মাদ্রাসা শিক্ষা ও মাদ্রাসার নন এমপিও আইসিটি শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

মাদ্রাসা শিক্ষা ও মাদ্রাসার নন এমপিও আইসিটি শিক্ষক

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষা একটি প্রাচীনতম শিক্ষা ধারা । বৃটিশ শাসনামলে ও এ উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বিদ্যমান ছিল । আধুনিক শিক্ষা ধারা চালু হবার অনেক আগে থেকেই এ দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রচলন । ভারত শাসিত উপমহাদেশে মুসলমানদের সমর্থন আদায়ের জন্য ইংরেজরা কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে । মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা আলাদা তাৎপর্য বহন করলে ও আমাদের দেশে এ  শিক্ষা নানা কারণে পিছিয়ে । মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগি ও আধুনিকায়নের তেমন কোন প্রয়াস নেই । ইতিপুর্বের সরকারগুলো মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি । মাদ্রাসা শিক্ষায় জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা অর্থাৎ কারিগরি শিক্ষার অভাবে এটি কেবল পরকালীন শান্তির জন্য অপরিহার্য বলে অনেকের ধারণা । এ জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি অনেকের আগ্রহ কম। বর্তমান সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে বেশ কিছু যুগান্তকারী কর্মসুচি হাতে নিয়েছে ।

এ শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত উল্লেখ যোগ্য কর্মসুচি গুলো হচ্ছে-দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীক্ষাকে যথাক্রমে এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার সমান মর্যাদা প্রদান , পৃথক আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মাউশি থেকে মাদ্রাসা অধিদফতর আলাদা করা ইত্যাদি । মাদ্রাসার শিক্ষার্থীগণ উপবৃত্তি ও বিনামুল্যে পাঠ্যপুস্তক পেয়ে থাকে । এ শিক্ষায় বিজ্ঞান ও আইসিটি শিক্ষা প্রবর্তন করা হয়েছে । সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মাদ্রাসা ভবন নির্মান করে দেয় । সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীগণ সরকার প্রদত্ত বেতন-ভাতা এমপিও’র মাধ্যমে যথারীতি পেয়ে থাকেন । তদুপরি নানা কারণে এ শিক্ষার প্রতি সাধারণের আগ্রহ  কম । সারা দেশে একটি মাত্র মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড । জেডিসি, দাখিল ও আলিম পরীক্ষা মাত্র একটি বোর্ড কী করে তত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে – সে এক বড় জিজ্ঞাসা ।

এ ছাড়া মাদ্রাসার সিলেবাস ও কারিকুলাম আজ পর্যন্ত ততটুকু যুগোপযেগি ও আধুনিক করা হয়নি । মাদ্রাসা শিক্ষকগণের পেশাগত দক্ষতা ও উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই।  দেশের রেজিস্টার্ড ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারিকরণ হলেও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের চাকুরী জাতীয়করণ করা হয়নি । প্রাথমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পেলে ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীগণ উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত থাকে ।

বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তির চারদিকে জয় জয়কার । বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার কারণে এ দেশে তথ্য-প্রযুক্তির এক নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে । সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মত মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামুলক করেছে । আইসিটি খাতে সরকারের নানামুখি কার্যকর ভুমিকার কারণে স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবে ও তাই । ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি পুরণে এ দেশের আইসিটি শিক্ষকগণের ভুমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই । স্কুল ,কলেজ ও মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষকগণ আইসিটি শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে নিরলস কাজ করেন । আমাদের নতুন প্রজন্মকে আইসিটি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে তারা দিনান্ত পরিশ্রম করে যান । কিন্তু, কেন জানিনে সে সব আইসিটি শিক্ষকগণকে বিনে বেতনে কাজ চালিয়ে যেতে হয় । ২০১১ সনের ১৩ নভেম্বরের একটি কালো পরিপত্র এ দেশের বহু শিক্ষকের কপাল পুড়ে দিয়েছে ।

স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষকগণের ও । সে থেকে  বছরের পর বছর আন্তরিকতার সাথে নিজেদের কাজ সম্পাদন করে ও তারা বেতন পান না । বেশ ক’ বছর ধরে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে উপোস । বিনে বেতনে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে বলে জানি । কিন্তু, বিনে বেতনে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথা ও কেউ কাজ কিংবা চাকুরি করে কিনা জানিনে । আমি ব্যক্তিগত ভাবে বরাবর বিশ্বেষ করি, আইসিটি শিক্ষকগণ ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাণ । তাদের অনাহারে রেখে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাঁচিয়ে রাখা কঠিন ।  পদ্মা সেতু নির্মাণ যেমন দেশের জন্য অপরিহার্য, তেমনি আইসিটি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি ও তারচে’ কম গুরুত্বপুর্ণ নয় ।

স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার নন এমপিও আইসিটি শিক্ষকদের নিয়ে অনেক লেখালেখি ও বলাবলি হয়েছে । তারা নিজেরা ও অনেক আবেদন-নিবেদন করে অবশেষে এখন এমপিও পাবার দ্বার প্রান্তে । তাদের নিয়ে তবু খেলার শেষ নেই । মাউশি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি ও ফাইল চালাচালি এখনো অব্যাহত আছে। আবার সারা দেশের ৫০৭২ জন নন এমপিও আইসিটি শিক্ষককে স্কুল ,কলেজ ও মাদ্রাসার খাতে বিভাজন করে কোনো খাতকে গুরুত্বহীন করা সমীচিন হবে না । এ ক্ষেত্রে মাদ্রাসার নন এমপিও আইসিটি শিক্ষকদের ও সবার সাথে এমপিও প্রদান করা একান্ত অপরিহার্য । তাহলে, মাদ্রাসা শিক্ষা যুগোপযোগি ও আধুনিকায়নের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবে । এর সাথে জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা সম্পৃক্ত হবে। এ শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে ।

মাদ্রাসা শিক্ষায় আইসিটি ও কারিগরি শিক্ষার প্রয়োগ নিশ্চিতকরণে যা যা করা প্রয়োজন -সরকার তাই করবে । এ প্রত্যাশা সবার । দেশে আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মাদ্রাসা শিক্ষাকে খাটো করে না দেখে এ শিক্ষাকে যুগোপযোগি ও বাস্তবমুখি করতে কার্যকর কর্মসুচি গ্রহণ করা প্রয়োজন । স্কুল, কলেজ কিংবা মাদ্রাসার নন এমপিও আইসিটি শিক্ষকদের আর কষ্টটুকু বাড়িয়ে লাভ নেই । এমপিওভুক্ত হয়ে তারা সবাই এক সাথে যেন আনন্দের হাঁসি হেঁসে ওঠতে পারেন-সে আমরা সকলে চাই । সে সুদিনটি যেন আর খুব বেশী দুরে না হয় ।

মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027980804443359