মাত্র ১০ দেশে ৮১ ভাগ করোনা রোগী, দক্ষিণ এশিয়ায় কম - দৈনিকশিক্ষা

মাত্র ১০ দেশে ৮১ ভাগ করোনা রোগী, দক্ষিণ এশিয়ায় কম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এশিয়া মহাদেশ থেকে শুরু হলেও এখন ইউরোপের ওপর চেপে বসেছে নতুন করোনাভাইরাস। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির শিকার ৮১ শতাংশ রোগীই মাত্র ১০টি দেশের। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে করোনার প্রকোপ চলছে কয়েকটি দেশে, যদিও তা এখনো উদ্বেগজনক নয়। আর আফ্রিকায় ভাইরাসটি তেমন সুবিধা করতে পারছে না। দক্ষিণ এশিয়াতেও এর অবস্থান বেশ দুর্বল। বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মহিউদ্দিন ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বিশ্বজুড়ে ৮ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩২ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গত কয়েক মাসে করোনা-আক্রান্তের এসব তথ্য বিশ্লেষণ করেছে । এতে দেখা যায়, করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় আছে মাত্র শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ অঞ্চলের ৮টি দেশে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৩৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীন থেকে ইউরোপ ঘুরে ভাইরাসটি দক্ষিণ এশিয়ায় এসেছে। এর মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের কারণে করোনা দুর্বল হয়েছে। এ অঞ্চলের আবহাওয়াও কাজ করেছে করোনার প্রতিকূলে।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) গবেষক কাশিম বুখারিসহ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর করা গবেষণা বলছে, আক্রান্ত দেশগুলোর গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৪ থেকে ৯ গ্রাম। আর এশিয়ার যে দেশগুলোয় বর্ষা মৌসুম আছে, সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়তো কম হবে। কারণ এই অঞ্চলে প্রতি ঘনমিটারে আর্দ্রতার পরিমাণ ১০ গ্রাম পর্যন্ত।

আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোয় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব দেশেই এক থেকে দেড় মাস পরে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র, ২৯ জানুয়ারি ইতালি, ৩০ জানুয়ারি স্পেন, ২৬ জানুয়ারি জার্মানি ও ২৩ জানুয়ারি ফ্রান্সে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে দেশগুলোয় করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চে।

ওই একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আঘাত হানে করোনা। ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে নেপাল। গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৫ জন। ২৬ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হয় শ্রীলঙ্কায়। এখন সেখানে রোগীর সংখ্যা ১৪৩ জন। ২৯ জানুয়ারি ভারত, ২৩ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান, ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান, ৫ মার্চ ভুটান, ৬ মার্চ মালদ্বীপ ও সর্বশেষ ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।

করোনা শনাক্তের শুরুতেই লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করে নেপাল ও ভুটান। এর ফল পেয়েছে দেশ দুটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ও ভুটানে স্থানীয়ভাবে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। দুই দেশের আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিদেশফেরত। ভুটানে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র চারজন। একটু দেরিতে হলেও লকডাউন ঘোষণা করে অনেকটা প্রতিরোধ করেছে মালদ্বীপ। দেশটিতে শনাক্ত হয়েছেন ১৮ জন। এ তিনটি দেশে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ মারা যাননি।

তবে ভাইরাস প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে আলোচিত লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় কিছুটা বিপাকে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো। এ কারণেই পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছে রোগীরা। গতকাল পর্যন্ত পাকিস্তানে ১ হাজার ৯৩৮, ভারতে ১ হাজার ৩৯৭, আফগানিস্তানে ১৭৪, শ্রীলঙ্কায় ১৪৩, বাংলাদেশে ৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

ভারতের পদ্মভূষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক জি পি নাগেশ্বর রেড্ডি ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন ও ভারতে ভাইরাসটির জিনগত বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করা হয়েছে। ইতালিতে ছড়ানো ভাইরাসের সঙ্গে ভারতে ছড়ানো ভাইরাসের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভারতের ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে কিছু কিছু জিনগত পরিবর্তন হয়েছে। স্পাইক প্রোটিনের মাধ্যমেই ভাইরাসটি মানব শরীরের কোষে সংযুক্ত হয়। ভারতের ক্ষেত্রে কম যুক্ত হয়েছে, যার অর্থ, এটি দুর্বল হয়ে পড়েছে।

৮১ শতাংশ রোগী ১০টি দেশের
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির হিসাবে, এ পর্যন্ত ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগীর ৮১ শতাংশ মাত্র ১০টি দেশের। এর মধ্যে ৬টি দেশ ইউরোপের এবং ৩টি এশিয়ার। তবে শীর্ষে রয়েছে উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এককভাবে দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬২৪ জন। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইরান, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড ও তুরস্ক মিলে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯৯ জনে।

৫৩ শতাংশ রোগী ইউরোপের
নানা চেষ্টা করেও করোনার ‘চর্বি’ যেন গলাতে পারছে না বিশ্বে শীতপ্রধান অঞ্চল হিসেবে পরিচিত ইউরোপের দেশগুলো। জ্যামিতিক হারে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে এ অঞ্চলে। গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া রোগীর ৫৩ শতাংশ ছিল ইউরোপের। চিহ্নিত রোগী এখন ৪ লাখ ৫২ হাজার ১৪১ জন। প্রতি মুহূর্তে এ সংখ্যা বাড়ছে। ইউরোপে এ পর্যন্ত মারাই গেছে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।

উত্তর আমেরিকাকে ভোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ইউরোপের পর সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী এখন উত্তর আমেরিকায়। এ অঞ্চলের ২৪টি দেশে করোনা রোগী ২ লাখ ২ হাজার ৭৬৯ জন। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২৪ জন। সব মিলিয়ে উত্তর আমেরিকায় থাকা ২৪ শতাংশ রোগীর ২২ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর আছে কানাডা। সেখানে রোগী ৮ হাজার ৫৬৯ জন। বাকি ২২টি দেশে রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৫৫৪ জন।

এমআইটির গবেষণা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের দিকের রাজ্যগুলোর তাপমাত্রা কম এবং সেখানে সংক্রমণের হার অপেক্ষাকৃত উষ্ণ দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর তুলনায় বেশি।

আফ্রিকায় পাত্তা পাচ্ছে না করোনা
আফ্রিকা মহাদেশের ৪৬টি দেশে ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত রোগী পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৭৭০ জন। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় এককভাবে আছে ১ হাজার ৩৫৩ জন। ৩০টি দেশে আছে ৫০-এর কম রোগী। আর ১০টি দেশে রোগী আছে ৭ বা তার কম। পরিসংখ্যান বলছে, এ অঞ্চলে তেমন পাত্তা পাচ্ছে না করোনা। বিশ্বজুড়ে চিহ্নিত রোগীর মাত্র ১ শতাংশ আছে এ মহাদেশে।

আক্রান্তের ২ শতাংশ দক্ষিণ আমেরিকায়
মোট করোনা রোগীর ২ শতাংশ আছে দক্ষিণ আমেরিকায়। এ অঞ্চলের ১৫টি দেশে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৫৭৪ জন। এর মধ্যে শুধু ব্রাজিলে পাওয়া গেছে পাঁচ হাজার ৮১২ জন। ২ হাজার ছাড়িয়েছে চিলি ও ইকুয়েডরে। ১ হাজার ছাড়িয়েছে আর্জেন্টিনায়। এরপর কলম্বিয়ায় ৯০০ ছাড়ালেও বাকি দেশগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম।

এশিয়ায় বিক্ষিপ্ত ছোটাছুটি
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে এশিয়া মহাদেশের চীন থেকে শুরু হয় করোনার বিস্তার। এরপর এটি ইউরোপে জুড়ে বসলেও এশিয়ার ৪৩টি দেশে বিক্ষিপ্ত ছোটাছুটি করছে। মোট চিহ্নিত রোগীর ২১ শতাংশ এশিয়ার, যার মধ্যে শুধু চীনে রয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। দেশটিতে ৮২ হাজার ২৯৪ জন শনাক্ত হলেও এখন পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। নতুন করে খুব একটা বাড়ছে না।

এশিয়ায় এখন ভুগছে ইরান। সেখানে রোগীর সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৪৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এরপর ৫ হাজারের বেশি রোগী আছে তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরায়েলে। দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরায়েলে নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে কম। এর বাইরে দুই হাজারের বেশি রোগী আছে মালয়েশিয়া, জাপান ও ফিলিপাইনে। এক হাজারের বেশি মানুষের করোনা চিহ্নিত হয়েছে পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব ও ভারতে। ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বাকি তিনটি দেশে নতুন রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। আর আটটি দেশে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ২০ জনের কম।

৬১টি দেশে ৫০-এর কম আক্রান্ত
১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে ৬১টিতে রোগী পাওয়া গেছে ৫০ জনের কম। এতেও সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে আফ্রিকা। এ তালিকায় আফ্রিকার দেশ ৩০টি। এ ছাড়া উত্তর আমেরিকার ১৫টি, এশিয়ার ৮টি, দক্ষিণ আমেরিকার ৫টি, অস্ট্রেলিয়ার ২টি ও ইউরোপের মাত্র ১টি দেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধনী দেশগুলোকে মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধু তাদের একার নয়। গরিব দেশের জন্য অনেক কঠিন সময় আসবে এবং সাহায্য প্রয়োজন হবে। এশিয়ার যেসব দেশে আগে করোনা সংক্রমিত হয়েছিল তাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিতে হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ ড. ডেভিড নাবারো ‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে বলেছেন মোক্ষম কথাটি, ‘দরিদ্র ও মধ্য আয়ের দেশগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেশ মানলেও উন্নত দেশগুলো মানে না। এটা পরিবর্তন করতে হবে।’

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041928291320801