বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মাদরাসা শিক্ষককে লাঞ্ছিত ও জুতার মালা পরিয়ে জনসম্মুখে ঘোরানোর ঘটনায় প্রধান আসামি চেয়ারম্যানসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় বরিশালের মুলাদী উপজেলা থেকে দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি এবং একই ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আব্দুস সত্তার সিকদারকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় বজলু নামে আরেক আসামিকে আগেই গ্রেফতার করে পুলিশ।
জেলার বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাইমুল হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মুলাদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় চেয়ারম্যান মোস্তফা ও সাবেক মেম্বার সত্তারকে। এই মামলার অপর আসামিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে বুধবার (৩ মে) রাতে লাঞ্ছনার শিকার শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি, সত্তার সিকদার, কবির সিকদার, ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) শহিদুল ইসলাম, মাসুদ সিকদার, আবুল বয়াতী, ইউনুস বয়াতী, মোসলেম সিকদার, বজলু আকন ও মশিউর রহমান বয়াতী।
আরও পড়ুন : মাদরাসার অফিস সহকারীর গলায় জুতার মালা
লাঞ্ছনার শিকার শহিদুল ইসলাম দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং স্টিমারঘাটের অদূরে সিকদার বাড়ি মসজিদের ইমাম।
দড়িচর খাজুরিয়া মাদরাসার একাধিক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের উপবৃত্তি পাওয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল হিসাব নম্বর পাঠানো হয়। তালিকা পাঠানোর সময় ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী মাদরাসায় না আসায় সেখানে শহিদুল ইসলাম তার মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন। সম্প্রতি ওই ছাত্রীর এক বছরের উপ বৃত্তির ১ হাজার ৮০০ টাকা ওই মোবাইল নম্বরে জমা হয়। বিষয়টি শহিদুল ইসলাম ওই ছাত্রীর অভিভাবককে জানাতে ভুলে যান।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই ছাত্রীর বাবা ৩০ মে মাদরাসায় এসে শহিদুল ইসলামকে মারধর করেন এবং তার মোবাইলের সিমটি নিয়ে যান। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ি সালিশের নির্দেশ দেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে উপস্থিত থাকতে আগেই শহিদুল ইসলামকে জানিয়ে দেয়া হয়। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হলে আসামিরা শহিদুল ইসলামকে অকথ্য ভাষায় গালি দেন। এরপর জুতার মালা পরিয়ে স্টিমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়। সেই সঙ্গে ওই দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার পর লজ্জা ও অপমানে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম।
এদিকে মাদরাসার অফিস সহকারীকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা। দৈনিক শিক্ষার লাইভে যুক্ত হয়ে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন দৈনিক শিক্ষা ডটকমের সম্পাদক ও এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান খান এবং মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ।
ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ওই ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা যে সিমে এসেছে সেই সিমটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। আর অফিসে নানা কাজের চাপে বিষয়টি মনেও ছিল না। কিন্ত এত ছোট একটি বিষয় নিয়ে এতো কিছু হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। দীর্ঘ কর্ম জীবনে কেউ কোনো দিন অভিযোগ করতে পারেনি। কিন্তু সামান্য একটি ভুলের জন্য আমার ওপর অবিচার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ফেসবুকে বিষয়টি দেখে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তারা মামলা করার পরামর্শ দেন।এর প্রেক্ষিতে বুধবার রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছি।
মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবিদুর রহমান দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, মামলার আসামিদের গ্রেফতারে সকাল থেকে পুলিশের একাধিক টিম দড়িচর খাজুরিয়াসহ মেহেন্দিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। এরই মধ্যে মামলার অন্যতম আসামি বজলু আকনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।