আইসিটি শিক্ষার গুরুত্ব আজ আর কাউকে বুঝিয়ে বলার অবকাশ নেই । শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলে এখন আইসিটি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে থাকেন। 'ডিজিটাল বাংলাদেশ'-এর ধারণা থেকে এ উপলব্ধি । বর্তমান সরকার বিশেষ করে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা প্রথম যখন নির্বাচনী ইশতেহারে এ কনসেপ্টটি (Concept) অন্তর্ভুক্ত করেন তখন সত্যি কথা বলতে কি অনেকেই এ নিয়ে উপহাস করেছেন । অনেক শিক্ষিত লোকে পর্যন্ত এ বিষয়ে ঠাট্টা তামাশা করেছেন। কিন্তু, আজ ষোল আনা না হলে ও প্রায় দশ আনা আমরা ডিজিটাল হতে পেরেছি । এ বিষয়ে কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকবার কথা নয় ।
কেউ মানুক আর নাই মানুক - দেশকে ডিজিটালের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার সব কৃতিত্ব বর্তমান সরকারের । বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে আইসিটি শিক্ষা চালু করে সরকার আমাদের শিক্ষাকে যুগোপযোগি ও বিশ্ব মানে উন্নীত করার প্রয়াস গ্রহণ করে । নিম্ন মাধ্যমিক স্তর থেকে আইসিটি বিষয়টি আবশ্যিক হওয়ায় আমাদের নতুন প্রজন্ম তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠবার অবারিত সুযোগ লাভ করে ।
তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ শিক্ষার প্রসারে সরকারের বহুমুখি উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শিক্ষায় আইসিটি বিষয়টি আবশ্যিক করা , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহে ল্যাপটপ ও কম্পিউটার প্রদান , শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, সম্প্রতি স্কুল-কলেজের নন এমপিও আইসিটি শিক্ষকদের এমপিও প্রদান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কতেক বিষয় ।
মাদ্রাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় কারো নেই । ভারত উপমহাদেশে মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস অনেক পুরনো। কিন্তু, দুঃখজনক হলে ও সত্য আমাদের দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে কোন সরকারই উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু করে নাই । তারপর ও মাদরাসা শিক্ষার প্রসারে বর্তমান সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপ মাদ্রাসা শিক্ষাকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে । মাদ্রাসায় আইসিটি বিষয়টি
আবশ্যিক হিসেবে পঠিত হয় এবং অনেক মাদরাসায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে । এসব নিঃসন্দেহে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ ।
অতি সম্প্রতি নন এমপিও আইসিটি শিক্ষকদের আন্দোলন ও সময়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে সরকার স্কুল-কলেজের আইসিটি শিক্ষকদের এমপিও দিলেও নিম্ন মাধ্যমিক অনেক প্রতিষ্ঠানের এবং মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষকগণ তাদের এমপিও পান নাই। ১৩.১১.১১ এর বেড়া জালে এখনো তারা আবদ্ধ । এ কেমন কারবার হলো ? এ সব শিক্ষকদের অপরাধটা কোথায় ? আমার তো মনে হয়, এক সাথে সকলের এমপিও দিয়ে দেয়া উচিত ছিল । মাদ্রাসা শিক্ষাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই ।বরং মাদরাসা শিক্ষাকে আধুনিক ও যুগোপযোগি করে বিশ্ব মানে উন্নীত করার জন্য মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষা ও শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত ছিল। নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলগুলোর এমনিতে বেহাল দশা। তাদের স্ট্যাফিং প্যাটার্ন অনেক ছোট । তদুপরি আইসিটি শিক্ষক বেতন না পেলে এ সব স্কুল চলে কী করে ?
অহেতুক শুধু শুধু বৈষম্য সৃষ্টি করার কোন মানে হয় না । প্যাঁচাল বাড়িয়ে লাভ নেই । স্কুল-কলেজের আইসিটি শিক্ষকদের ন্যায় নিম্ন মাধ্যমিকের যারা বাদ পড়েছেন তাদের এবং মাদরাসার আইসিটি শিক্ষকদের সামনের এমিও'তে বেতনটা ছাড় দিয়ে দিন। তাদের আর্তনাদে এখন আকাশ-বাতাস অনেকটা ভারি। নির্বাচনের বছর । অযথা ঝামেলা করে লাভ কী ? ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে যা যা করা প্রয়োজন দ্রুত সব করে নিন।শতকরা আটানব্বই জন মুসলমানের দেশে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে যা কিছু করা হবে , তা একদিকে সরকারের জন্য কল্যাণকর অন্যদিকে জাতির জন্য ও মঙ্গলজনক ।
অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।