জনবল সংকটের কারণে ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাটি আর নিতে চায় না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলে যাবে ইবতেদায়ির সমাপনী পরীক্ষা। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষাটি নেয়ার ব্যাপারে তাদের অনাগ্রহের কথা জানিয়ে এবং পরীক্ষাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে হস্তান্তর করতে ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন।
জানা গেছে, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে পাবলিক পরীক্ষার আদলে পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা নেয়া শুরু হয়। পরের বছর শুরু হয় ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা। শুরু থেকেই মাদরাসার লেখাপড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা নেয়া ও ফল তৈরির কাজটি করছে। কিন্তু পরীক্ষার পর ফলাফলের ভিত্তিতে সারা দেশে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ঘোষণা দেয় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড।
এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন, তদারকি, বেতনভাতা দেয়াসহ বাকি সব কাজ করে থাকে মাদরাসা বোর্ডসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সূত্র দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানিয়েছে, এতে এক ধরনের দ্বৈত ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। অপরদিকে প্রতি বছর সারাদেশ থেকে প্রায় ২৮ লাখ পরীক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। নিজস্ব শিক্ষা বোর্ড ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রশাসনিক কাজ বন্ধ রেখে প্রতি বছর এ পরীক্ষার আয়োজন করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে একটি পরীক্ষা আয়োজনই কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে আরেক মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা তাদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। এসব কারণে ওই মন্ত্রণালয় পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত দিতে চায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোনো শিক্ষা বোর্ড না থাকার পরও প্রতি বছর প্রায় ৩৪ লাখ শিক্ষার্থীর পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা আয়োজন করতে হচ্ছে। খাতা মূল্যায়ন ও ফলাফল প্রকাশ করতে হয়। এতে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ে শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অন্যদিকে মাদরাসা শিক্ষার জন্য একটি বোর্ড আছে। তারা পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে অনেক দক্ষ। তারা পরীক্ষাটি নিলে আমাদের কাজে সেটা আরও স্বস্তিদায়ক হবে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মুন্সি শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে একটা চিঠি এসেছে। আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সারা দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে কেজি স্কুলসহ বিভিন্ন ধরনের লক্ষাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিশুরা সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে থাকে। অন্যদিকে সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার বেসরকারি ইবতেদায়ি মাদরাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে গড়ে ৬ লাখ শিক্ষার্থী ইবতেদায়ি পরীক্ষা দিয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার হোসেন বলেন, ইবতেদায়ি পরীক্ষা আমাদের দেয়া হলে তা গ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না।