প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে কেবল অষ্টম শ্রেণিতে। অপরাধ সম্পর্কে যাদের নেই ধারণা। সেই শিক্ষার্থীরাই হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে। কী হবে তাদের আগামীর শিক্ষাজীবন? এ নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। এমন ঘটনায় একদিকে অকালে ঝরছে প্রাণ। অন্যদিকে হত্যায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাউন্সিলিং করা দরকার। নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। একঘেয়েমি শিক্ষা থেকে বেরিয়ে এসে সাংস্কৃতিক, বিনোদন ও খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। আর পরিবারের দায়িত্ব তাদেরকে গুণগত সময় দেয়া।
রাজশাহী নগরীর চারখুটা মোড় এলাকার ইউসেপ মোমেনা বখশ স্কুল। স্কুলটি কর্মজীবী শিশুদের। এখানে বেশির ভাগ দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে। স্কুলটিতে কাজের পাশাপাশি পড়াশোনার ব্যবস্থাও রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে গত বৃহস্পতিবার হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তুচ্ছ ঘটনার জেরে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলটির একজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার ইমন হোসেন (১৪) সে বেশ কিছুদিন আগে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত সেখানেই। হয়তো সেই ছাত্রী তার ভাই হৃদয়কে বিষয়টি জানায়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে হৃদয়সহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে টিফিন চলাকালীন ইমনকে ছুরিকাঘাত করে। তবে তারা সবাই অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টম্বর) দুপুরে স্কুলটির অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইমন হোসেনকে ছুরিকাঘাত করে হৃদয়। পরে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ওইদিন রাতে নিহত ইমনের বাবা আবদুস সালাম বাদী হয়ে ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
কাশিয়াডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনসুর আলী আরিফ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এই মামলায় হৃদয় (১৫), ইমন (১৯), অন্তর (১৪) ও হানিফ (১৪) নামের চার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দু’জনকে আসামি করে এ মামলা করা হয়।
শিক্ষাবিদ সাবেক অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কাউন্সিলিং চালু করতে হবে। ওই স্কুলটিতে কর্মজীবী ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করে। তারা বিভিন্ন হতদরিদ্র ও অস্বচ্ছল পরিবারের। শিক্ষার্থীদের নীতি নৈতিকার শিক্ষা দিতে হবে। সম্ভব হলে পরিবারের লোকজনকে এর আওয়তায় আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার সাথে সাথে বিনোদন, সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার সুযোগ রাখতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। তাদের মন ভালো থাকবে।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশতে হবে। বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। তাহলেই শিক্ষার্থীরা নিজের সমস্যার কথাগুলো শিক্ষকদের বলবে।
তিনি বলেন, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের খারাপ পথ থেকে ফেরানো সম্ভব। তাদের ভালো-মন্দ বিষয়ে কাউন্সিলিং করতে হবে। তারা কী করে, কার সঙ্গে মেলা-মেশা করে, এগুলো পরিবারকে দেখভাল করতে হবে। এক সময় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা রাস্তায় মানুষ দেখলে সম্মান করত। এখন আর দেখা যায় না। ছোটরা বড়দের আর সম্মান করে না।