মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনশন চলবে: মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নিষ্ফল বৈঠক - দৈনিকশিক্ষা

মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনশন চলবে: মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নিষ্ফল বৈঠক

শফিকুল ইসলাম : |

জাতীয়করণের সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া আমরণ অনশন ভাঙ্গবেন না স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা। শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে আড়াই ঘন্টাব্যাপী বৈঠকের পর এমন অনড় অবস্থানের কথা দৈনিকশিক্ষাকে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে অনশনরত শিক্ষকদের ২২ সদস্যের  একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অনশন ভেঙ্গে বাড়ী ফিরে যেতে অনুরোধ করলে নেতৃবৃন্দ তা প্রত্যাখ্যান করেন। সভায় আন্দোলনরত বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকগণের দাবি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। চলমান সংকট নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সক্রিয় প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে বলে নেতাদের জানান শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। বৈঠককালে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা সচিব মো. আলমগীর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বিল্লাল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মাদ্রাসা শিক্ষক নেতারা

রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথমে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পরিবহন পুল ভবনে মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর দুপুর দেড়টার দিকে মাদ্রাসা শিক্ষকদের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকে বসেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এসময় শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী সরাসরি কোনো আশ্বাস দেননি। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এ বিষয়ে চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাবেন। তাই শিক্ষকেরা যেন অনশন ভেঙে বাড়িতে ফিরে যান সেই অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু এ বিষয়ে শিক্ষকেরা কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

দুই দফা বৈঠকের পর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম দৈনিকশিক্ষাকে জানান, শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন দাবি মেনে নেয়ার। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে দাবির বিষয়টি মেনে নিবেন। কিন্তু আমরা সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ছাড়া অনশন প্রত্যাহার করবো না। আমরণ অনশন অব্যাহত থাকবে।

প্রথম দফা বৈঠকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী জাতীয়করণের দাবি মানার আশ্বাস দেন আমরণ অনশনরত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক নেতাদের। শিক্ষকদের দাবিটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে সরকার। দু’একদিনের মধ্যে অনশন ভাঙ্গানোর বিষয় অগ্রগতি জানানো যাবে বলে শিক্ষক নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছেন মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী।

পরিবহন পুল ভবনে মন্ত্রীর দপ্তর থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির একজন নেতা দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন ‘এটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক তাই সব কথা বলা যাচ্ছে না। তবে, প্রতিমন্ত্রী মহোদয় আমাদের দাবির প্রতি সহানুভুতিশীল, ইতিবাচকভাবে দেখবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’
এদিকে রোববার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীতে অপর এক অনুষ্ঠানে  অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, জাতীয়করণের বিষয়ে বর্তমানে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সচিবালয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে অপর একটি কোম্পানীর একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির ব্যানারে গত ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে আসছেন ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা। পরে ৯ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

আজ রোববার (১৪ই জানুয়ারি) ৬ষ্ঠ দিনে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের উপস্থিতি আরও বেড়েছে। অসুস্থ শিক্ষকের সংখ্যাও বেড়েছে। সব মিলিয়ে রোববার দুপুর পর্যন্ত ১৬৪ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছেন। কেউ কেউ স্যালাইন নিয়েই অনশন করছেন। অসুস্থদের অধিকাংশই অতিরিক্ত শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

জানা যায়, মাদ্রাসা বোর্ডের নিবন্ধন পাওয়া ১০ হাজারের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা আছে। এতে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। মাত্র এক হাজার ৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রধান শিক্ষক দুই হাজার ৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষকরা দুই হাজার ৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন।

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আলহাজ কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন বিনা বেতনে চাকরি করতে করতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। জাতীয়করণ ছাড়া আমাদের আর ভিন্ন কোনো পথ খোলা নেই। সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছে। আমরাও তো প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম অংশ। তাহলে আমাদের কেন বাকি রাখা হবে? আমাদের বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি ঠিকমতো বোঝালে তিনি নিরাশ করবেন না। তাই আমরা তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছি।

ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির দপ্তর সম্পাদক মো. ইনতাজ বিন হালিম জানান, এ তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এ দুঃখ-কষ্ট দেখার কেউ নেই। দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনরোধ জানাচ্ছি।

রোববার (১৪ই জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম হিরন, মাওলানা মো: শাহজাহান, তাজুল ইসলাম ফরাজী,যুগ্ম মহাসচিব আবু মুসা ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম, আজিজুল হক, মিজানুর রহমান, আব্দুল হামিদ, ময়েজ উদ্দিন,ইমদাদুল হক বাদল,তৈয়বুর রহমান, সুমি খাতুন,ফরিদা ইয়াসমিন,ফেন্সী খাতুন,নাসরিন বেগম,রুবিনা খাতুন,সুফিয়া বেগম,শাকিলা খাতুন প্রমুখ।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063300132751465