মাতৃভাষার পাঠ্যবইয়ে পাহাড়ি শিশুরা সুফল পাচ্ছে না  - দৈনিকশিক্ষা

মাতৃভাষার পাঠ্যবইয়ে পাহাড়ি শিশুরা সুফল পাচ্ছে না 

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবে এ কার্যক্রমের সফলতা আসছে না। তবে শুরুতে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাঙামাটির সাত উপজেলায় ৫০টি বিদ্যালয়ে বেসরকারি একটি সংস্থা থেকে ৫০ জন মাতৃভাষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। এসব শিক্ষক দীর্ঘ এক বছর বিনা বেতনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, ইতিমধ্যে সাড়ে ৩০০ শিক্ষককে ১৪ দিনের মাতৃভাষায় পাঠদানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও সাড়ে ৩০০ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে মাত্র ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ ১১ ভাষাভাষী ১৩টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তিতেও পাহাড়ের আদিবাসী শিশুদের বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া রোধ ও জনগোষ্ঠীদের শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে নিতে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা পদ্ধতি চালুর কথা রয়েছে। এ ছাড়া ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে আদিবাসী শিশুদের মাতৃভাষায় পড়ালেখা করার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। তবে দীর্ঘ দাবি-দাওয়া ও সমালোচনার পর অবশেষে ২০১৭ সালের চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা ও সাত্রী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক শিশুদের হাতে নিজস্ব মাতৃভাষায় বই তুলে দেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও এ জেলার ৯৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণিতে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা শিশুদের জন্য ২৫ হাজার ৬৬৬টি নিজস্ব মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব বিদ্যালয়ে শিশুদের পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হলেও দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যবই পৌঁছেনি। যার কারণে মাতৃভাষায় পাঠদানের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

মাতৃভাষার পাঠ্যপুস্তক চালুর শুরুতে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইনিশিয়েটিভ ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (আইএসডি) থেকে ৫০ জন প্রশিক্ষিত শিক্ষককে রাঙামাটির বিভিন্ন বিদ্যালয়ে চাকমা ও মারমা ভাষার বর্ণমালা পাঠদানের জন্য অনুমোদন দেয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। এর মধ্যে চাকমা ভাষার বর্ণমালা শিক্ষদানের জন্য ৪৪ জন এবং মারমা ভাষায় ৬ শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব শিক্ষক প্রতি সপ্তাহে একদিন (বৃহস্পতিবার) সাত উপজেলার ৫০টি বিদ্যালয়ে দীর্ঘ এক বছর ধরে বিনা বেতনে মাতৃভাষায় বর্ণমালা পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ৫০ শিক্ষকের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে গত বছর জুলাই মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ঝুলে রয়েছে। শিক্ষকরা ভাতা না পাওয়ায় তাদের পরিবার-পরিজনের আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।

কবি অরুণ রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাঁঠালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকমা বর্ণমালার পাঠদানের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তরুণ জ্যোতি চাকমা ও গীতা চাকমা বলেন, গত বছর থেকে বিনা বেতনে তারা চাকমা ভাষার বর্ণমালার পাঠ্যবইয়ের পাঠদান করে যাচ্ছেন। এভাবে কতদিন বিনা বেতনে পাঠদান করে যাবেন তারা জানেন না। তারা সরকার কাছে চাকরি জাতীয়করণ ও বেতন-ভাতা চালুর দাবি জানিয়েছেন।

ইনিশিয়েটিভ ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের (আইএসডি) নির্বাহী পরিচালক প্রণব চাকমা জানান, মাতৃভাষার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধার জন্য আইএসডি থেকে ৫০ প্রশিক্ষিত শিক্ষককে জেলার সাত উপজেলার ৫০টি বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে নিয়োগ দিয়েছি। তবে দীর্ঘ বছর ধরে সংস্থার পক্ষ থেকে বেতন চালানোর পর আর তাদের বেতন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ৫০ শিক্ষকের বেতন-ভাতা চালু ও জাতীয়করণ করার জন্য আবেদন করেছি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে গত বছর জুলাই মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আটকে রয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন দিলে শিক্ষকরা বেতন পাবেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) রওশন আলী বলেন, এখনও প্রশিক্ষিত শিক্ষক তৈরি করতে পারিনি বটে, তবে গত বছর জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৩৬২ শিক্ষককে ১৪ দিনের মাতৃভাষার বর্ণমালার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ বছরও খুবই তাড়াতাড়ি আরও ৩৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দিতে পারব।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বলেন, যে বিদ্যালয়ে বেশি চাকমা শিক্ষার্থী রয়েছে, সেখানে চাকমা শিক্ষক দিয়ে মাতৃভাষায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এভাবে অপর দুটি ভাষায় একইভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যদি ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ কোর্সটি কম হয় তাহলে মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032460689544678