যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর বেয়াই জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে বৈঠকসহ মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের জামায়াত কানেশনের ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির কাছে জামায়াত নেতার সঙ্গে মহাপরিচালক মো: বিল্লাল হোসেনের গোপন বৈঠকের খবরকে সত্য বলে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। একই সঙ্গে বলেছেন মহাপরিচালক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শিক্ষক-কর্মচারিদের আইনী মারপ্যাচে হয়রানী করেন। এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতি করেন। মহাপরিচালকের পছন্দের পরিচালক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ড. মোহাম্মদ ছরওয়ারসহ দুইতিনজনকে বেসরকারি মাদ্রাসায় নিয়োগ বোর্ডে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান।
২ জুন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্দেশের পর রবিবার (৩ জুন) সকালে রাজধানীর ইস্কাটনে বোরাক টাওয়ারে অবস্থিত মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অফিসে যান তদন্ত কমিটির দুই সদস্য মাদ্রাসা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব রওনক মাহমুদ ও যুগ্ম-সচিব মো: এনামুল হক। তদন্ত কমিটির সদস্যরা অধিদপ্তরে টানা চার ঘন্টা বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য সংগ্রহ করেন। তদন্ত কমিটি মহাপরিচালক ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে সভাপক্ষে আলাদা আলাদাভাবে কথা বলেছেন। অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারি তাদের বক্তব্য লিখিতভাবে কমিটির কাছে তুলে ধরেছেন। দৈনিকশিক্ষা ও দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় যথাক্রমে ২৮ ও ২ মে জামায়াত নেতার সঙ্গে মহাপরিচালকের গোপন বৈঠকের যে খবর প্রকাশ হয়েছে তা সত্য কিনা কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চায় তদন্ত কমিটি। কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জামায়াত নেতার সঙ্গে বৈঠকের খবরকে সত্য বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অনেকেই একই সঙ্গে অভিযোগ করেছেন এর আগেও আরেকদিন এ জামায়াত নেতা মহাপরিচালকের কাছে এসেছেন। কেউ কেউ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের এমপিও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেছেন। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, এ মহাপরিচালক সব সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক পেলে তাদের এমপিওসহ অন্যান্য কাজ আইনী মারপ্যাচে ফেলে দেন। যা ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া আরো বেশ কিছু অভিযোগ এনেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
মহাপরিচালকের কাছেও আলাদাভাবে জামায়াত নেতার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। মহাপরিচালক বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন। তবে বলেছেন, এটা ছিল ওই ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা। তিনি আসবেন সে কথা জানতেন না বলেও দাবি করেছেন মহাপরিচালক। তদন্তের বিষয়ে এখনই কিছু জানাতে চাননা সদস্যরা। জানতে চাইলে রওনক মাহমুদ বলেন, ‘মাত্রই তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছি। এখনই কিছু বলা যাচ্ছেনা।
জনপ্রিয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলার আসামীও জাফরি। ঘটনাকে ‘মিটিং’ বলতে রাজী না হলেও আলোচনার কথা দৈনিকশিক্ষার কাছে স্বীকারও করেছেন মহাপরিচালক। কি আলোচনা হয়েছে তা সাংবাদিকদের খূজে বের করার পরামর্শও দেন মহাপরিচালক। সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বোরাক টাওয়ারে অবস্থিত অধিদপ্তরে মহাপরিচালক তার নিজ অফিস কক্ষে বৈঠক করেন। বৈঠক চলে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত।
দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে মহাপরিচালকের জামায়াত কানেকশনসহ প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক জামায়াতী তৎপরতার তথ্য।
জনকন্ঠের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে তুলতে নানাভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের গোয়েন্দা শাখার সাবেক সদস্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে। ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম থেকে শুরু করে অধিদফতরে জামায়াত সিন্ডিকেট গঠন করা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মকর্তাদের অপমান অপদস্থ থেকে শুরু করে কোনটিই বাদ রাখেননি তিনি। তার প্রত্যক্ষ মদদে মিরপুর শাহআলী ফাজিল কামিল মাদ্রাসার বরখাস্তকৃত শিক্ষক জামায়াত নেতা আফজাল হোসেনকে দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের আস্তানা গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।