার বিদ্বেষী নই, কোনোকালেই তেমন ছিলাম না। অতীতকালেও আমরা বিভিন্ন পরভাষার সঙ্গে সম্প্রীতি রক্ষা করে চলেছি। বিভিন্ন ভাষার ভাণ্ডার থেকে রত্নমানিক আহরণ করে মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করে তুলতে কোনোকালেই আমাদের কুণ্ঠা ছিল না। ইংরেজ জাতির অধীনতা-পাশে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম যখন, তখন আমরা স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজ শাসনের বিরোধিতা করেছি, কিন্তু ইংরেজি ভাষার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করিনি। বরং সেকালের বাংলার সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, 'অনন্তরত্ন-প্রসূতি ইংরেজি ভাষার যতই অনুশীলন হয়, ততই ভালো।' কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি 'সুশিক্ষিত বাঙ্গালিদিগের অভিপ্রায় সকল বাঙলা ভাষায় প্রচারিত' করার গুরুত্ব ও আবশ্যকতা সম্পর্কে সকলকে সচেতন করে দিয়েছেন।

আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তো ইংরেজ আমলে 'পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার' এবং 'সেথা হতে সবে আনে উপহার'- এমনটি দেখে আনন্দিতই হয়েছিলেন। কিন্তু পশ্চিমের ইংরেজি জাহাজ-বাহিত জ্ঞানকে যে বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছিয়ে দিতে হবে দেশিভাষা তথা মাতৃভাষার ডিঙ্গি নৌকার সাহায্যেই- এ কথাটা তিনি নানা ভাষায় বারবার দেশের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর কবিগুরুর আশীর্বাদধন্য বিশ্বখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর নির্দিব্ধ প্রত্যয় ছিল, 'বিদেশি ভাষাই আমাদের দেশে সাক্ষরের সংখ্যাবৃদ্ধির অন্তরায়। বিদেশি ভাষা শিক্ষার বাহন হলে মুখস্থ করবার প্ররোচনা দেয় ছাত্রদের এবং এর ফলে তাদের মৌলিক চিন্তার প্রসার ঘটতে বাধার সৃষ্টি করে।'

সর্বস্তরে শিক্ষার বাহন হবে বাংলা ভাষা- বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ বা সত্যেন বসুর এমন অভীপ্সা বিদেশি ইংরেজ শাসনে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। কিন্তু রক্তের মূল্যে অর্জিত স্বাধীন দেশে কেন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না?

হচ্ছে না এ কারণে যে : বিদেশি শাসকদের অপসারণের পরও দেশের জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যারা শাসন হাতে নিয়েছে তারা বিদেশি শাসকদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে মাত্র, তাদের শ্রেণিচরিত্র বা শ্রেণিদৃষ্টির একটুও বদল হয়নি। বিদেশি কেতাতেই তারা শাসন করছে, চিরকাল যাতে এমনটি করে যেতে পারে সে লক্ষ্যেই তারা পূর্বতন বিদেশি শাসকদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে রাখে। সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাসত্ব করাই তাদের শ্রেণিস্বার্থের রক্ষাকবচ, তাই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের প্রতি তাদের নিঃশর্ত আনুগত্য। এককালীন আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদের বাহন ইংরেজিও তাই তাদের একান্ত মান্য আন্তর্জাতিক ভাষা।

বিশেষ করে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয়ের পর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর শাসকগোষ্ঠী ও কর্তৃত্বশীল শক্তির কাছে ইংরেজি ভাষাই এখন 'জাতে ওঠা'র একমাত্র সিঁড়ি। সেই সিঁড়ি বেয়ে একটি কৃত্রিম আভিজাত্যের মঞ্চে উঠে বিপুলসংখ্যক অনভিজাত শাসিত গোষ্ঠীর মানুষজনকে সঙ্গে তারা স্বাতন্ত্র্য ও ব্যবধান তৈরি করে নেয়। তাই তাদেরই প্রবর্তনায় স্বাধীন বাংলাদেশেও ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রমরমা অবস্থা, এবং বাংলা ভাষা-বিদ্বেষী একটি ক্ষুদ্র অথচ প্রতাপান্বিত গোষ্ঠীর সদম্ভ পদচারণা। সপ্তদশ শতকের বাঙালি কবি আবদুল হাকিমের ভাষায়, 'যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।' বলে গাল দিলেও এদের কিছুই যায় আসে না।

এই কর্তৃত্বশীল গোষ্ঠীটির স্বার্থেই স্বাধীন বাংলাদেশে অগণন শহীদের রক্তে লেখা রাষ্ট্রীয় সংবিধানটির বিধানও অনবরত অনায়াসে লজ্জিত হয়। 'প্রজাতন্ত্রের ভাষা হবে বাংলা'-সংবিধানে স্পষ্টভাষায় এমন কথা লেখা থাকলেও, এবং প্রজাতন্ত্রের সকলের জন্য অভিন্ন ধারার শিক্ষা প্রদানের কথা সংবিধানে বিধিবদ্ধ হলেও দেশে বিভিন্ন ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু আছে। সে সবের অনেককে সরকারি অর্থানুকূল্যও প্রদান করা হচ্ছে, সরকারি অনুমোদনেই ভাগ্যবানের সন্তানদের জন্য এখানে-ওখানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল-কলেজ শিকড় গেড়ে বসেছে।

রাষ্ট্রের উচ্চ আদালতে তো চলছে ইংরেজিরই সর্বাত্মক ব্যবহার। এ ব্যবস্থাটিও যে সংবিধানসম্মত নয়, সে কথা অনেকেই বলছেন। একজন সাবেক বিচারপতি- মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী তো 'উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পরিবর্তে ইংরেজির ব্যবহারকে নাগরিক ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন' বলেই মতপ্রকাশ করেছেন। একটি সংবাদপত্রের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি আরও বলেছেন-

'আদালত একটি জনস্থান (পাবলিক প্লেস)। বিচারপতি রায়টি পড়ে শোনান। কিন্তু রায়ে কী বলা হলো, তা যদি আদালতে উপস্থিত বিচারপ্রার্থী বুঝতে না পারেন তাহলে সেটা আরবিতে ফতোয়া জারির মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কেননা ইংরেজিতে রায় দেয়ার কারণে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না তাকে কী শাস্তি দেয়া হলো এবং কেন দেয়া হলো। এ ছাড়া আদালতে শুধু রায় দিলেই চলে না, তা যাতে সকলে মেনে চলতে পারে সে বিষয়টাও ভাবতে হবে। এ জন্যই উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় দেয়া প্রয়োজন।' (আমাদের সময় ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৬)

এ রকম অনেক প্রয়োজনই তো রয়েছে। সে সব প্রয়োজন নিশ্চয়ই আপনা থেকে সাধিত হয়ে যাবে না। যেভাবে অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মাতৃভূমিকে পরশাসন থেকে মুক্ত করেছি, সে রকম সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কেবল আমাদের সকল প্রয়োজন পরিপূরণ করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসরূপে একুশে ফেব্রুয়ারির বিশ্ব-স্বীকৃতি সেই সংগ্রামেরই তাগিদ নতুন করে নিয়ে এসেছে।

মাতৃভাষার অধিকার তো মানবাধিকারেরই অন্তর্গত একটি বিষয়। পৃথিবীর সকল জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাগুলো শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান করবে, এক ভাষা অন্য ভাষাকে দমনের বদলে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, এক ভাষার সমৃদ্ধি আরেক ভাষাকে ঋদ্ধ করে তুলবে, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকেও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বের সকল মানুষ সক্রিয় প্রয়াসে নিয়োজিত হবে- এই সবই তো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্মবাণী। সেই মর্মবাণীকে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করার ও তাকে কর্মে রূপায়িত করে তোলার সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব তো 'একুশে'র দেশের মানুষ হিসেবে আমাদেরই।

বিশ্বায়নের ছুতায় কোনো পরভাষাই যাতে আমার মাতৃভাষার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশকে ব্যাহত করতে না পারে- সে ব্যাপারে সকলের থাকতে হবে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা। বিশ্বের সাথে যোগযুক্ত থাকার জন্য ইংরেজির মতো একটি সমৃদ্ধ ভাষার অনুশীলন আমরা অবশ্যই করব, এবং সেটি ভালোভাবেই করব। আমাদের মাতৃভাষা বাংলার সঙ্গে সঙ্গে সকলের জন্যই থাকবে ইংরেজি শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থা। ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষা থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল সম্পদ আহরণ করে আমাদের মাতৃভাষার জ্ঞানভাণ্ডারকে প্রতিনিয়তই সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। কিন্তু একটি ইংরেজি শিক্ষিত সুবিধাভোগী গোষ্ঠী জনসাধারণের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে, এমনটি কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না।

প্রচণ্ড গণরোষের জোয়ারে ওই গোষ্ঠীটির কায়েমি স্বার্থকে ভাসিয়ে দিতে হবে, ইংরেজি-মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পণ্যশালায় পরিণত বিদ্যাবিক্রয় কেন্দ্রের প্রসার অবশ্যই রুখতে হবে, দেশের সকল নাগরিকের জন্য অভিন্ন শিক্ষাপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে দেশের সকল ক্ষুব্ধ জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে সক্রিয় সহযোগিতা দানের দায়িত্ব বহন করতে হবে আমাদেরই।

আমাদের এ রকম সব দায়িত্ব চেতনা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মধ্য দিয়েই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে উঠতে পারে। 

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066878795623779