মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে ননএমপিও শিক্ষকদের দিকে সদয় দৃষ্টিতে তাকান - দৈনিকশিক্ষা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে ননএমপিও শিক্ষকদের দিকে সদয় দৃষ্টিতে তাকান

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

হাজার হাজার শিক্ষক এখন ঢাকার রাজপথে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের বেদনায় জর্জরিত তারা। সন্তানের মনের কথা জানাতে তারা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চান। মনের কষ্টটা মায়ের কাছে খুলে বলতে চান। মনের গহীনে অনেক কষ্ট। অনেক ব্যথা। দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের সংস্থান নেই। খেয়ে না খেয়ে নিরবধি জাতি গঠনের মহান ব্রতে নিয়োজিত আছেন সেই কবে, কখন থেকে বলতে পারেন না। কবে থেকে এই পেশায় আছেন- জিজ্ঞেস করলে অনেকে আমতা আমতা করেন। ঠিক কত বছর ধরে এ পেশায় আছেন সঠিক বলতে পারেন না। কেউ পাঁচ বছর-কেউ দশ বছর। কেউ পনের বছর- কেউ কুড়ি বছর। বেতন-টেতন পেলে দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর ইত্যাদির একটা হিসেব রাখা লাগে। তাদের সে হিসেবের দরকার পড়ে না।

বেতন পান না- সে কথা মনেই থাকে না। কেবল ছোট্ট ছেলে বা মেয়েটি যখন কোনো আবদার করে বসে তখন নির্মমভাবে মনে পড়ে তার তো কোনো বেতন নেই। বৃদ্ধ মা-বাবা যখন যন্ত্রণায় অতিমাত্রায় কাতর হয়ে চিলচিৎকার করেন তখন মনে হয় নিজে বেতনহীন এক নগণ্য শিক্ষক। অন্য এক কষ্টের যন্ত্রণায় বিচলিত হয়ে পড়েন তখন। একদিকে জাতি গঠনের দৃপ্ত অঙ্গীকার, অন্যদিকে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

সেদিন এক ননএমপিও শিক্ষক বন্ধুর সাথে দেখা। কথায় কথায় বলেন- কী যে কষ্টে বেঁচে আছি  বুঝিয়ে বলতে পারবো না। মাটির দিকে চেয়ে কিছু সময় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন। তার চোখে অশ্রু দেখতে পেলাম। মুখে অনেক কষ্টের চিহ্ন। সারাদেশের শিক্ষকদের অতিপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক শিক্ষায় তাদের কষ্টের কথা লেখার অনুরোধ করে চুপিসারে চলে গেলেন। কিছু সময় আনমনা হয়ে ভাবলাম। মনের অজান্তে হৃদয় ছিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। একবার মনে হলো-এরা শিক্ষকতা ছেড়ে দেন না কেন? অনাহারে-অর্ধাহারে এ পেশায় থাকার কোনো মানে নেই।

কিন্তু, পরক্ষণে মনে হয়েছে-এ তারা পারবে না। শিক্ষকতা পেশা আজ তাদের কাছে বড় এক নেশার সমান। শত কষ্টের মাঝেও এটি ছেড়ে দিতে পারেন না। পরের ছেলে মেয়েদের নিজের সন্তান ভেবে ভিন্ন এক মমতার জালে জড়িয়ে গেছেন। শিক্ষকতার নেশা যাকে পেয়ে বসেছে সে অন্য কোথাও যেতে চায় না। যেতে পারেও না। সে যেন এক আলাদা মায়ার বন্ধন। হৃদয়ের বন্ধনে একেবারে বেঁধে পড়া আর কী! এ বাঁধন ছিড়ে ফেলা বড় কঠিন। একেবারে অসাধ্য এক দুরূহ কাজ।

গতদিন জুমার নামাজ তারা প্রেসক্লাবের সামনের রাজপথে আদায় করেছেন। শুক্রবার গরীব মানুষের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। সেদিনে তারা ঢাকার রাজপথে খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করেছেন। এমপিও না নিয়ে বাড়ি না ফেরার দৃঢ় প্রত্যয় তাদের চোখে-মুখে। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে চান। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বার বার তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে- সে অভিযোগটি তারা জাতির জনক তনয়া শেখ হাসিনা সমীপে পেশ করতে চান।             

গত বছর, জানুয়ারিতে হাজার হাজার ননএমপিও শিক্ষককে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। সরল বিশ্বাসে তারা প্রতারিত হয়েছেন। সে ক্ষোভে তারা আবার জ্বলে উঠেছেন। তাদের প্রতিবাদের আগুনের দহনে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিদাতাদের পুড়ে মরতে হবে। এদের মুখোশ উন্মোচিত হবার সময় এসেছে। এরা সরকারে থেকে সরকারের বদনামের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। সরকারের খেয়ে সরকারের দুর্নাম যাতে হয় সে কাজে ব্যস্ত থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামে কারা গত বছর ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল? সে প্রতিশ্রুতি পূরণে তারা কি কোনো উদ্যোগ নিয়েছিলো? না নিয়ে থাকলে সে দায়ভার তাদের। এদের শাস্তি হওয়া চাই। এরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিনয় করে বলি-আপনার শিরায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবের রক্ত বহমান। দয়া করে আপনি একবার দেশের ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর দিকে সদয় দৃষ্টিতে তাকান। যাদের প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি আছে তাদের সবাইকে একসাথে এমপিওভুক্ত করে দেন। এক হাজার কিংবা দু'হাজার নয়। একসাথে সবাইকে দেন। পাঠদানের অনুমতি পেয়ে অনেক শর্ত পূরণ করে তারা স্বীকৃতি পেয়েছেন। সে স্বীকৃতি কীসের? বেতন-ভাতা ও এমপিও পাবার স্বীকৃতি। এখন এমপিও পাওয়া তাদের ন্যায্য অধিকার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একমাত্র আপনিই পারবেন। একমাত্র আপনিই পারেন। এসব কাজে সাহস লাগে। অসীম সাহস। একমাত্র আপনার সে সাহস আছে। আপনার সাহসের কারণে আমাদের অনেক কিছু হয়েছে। আপনার সাহসের কারণে আমরা আরো অনেক কিছু পেতে চাই। আপনার একটি সাহসী ঘোষণা কেবল ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের নয়, তাদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয় স্বজনের অনাবিল আনন্দের কারণ হবে। সে আনন্দের বন্যায় ভেসে যাবে ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীর সকল বেদনা। সকল গ্লানি।    

লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038418769836426